কোন বাড়িতে কবে বিএলও যাবেন? কর্মসূত্রে বাইরে থাকলে কী হবে? এসআইআর নিয়ে ১৫টি সংশয়ের জবাব দিলেন সিইও
আনন্দবাজার | ২৮ অক্টোবর ২০২৫
জাতীয় নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়া ঘোষণা ইস্তক নানা প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বক্তব্য এক-এক রকম। আবার নাগরিকদেরও বিভিন্ন জিজ্ঞাসা রয়েছে। মঙ্গলবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজকুমার আগরওয়াল সে সমস্ত কৌতূহলের জবাব দিলেন। তিনি নাগরিকদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘‘আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।’’ নাগরিকদের জ্ঞাতার্থে সিইও দফতর থেকে ১৫টি প্রশ্নের জবাব খুঁজে আনল আনন্দবাজার ডট কম।
১) এক মাসের মধ্যে কি এসআইআর-এর পুরো প্রক্রিয়া শেষ করা যাবে?
সিইও: বিহারে পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে ভোটার সংখ্যা বেশি। সেখানে কোনও প্রস্তুতি ছিল না। ছিল না প্রশিক্ষণ। সিংহ ভাগ নাগরিক জানতেনই না, প্রক্রিয়াটি কী! সেখানে যদি সময়ের মধ্যে নির্বিঘ্নে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করা যায়, তা হলে বাংলায় নয় কেন? এ রাজ্যে অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সেই সময় তারা পেয়েছে। তা ছাড়া বাংলার ভোটার সংখ্যাও বিহারের চেয়ে কম। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই এসআইআর-এর প্রক্রিয়া শেষ হবে।
২) আধার কার্ড কি পরিচয়পত্র হিসাবে গ্রহণ করা হবে?
সিইও: হ্যাঁ। আধার কার্ডের বিষয়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।
৩) কারও বাড়ি মেদিনীপুরে, তিনি কলকাতায় কাজ করেন। তিনি কী ভাবে এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করবেন?
সিইও: দুটো পদ্ধতি রয়েছে। এক, অনলাইন, দুই, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বাড়ির কোনও সদস্য এনুমারেশন ফর্মে সই করলে তা গ্রাহ্য করা হবে। ফর্ম পূরণ করে পরিবারের সদস্য জমা দিতে পারবেন।
৪) প্রত্যন্ত এলাকার মানুষদের সচেতনতার বৃদ্ধির জন্য কী করবেন?
সিইও: আমরা প্রচার করব। সংবাদমাধ্যম থেকে স্থানীয় স্তরে মাইকপ্রচার কিংবা অন্য ভাবে প্রচার করা হবে। সকলেই এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে সমস্ত তথ্য জানতে পারবেন।
৫) সব বুথে কি রাজনৈতিক দলের বিএলএ রয়েছে?
সিইও: সব বুথে বিএলএ নেই। তবে যত বেশি সংখ্যক বিএলএ থাকবেন, কাজের সুবিধা তত বেশি হবে। মঙ্গলবার সর্বদল বৈঠকেও কমিশনের তরফে বলা হয়েছে, আরও বুথভিত্তিক এজেন্টের নাম দিতে। কমিশন জানিয়েই দিয়েছে, বিএলএ-রা ৫০টা করে ফর্ম জমা দিতে পারবেন।
৬) রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বক্তব্য শুনে অনেকে আতঙ্কিত! এসআইআর ঘোষণার পর আত্মহত্যার অভিযোগও সামনে আসছে। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য কী?
সিইও: অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। এসআইআর বা ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন সরকারি কাজ। এর আগেও ৮-১০ বার হয়েছে। ভয়ের কোনও প্রশ্নই নেই।
৭) কার বাড়িতে কবে বিএলও যাবেন, তিনি জানবেন কী ভাবে? সেই সময় বাড়িতে তিনি না থাকলে কী হবে?
সিইও: বিএলও সেই আধিকারিক, যাঁর কাছে নির্দিষ্ট এলাকার সমস্ত ভোটার সম্পর্কে তথ্য থাকে। তিনি জানেন, কে কোথায় থাকেন, কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন কি না। তাই বিএলও কোনও এলাকায় যাওয়ার আগে আগাম সেখানে খবর পাঠিয়ে দেবেন। তার পরেও কেউ বা কোনও পরিবার খবর না পেলেও অসুবিধা নেই। বিএলও এক বার নয়, প্রত্যেক এলাকায় প্রয়োজনে তিন-চার বার যাবেন। তা ছাড়া এক-একটি বুথে ভোটার সংখ্যা মোটামুটি ১২০০। বিএলও-দের কাজ কঠিন নয়। প্রতি দিন গড়ে ১৫-২০টি বাড়িতে গেলেই এক মাসের মধ্যে সমীক্ষার কাজ হয়ে যাবে।
৮) ১১টি নথি না থাকলে কী হবে?
