• রাজ্যে এসে গেল এসআইআর, কোন দলের কী মত? প্রচেষ্টা কি মহৎ না উদ্দেশ্যপ্রণোদিত?...
    আজকাল | ২৮ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছে। সোমবার দিল্লিতে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার জানিয়ে দিয়েছেন মঙ্গলবার থেকেই পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের ১২টি রাজ্যে হতে চলেছে বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর। যেই কাজে বাড়িতে বাড়িতে যাবেন কমিশনের আধিকারিকরা। 

    যদিও এসআইআর নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে চলেছে বাকযুদ্ধ। বিহারে বিপুল সংখ্যক ভোটারদের নাম বাদ পড়া এবং তার উদাহরণ দেখিয়ে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে, এরাজ্যেও এসআইআর-এর পিছনে এই ধরনের কোনো অভিপ্রায় কাজ করছে কিনা? বিজেপির দাবি, এর ফলে ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়বে অনুপ্রবেশকারীদের নাম। বামেরা দাবি জানিয়েছে, প্রকৃত ভোটারদের নাম যেন কোনোভাবেই বাদ না পড়ে। 

    মঙ্গলবার মুখ্য নির্বাচন কমিশনের ঘোষণার পর রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি রাহুল সিনহা বলেন, 'জলের লাইনে যদি দীর্ঘদিন ধরে ময়লা জমে যায় তবে সেই লাইন পরিষ্কার করতে হয়। তা না হলে জলের স্বাভাবিক গতি থাকে না। অতএব এক্ষেত্রেও দীর্ঘদিন ধরে যে ময়লা ভোটার তালিকায় ঢুকে রয়েছে সেগুলো পরিষ্কার করার কাজ এই এসআইআর করবে। একটা পক্ষ থেকে বারবার প্রচার করা হচ্ছে সঠিক নাম বাদ যাবে! সঠিক নাম বাদ যাবে কেন? ২০০২ সালের আগে যাদের ভোটার তালিকায় নাম আছে তাঁদের নাম বাদ যাওয়ার কোনো কারণ নেই। ফলে কেন ভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে? আসুন সবাই মিলে ভোটার তালিকা শুদ্ধিকরণ করি। বিদেশি লোকের ভোটে ভারতে বা রাজ্যে কোনো সরকার তৈরি হোক সেটা সঠিক বার্তা নয়।'

    এই এসআইআর যেন বিশেষ কোনো সম্প্রদায়কে 'টার্গেট' করে না করা হয়। যদি সেটা হয় তাহলে কিন্তু আইনের আশ্রয় নেওয়া হবে। জানিয়েছেন সিপিএমের কলকাতা জেলা কমিটির সম্পাদক এবং দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কল্লোল মজুমদার।

    তিনি বলেন, 'বৈধ ভোটারদের নাম কোনও অবস্থাতেই বাদ দেওয়া যাবে না। মৃত ও ভুয়ো ভোটারদের নাম বাদ দিতে হবে এবং এটা এখনও কেন করা হয়নি সেটাও আমাদের প্রশ্ন। আরেকটি বড় বিষয় হল কোনো বিশেষ সম্প্রদায়কে 'টার্গেট' করে কিন্তু কিছু করা যাবে না। অনুপ্রবেশকারী হিসেবে যদি কাউকে চিহ্নিত করা হয় তবে তাঁর সম্পর্কে কিন্তু নির্দিষ্ট তথ্য দিতে হবে। যদি সেটা না হয় তাহলে কিন্তু আইনের আশ্রয় নেওয়া হবে।' 

    দিল্লিতে এদিন নির্বাচন কমিশনের এই সাংবাদিক সম্মেলনটি ছিল একটি অবাস্তব ও মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার বিষয়। অভিযোগ করে তৃণমূল নেতা ও দলীয় মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী জানালেন, গোটাটাই ছিল মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার একটি সাংবাদিক সম্মেলন। নির্বাচন কমিশনার প্রথমেই বললেন 'এনুমারেশন ফর্ম' ভরতে হবে তাঁদেরই যাদের ২০০২-এর ভোটার তালিকায় নাম নেই‌। 

