অন্ধ্রে ল্যান্ডফল, তারপর কোন দিকে যাবে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মান্থা? ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ভারী বৃষ্টি চার রাজ্যে ...
আজকাল | ২৯ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: আর কয়েক ঘণ্টা। খানিকক্ষণ পরেই অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে আছড়ে পড়তে চলেছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মান্থা। আজ রাতেই অন্ধ্রপ্রদেশের মছলিপত্তনম ও কাকিনাড়ার মাঝখানে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মান্থার ল্যান্ডফল। ল্যান্ডফলের সময় সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকতে পারে ১১০ কিমি/ঘণ্টা।
মঙ্গলবার ভারতের মৌসম ভবন আইএমডি-র প্রধান মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র জানিয়েছেন, অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে আছড়ে পড়ার পর শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মান্থার শক্তি কমে যাবে। এরপর ঘূর্ণিঝড়ের আকার নিয়ে ওড়িশার দিকে এগিয়ে যাবে মান্থা। শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মান্থার দাপটে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে অন্ধ্রপ্রদেশের জেলাগুলি। এর পাশাপাশি ওড়িশা ও ছত্তিশগড়েও ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
ল্যান্ডফলের পর থেকেই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মান্থার শক্তি ক্ষয় হবে। কমবে ঝড়ের গতিবেগ। মঙ্গলবার থেকেই ভারী বৃষ্টির দাপট শুরু হয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ ও পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলিতে। আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত তিন রাজ্যে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। ভারতের মৌসম ভবন জানিয়েছে, আজ থেকে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত একটানা ভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, তামিলনাড়ু ও ছত্তিশগড়ে।
মঙ্গলবার সাউথ সেন্ট্রাল রেলওয়ে ও ইস্ট কোস্ট রেলওয়ে সবমিলিয়ে আগামী দু'দিনে শতাধিক ট্রেন বাতিলের ঘোষণা করেছে। তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশ মিলিয়ে বাতিল করা হয়েছে ৩৫টি বিমান। অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় হু হু করে কমছে ওড়িশার পর্যটনের গতি। একদিনেই ওড়িশায় ৮০ শতাংশ থেকে বুকিং নেমে গিয়েছে ৫০ শতাংশ, অর্থাৎ ৩০ শতাংশ কমে গিয়েছে বুকিং। অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, তামিলনাড়ু, ছত্তিশগড়, পুদুচেরি, এই পাঁচ রাজ্যে ২২টি জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর একাধিক টিম মোতায়েন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ আইএমডি জানিয়েছে, গত ছ'ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার / ঘণ্টা গতিবেগে ধেয়ে আসছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মান্থা৷ বর্তমানে এই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মান্থা মছলিপত্তনম থেকে ৭০ কিমি দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে, কাকিনাড়া থেকে ১৫০ কিমি দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্বে, বিশাখাপত্তনম থেকে ২৫০ কিমি দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে, ওড়িশার গোপালপুর থেকে ৪৮০ কিমি দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে। স্থলভাগে আছড়ে পড়ার সময় এর সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ১১০ কিমি/ঘণ্টা।
শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মান্থার জেরে লাল সতর্কতা জারি রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশে। ২৬টি জেলার মধ্যে ২৩টিতে লাল, কমলা সতর্কতা জারি রয়েছে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু। পরিস্থিতি সামাল দিতে কী কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে, তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
মঙ্গলবার, অর্থাৎ ২৮ অক্টোবর অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশার স্কুল বন্ধের ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী তিনদিন অন্ধ্রপ্রদেশের আনাকাপল্লিতে সমস্ত স্কুল ও কলেজ বন্ধের ঘোষণা করা হয়েছে। বিশাখাপত্তনম ও কাকিনাড়ার সমস্ত সমুদ্র সৈকত বন্ধ রাখা হয়েছে। পর্যটকদের এই পরিস্থিতিতে সমুদ্র সৈকতে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। রাজ্যজুড়ে ৪০০টি অস্থায়ী শিবির তৈরি রয়েছে। একাধিক দমকল বাহিনী, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে জেলায় জেলায়।
ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় পুলিশ উপ্পাডা, সুব্বামপেট, মায়াপত্তনম ও সুরাডাপেট গ্রামের বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়েছে। তিরুপতির জেলা প্রশাসনের প্রধান জানিয়েছেন, উপকূলবর্তী পাঁচটি এলাকায় প্রবল বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যেই বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ইন্ডিগো তাদের এক্স হ্যান্ডলে যাত্রীদের সতর্ক করে বলেছে, ‘বিশাখাপত্তনম, বিজয়ওয়াড়া ও রাজামুন্দ্রির এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ও ভারী বৃষ্টির কারণে ফ্লাইট স্ট্যাটাস আগে দেখে নিন।’ রেল পরিষেবাতেও প্রভাব পড়েছে। জানা গিয়েছে, হাওড়া–জগদলপুর সামলেশ্বরী এক্সপ্রেস বর্তমানে রায়গড়া পর্যন্ত চলবে।
হিরাখণ্ড এক্সপ্রেস ও ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস রায়গড়া থেকে শুধুমাত্র ভুবনেশ্বর বা রাউরকেলা পর্যন্ত চলবে। জগদলপুর অংশের পরিষেবা আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারকে কেন্দ্রীয় সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘উপকূলবর্তী রাজ্যগুলির সুরক্ষা ও ত্রাণকাজে কেন্দ্রীয় সরকার সবরকম সহায়তা দেবে।