সিইও: নিজের নাম, বাবা-মায়ের নাম থাকলে কোনও নথি দিতে হবে না। তা ছাড়াও ১১টি নথি ব্যতীত নাগরিকত্ব প্রমাণ করার যে কোনও নথি দিলেই তা গ্রাহ্য হবে। সে জন্য ইআরও ডেকে শুনানি করবেন। ওই ব্যক্তির পুরো বক্তব্য শুনবেন। শোনা হবে, তিনি কী ভাবে নাগরিক, তাঁর যুক্তি কী। এনুমারেশন ফর্ম জমা দেওয়া প্রত্যেকের নামই খসড়া তালিকায় থাকবে। তখন কোনও নথি লাগবে না। আবার কেউ যদি কোনও নথি না-দিয়ে এনুমারেশন ফর্ম নেন, তাঁর নাম খসড়া তালিকাতে থাকবেই। পরে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি হওয়ার আগে ওই ব্যক্তিকে ডেকে পাঠানো হবে। তখন ১১টি নথির যে কোনও একটি নথি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে হবে, সেটি তিনি কী ভাবে পেয়েছেন।
৯) এখন কি নতুন ভোটার তালিকায় নাম তোলা যাবে?
সিইও: যাবে না। খসড়া তালিকায় নাম না বেরোনো পর্যন্ত নতুন করে ভোটার তালিকায় নাম তোলা যাবে না। সোমবারই নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ভোটার তালিকা ‘ফ্রিজ়’ করা হয়েছে। খসড়া তালিকা তৈরির পর আবার ভোটার তালিকায় নাম তোলার বিষয়টি দেখা হবে।
১০) এসআইআরের সঙ্গে এনআরসির সম্পর্ক রয়েছে বলা হচ্ছে। সত্যি?
সিইও: আমাদের এটা রিভিশন প্রক্রিয়া। এ বিষয়ে আমরা কোনও মন্তব্য করব না।
১১) অনাথদের জন্য কী হবে?
সিইও: যাঁদের বাবা-মা নেই, তাঁদের ক্ষেত্রে কমিশনের নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করলেই পরে সেটা দেখে নেওয়া হবে।
১২) রাজ্যে এত আধিকারিকদের বদলি করা হল। এতে কি অসুবিধা হবে?
সিইও: রাজ্য প্রশাসনের অন্দরে আধিকারিকদের বদলি হতেই পারে। আমাদের যাঁরা ‘ডিস্ট্রিক্ট ইলেকশন অফিসার’ (ডিআইও) এবং ইআরও, তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়াই আছে। এখনও যাঁরা প্রশিক্ষণ পাননি, তাঁদেরও প্রশিক্ষিত করা হবে। তা ছাড়া, সার্ভিস রুল অনুসারে যাঁকে যে দায়িত্ব দেওয়া হবে, তিনি তা বুঝে নেবেন। উদাহরণ: এক আধিকারিক অন্য দফতরে বদলি হলে তাঁকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রেও অসুবিধা হবে না।
১৩) বিএলওরা হুমকির মুখে পড়ছেন বলে অভিযোগ উঠছে। তাঁদের কি কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়া হবে?
সিইও: এমন কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। আর এটা আইনশৃঙ্খলার বিষয়। সেটা রাজ্য সরকার দেখবে। বিএলও-দের আমরা কাজ করাচ্ছি। তাঁদের নিরাপত্তার দিকে আমাদের নজর থাকবেই।
১৪) সিইও ওয়েবসাইট বন্ধ। ফলে অনেকে নাম জানতে পারছেন না!
সিইও: ওয়েবসাইটের কাজ চলছে। আগামী সাত দিন কাজ চলবে।
১৫) প্রশান্ত কিশোরের নাম পশ্চিমবঙ্গ এবং বিহারে রয়েছে। কেন?
সিইও: বিহারে আগেই এসআইআর হয়েছে। বিহারে তাঁর নাম রয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এর আগে যখন এসআইআর হয়েছিল, তখন সেন্ট্রালাইজ়ড ডেটা ছিল না। এখন নতুন প্রযুক্তি আনা হচ্ছে। একটাই অ্যাপ্লিকেশনে সমস্ত তথ্য থাকবে। তাই, কোনও ব্যক্তির নাম দুই বা ততোধিক ভোটার তালিকায় থাকলে, তাঁর একটি নাম ব্যতীত অন্যগুলি বাদ যাবে।