• SIR ঘোষণার পরই ‘অসুস্থ’, বংশতালিকা লেখা ডায়েরিতেই সুইসাইড নোট লিখে চরম সিদ্ধান্ত পানিহাটির প্রৌঢ়র!
    প্রতিদিন | ২৯ অক্টোবর ২০২৫
  • অর্ণব দাস, বারাকপুর: বিজেপি নেতাদের বক্তব্যে বারবার এনআরসির প্রসঙ্গ শুনে দেশ ছাড়া হওয়ার আতঙ্কে দিন-দিন চিন্তা বেড়ে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তাই বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই ডায়েরিতে বংশতালিকা লিখছিলেন পানিহাটির প্রৌঢ়। শেষে সোমবার এসআইআর ঘোষণা হতেই অবসাদ পারদ ছাড়ায়। এরপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন বছর সাতন্নর প্রদীপ কর। গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার আগে ডায়রিতে তিনি শেষ বারের মত লেখেন ‘আমার মৃত্যুর জন্য এনআরসি দায়ী’। সুইসাইড নোটের এই লেখার খবর জানাজানি হতেই ক্ষোভে ফুঁসছে পরিবার পরিজনেরা।

    স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, একদম প্রথমে পলাশিতে থাকলেও বিগত ৪০বছরের বেশি সময় ধরে পানিহাটি অঞ্চলেই থাকতেন অবিবাহিত প্রদীপবাবু। প্রথম দিকে ভাড়া বাড়িতেই থাকতেন তিনি, তার ভাই তপন কর ও ভ্রাতৃবধূ মৌসুমী। পরে তাঁরা পানিহাটি পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আগরপাড়ার মহাজাতি নগরের উমা অ্যাপার্টমেন্টের তিনতলা ফ্যাটে থাকতে শুরু করেন। সোদপুরের উসুমপুর বটতলায় ভাইয়ের সঙ্গেই বেডিংয়ের দোকান চালাতেন তিনি। পরিচিত ও ঘনিষ্ঠদের দাবি, এনআরসি নিয়ে বিজেপি নেতাদের গরম গরম বক্তব্য শোনার পর থেকেই স্বাভাবিক জীবনযাপন হারিয়েছিলেন প্রদীপ। ধীরে ধীরে দেশ ছাড়া হওয়ার চিন্তা গ্রাস করে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। মাঝে মধ্যেই এনিয়ে আলোচনা করতেন পরিচিতদের সঙ্গে। তাই, সম্প্রতি ডায়েরিতে বংশতালিকা লেখা শুরু করেছিলেন বলেই পরিবার সূত্রে খবর।

    তার মধ্যে সোমবার এসআইআর ঘোষণা হয়। সেই খবরে আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তিনি। রাতে দোকান থেকে বাড়িতে ফিরেই ভাইয়ের স্ত্রী মৌসুমীর কাছেও এসআর নিয়েও জিজ্ঞাসা করেন তিনি। তখনই তাকে ইতস্তত ও অসুস্থ মনে হয়েছিল পরিবারের। পরেরদিনই ঘর থেকে প্রদীপবাবুর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার এবং সুইসাইড নোটে ‘আমার মৃত্যুর জন্য এনআরসি দায়ী’ ― লেখা নিয়ে ভোটের আগে বিজেপির এসআইআর ও এনআরসির রাজনীতিকেই দায়ী করছেন পরিবার পরিচিতরা। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর তনুশ্রী ভৌমিকের স্বামী জয়দীপ ভৌমিক প্রদীপবাবুর ঘনিষ্ঠ। তিনি বলেন, “রাতে যখন প্রদীপবাবু দোকান থেকে ফিরছেন, দেখা হয়েছিল। খুবই বিমর্ষ লাগছিল ওকে। পরিবারের থেকে জেনেছি, এসআইআর নিয়ে অনেকেই তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন। ভাইয়ের স্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন এসআইআর কী, কীভাবে হবে। চিন্তায় নাকি ঘনঘন ধূমপান করছিলেন। সেই আতঙ্কই ওঁকে আত্মঘাতী হওয়ার দিকে ঠেলে দিল।” বিধায়ক নির্মল ঘোষ বলেন, “মানুষকে রক্ষা করতে আমরা বদ্ধপরিকর। বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকারের এনআরসি নিয়ে এই ঘৃণার রাজনীতির বিরুদ্ধে আমাদের দলীয় লড়াই চলছে, চলবে।”
  • Link to this news (প্রতিদিন)