আজকাল ওয়েবডেস্ক: অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’ আছড়ে পড়েছে। ভারতের আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, এই প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের ভূমিতে আছড়ে পড়ার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে এবং সম্পূর্ণভাবে অন্ধ্র প্রদেশ উপকূল অতিক্রম করতে আরও তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগবে। সোমবার থেকেই উপকূলীয় এলাকায় ভারী বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টির সর্বোচ্চ বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছেছে।
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, মান্থা বর্তমানে অন্ধ্রপ্রদেশের মচিলিপটনম থেকে প্রায় ১২০ কিমি পূর্বে, কাকিনাডা থেকে ১১০ কিমি দক্ষিণে, বিশাখাপত্তনম থেকে ২২০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে এবং ওড়িশার গোপালপুর থেকে প্রায় ৪৬০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১৭ কিমি বেগে অগ্রসর হচ্ছে।
IMD-র সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই ঘূর্ণিঝড়টি কাকিনাডার কাছাকাছি মচিলিপটনম ও কালিঙ্গপত্তনমের মধ্যে উপকূলে আছড়ে পড়বে। ঝড়ের তীব্রতা ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিমি বেগে স্থায়ী বাতাস এবং ১১০ কিমি বেগে দমকা হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার ইতিমধ্যেই সাতটি জেলার যান চলাচলে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সেখানে রয়েছে কৃষ্ণা, এলুরু, পূর্ব গোদাবরী, পশ্চিম গোদাবরী, কাকিনাডা, ডঃ বি.আর. অম্বেদকর কোনাসীমা এবং আলুরি সীতারাম রাজু জেলার চিন্তুর ও রামপাচোদভারম মহকুমায়। মঙ্গলবার রাত ৮টা ৩০ মিনিট থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। কেবলমাত্র জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা এই বিধিনিষেধ থেকে অব্যাহতি পেয়েছে।
প্রশাসন নাগরিকদের সতর্ক করেছে যেন তারা ঘরে অবস্থান করেন, অপ্রয়োজনীয় বাইরে না যান এবং সরকারী নিরাপত্তা নির্দেশিকা মেনে চলেন। জেলা কালেক্টর ও পুলিশ সুপারদের জাতীয় সড়ক সহ সমস্ত রাস্তায় যানবাহন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলাগুলিতে প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে মচিলিপটনমে ৫.২ মিমি, নারাসাপুরে ৯.৮ মিমি, টুনি ১৫.৬ মিমি, কাকিনাডায় ৫.৭ মিমি এবং বিশাখাপত্তনমে ০.২ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
নেল্লোর জেলায় টানা ৩৬ ঘণ্টা ধরে ভারী বৃষ্টি চলছে, যেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় গড়ে ৫ সেমি বৃষ্টি হয়েছে এবং কিছু এলাকায় ৭ সেমি পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ভারী বৃষ্টি চলবে বলে সম্ভাবনা রয়েছে এবং প্রতিটি দুর্বল অঞ্চলে নজরদারি দল মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে, কোনাসীমা জেলার মাকানাগুদেম গ্রামে প্রবল ঝড়ে একটি গাছ উপড়ে পড়ে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বিমান চলাচলেও বড় প্রভাব পড়েছে। বিশাখাপত্তনম বিমানবন্দরে ৩২টি, বিজয়ওয়াড়ায় ১৬টি এবং তিরুপতিতে ৪টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি, দক্ষিণ মধ্য রেলওয়ে জোনে মোট ১২০টি ট্রেন সোমবার ও মঙ্গলবার বাতিল করা হয়েছে।
জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ৪৫টি উদ্ধারকারী দল মোতায়েন করেছে, যাতে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবের পর দ্রুত উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়।
‘মান্থা’-র প্রভাবে অন্ধ্র উপকূলে বৃষ্টি, বন্যা, ও প্রবল ঝড়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্রশাসন ও দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে যাতে মানুষের প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি সর্বনিম্নে রাখা যায়।