• সরোবরের দ্বার রক্ষা হলেও ছটে অব্যাহত শব্দবাজির তাণ্ডব
    আনন্দবাজার | ২৮ অক্টোবর ২০২৫
  • দুই সরোবরের দ্বাররক্ষায় বজ্র আঁটুনি, যদিও ছটপুজোয় শব্দবাজির দৌরাত্ম্য রুখতে ফস্কা গেরো পুলিশের! ফলে, কালীপুজো এবং দীপাবলির মতো ছটেও শব্দবাজিতে লাগাম পড়ল না। পুলিশের সামনেই কোথাও কচিকাঁচারা একের পর এক নিষিদ্ধ চকলেট বোমা ফাটাল, কোথাও তাদের দেখা গেল শেল ফাটাতে। লরির ছাদে বসে বিপজ্জনক যাতায়াত, সাউন্ড বক্স বাজিয়ে চলন্ত গাড়িতে নাচানাচির ছবিটাও বদলাল না এ বছর। বিধিভঙ্গের বহর দেখে ফের প্রশ্ন উঠল, আর কবে পুলিশের নজরে আসবে?

    লালবাজারের তরফে পুলিশকর্তারা যদিও কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছেন। বেআইনি বাজি বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি, বিধিভঙ্গে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও তাঁদের দাবি। তবে, বাস্তবে অবশ্য ভিন্ন ছবি দেখা গিয়েছে। অধিকাংশ জায়গায় পুলিশের সামনেই বিধি ভাঙা হয়েছে বলে অভিযোগ। রবীন্দ্র সরোবর এবং সুভাষ সরোবরেছটের পুণ্যার্থীদের আটকাতে পুলিশকে কঠোর হতে দেখা গেলেও বাকিশহরে পুলিশি প্রহরা ছিল কার্যত ঢিলেঢালা। আর সেই সুযোগে আরও বেপরোয়া হতে দেখা গিয়েছে বিধিভঙ্গকারীদের।

    ছটকে কেন্দ্র করে শহরের বিভিন্ন পুকুর ও কৃত্রিম জলাশয় মিলিয়ে ১৮৮টি জায়গা আগেই প্রস্তুত রেখেছিল কলকাতা পুরসভা। গঙ্গার ঘাটেও ছিল ছটের ব্যবস্থা। পুরসভার তরফে পুর কর্মী-আধিকারিকদের মোতায়েন করা হয়েছিল প্রতিটি ঘাটে। এ ছাড়া, ময়লা পরিষ্কার করার জন্য কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মী এবং ১০০ দিনের কর্মীদের মোতায়েন করা হয়। এ দিন বিকেলে তক্তাঘাটে ছটপুজোর উদ্বোধন করতে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘ছটপুজো উপলক্ষে শহরে একাধিক কৃত্রিম জলাশয় তৈরি করেছি। গঙ্গার ঘাটগুলি পরিষ্কার করা হয়েছে।’’ পদপিষ্টের মতো দুর্ঘটনা এড়াতে পুলিশকে সতর্ক থাকতেও বলেছেন তিনি। পুলিশের উদ্দেশ্যে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘গঙ্গার দিকে যাঁরা যাচ্ছেন, তাঁদের এক-একটি ছোট ছোট দল করে পাঠানো হোক। একটা দলের ঘাটের কাজ সম্পন্ন হলে ফের আর একটা দলকে পাঠানো হোক।’’

    গঙ্গার ঘাটগুলির পাশাপাশি সুভাষ সরোবর সংলগ্ন কাদাপাড়া, রুবি সংলগ্ন পিছনের জলাশয়ে সব থেকে বেশি ভিড় দেখা গিয়েছে এ দিন। বিকেল থেকে ছটপুজো শুরু হলেও কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই গাড়িতে করে পুণ্যার্থীরা আসতে থাকেন বিভিন্ন ঘাটে। লরির ছাদে বক্স বাজিয়েই পুলিশের সামনে গাড়ি ছুটেছে এ দিন। সেই গাড়ি আটকানো বা ছাদ থেকে নামিয়ে দেওয়া তো দূর, কোথাও পুলিশকে গাড়ি থামাতেও দেখা যায়নি। নোনাডাঙা জলাশয়ে পুরসভার তরফে ছটের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। দুপুর থেকে সেখানেও ছিল পুলিশি ব্যবস্থা। যদিও পুলিশের সামনেই সেখানে দেদার শব্দবাজি ফেটেছে। একের পর এক চকলেট বোমাও ফাটানো হয়েছে সেখানে। জলাশয়ের সামনে চকলেট বোমা ফাটাতে থাকা এক কিশোর বলে, ‘‘কম দামিগুলো ফাটাচ্ছি। আসল জিনিস তো গাড়িতে রয়েছে। বাড়ি যাওয়ার সময়ে ফাটাব। এমন আওয়াজ হবে, সবাই কাঁপবে।’’ আশঙ্কা সত্যি করে মধ্যরাত পর্যন্ত দেদার শব্দবাজি ফেটেছে শহরের বিভিন্ন এলাকায়।

    গোটা শহর জুড়ে বিধিভঙ্গের একাধিক ছবির দেখা মিললেও দুই সরোবরের চিত্র ছিল ভিন্ন। এ দিন বিকেলে রবীন্দ্র সরোবরে গিয়ে দেখা গেল, প্রতিটি দরজা বাঁশ দিয়ে আটকানো। কেউ যাতে সরোবরের দিকে আসতে না পারে, তার জন্য সামনের রাস্তা জুড়ে পুলিশ দাঁড়িয়ে। সামনের রাস্তা দিয়ে কোনও ছটের গাড়ি যেতে দেখলেই রে রে করে তেড়ে যাচ্ছেন কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা। একই ছবি সুভাষ সরোবরেও। সেখানে কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘নির্দেশ আছে, মানুষ তো দূর, মাছিও গলতে দেওয়া যাবে না। সারা রাত ধরে পাহারা চলবে। যত ক্ষণ না ছট শেষ হচ্ছে, নিস্তার নেই।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)