    তাঁর দাবি, মনে রাখতে হবে ওই বছরে কিন্তু মানুষকে ফর্ম পূরণ করতে হয়নি। যারা বিএলও ছিলেন তাঁরাই বাড়ি বাড়ি গিয়ে খতিয়ে দেখেছিলেন। কিন্তু এবার সাধারণ মানুষকে বাধ্য করা হচ্ছে সব নথি দিয়ে নাস্তানাবুদ হতে। ওই সময় সার্ভে দু'বছর ধরে হয়েছিল। কিন্তু এবার নির্বাচনের আগে এত কম সময়ের মধ্যে সবার পক্ষে এটা সম্ভবই নয় সমস্ত নথি দিয়ে কাজটা করা।

    তিনি বলেন, 'তার ফলে অনেকেই নাম তুলতে পারবেন না এবং ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন।‌ পরে তাঁরা আবার হয়ত আদালতের মাধ্যমে নাম তুলতে পারবেন কিন্তু মাঝখান থেকে যেটা হবে সেটা হল ততদিনে নির্বাচন শেষ হয়ে যাবে। এককথায় বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই এই তড়িঘড়ি।'

    তাঁর কথায়, আরেকটি বড় বিষয় হল 'এনআরআই'দের জন্য অনলাইনে আবেদনের সুযোগ থাকবে সেটা নির্বাচন কমিশন জানালেন কিন্তু পরিযায়ী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে কিন্তু কিছু বলা হল না! সংবিধান তো সকলের জন্য এক। বলা হল বিএলওরা তিনবার করে বাড়ি যাবেন কিন্তু ১২০০ করে ভোটারের বাড়িতে তিনবার করে যাওয়া কি আদৌ সম্ভব?'

    পাশাপাশি সংশোধনের জন্য সময় মাত্র ১ মাস! এর অর্থ হল সমাজের একটি বৃহৎ অংশকে ভোট প্রক্রিয়ার বাইরে রাখার জন্য এটা করা হচ্ছে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানালেন বিহারে নাকি এসআইআর খুবই ভালোভাবে হয়েছে! গোটা দেশ দেখেছে বিহারে কী হয়েছে। যেখানে কুকুর, বিড়াল সবার নামই ভোটার তালিকায় উঠেছে।

    জীবিতদের মৃত বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এককথায় এটা হল বৈধ ভোটারদের বাদ দেওয়ার একটা প্রচেষ্টা। আসলে এরা একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে 'টার্গেট' করে এগোতে চাইছে। আমাদের আশঙ্কা এই এসআইআর-এ বাদ যাবে মতুয়া সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশ।

    কারণ মনে রাখতে হবে বাংলাদেশে কিন্তু মুসলিম জনসংখ্যা কমেনি। কমেছে হিন্দু জনসংখ্যা। তাঁরা কিন্তু অধিকাংশই এসেছে এই রাজ্যেই এবং তার ফলে সীমান্ত এলাকায় জন বিন্যাস পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। এঁরা এসে ভোট দিয়েছেন বিজেপিকে।

    তিনি বলেন, 'আজ কেন এই সম্প্রদায়ের বিজেপি নেতাদের মধ্যে এসআইআর নিয়ে মতবিরোধ? কারণ এরা সবাই এসেছে ২০০২ সালের পর। এই লোকগুলোর উপরেই কিন্তু কোপ পড়বে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন বলছে তারা নাকি বিচার করে দেখবে কার নাম থাকবে আর কার নয়। অর্থাৎ তারা হিন্দু দেখলে নাম রাখবে কিন্তু মুসলিম দেখলে নাম রাখবে না!  এককথায় গোটা বিষয়টির পিছনেই একটি অস্বচ্ছ চিন্তাভাবনা।'
  • Link to this news (আজকাল)