মোদি সরকারের রাজকোষ ভরাচ্ছে ‘বিক্রিযোগ্য’ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিই, রেকর্ড মুনাফা
বর্তমান | ২৯ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: ২০১৪ সালে ক্ষমতাসীন হয়েই মোদি সরকার তড়িঘড়ি যে আর্থিক সংস্কারে সবথেকে বেশি জোর দিয়েছিল, সেটি হল বিক্রিযোগ্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার তালিকা তৈরি করা। পরিকল্পনা হয়েছিল, অন্তত ৩৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ করা হবে। দু’ বছর পর নজর পড়েছিল ব্যাংকিং ব্যবস্থার দিকে। ২০১৭ সালে স্থির হয়, দেশের মোট ২৭টি সরকারি ব্যাংককে হয় বিক্রি অথবা সংযুক্তিকরণের মাধ্যমে সংখ্যা কমানো হবে। ইতিমধ্যেই সেই সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে ১২টিতে। আগামী দিনে তা আরও কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ২০১৫ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে বিক্রি অথবা শেয়ার বিক্রি করে আয় করার মরিয়া চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু যে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ও ব্যাংককে সরকারের বোঝা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল, ১১ বছর পর সরকারি পরিসংখ্যানেই দেখা যাচ্ছে সেই সংস্থাগুলি রাজকোষকে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ জোগান দিয়েছে। বিদ্যুৎ, পরিকাঠামো, জ্বালানি, কয়লা, ইস্পাত, যান্ত্রিক উপকরণ ইত্যাদি তাবৎ উৎপাদনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির প্রত্যেকটিই বিপুল মুনাফা করেছে। সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, এনটিপিসির মার্কেট ক্যাপ অর্থাৎ অংশীদারিদের কাছে থাকা শেয়ারের মোট মূল্য সাড়ে ৩ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। যা ২০১৪ সালে ছিল ১ লক্ষ কোটি টাকা। ২০২৪ আর্থিক বছরে গড়ে একটি ত্রৈমাসিকে মোট মুনাফা ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। বিদ্যুৎ গ্রিডের সংস্থাগুলির সম্পদ বেড়ে হয়েছে ২ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকা। স্টেট ব্যাংকের মার্কেট ক্যাপ ৭ লক্ষ ৩২ হাজার কোটি টাকা। পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের দেড় লক্ষ কোটি টাকা। শুধুমাত্র ২০২৪ আর্থিক বছরে স্টেট ব্যাংকের নেট মুনাফা ৭০ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে গিয়েছে। ৪৯ হাজার কোটি টাকার বেশি মুনাফা হয়েছে এলআইসির। এখন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে আর বোঝা হিসেবে দেখা হচ্ছে না। বরং অর্থমন্ত্রকের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, মোদি সরকারের আমলে সুশাসনের জন্যই সরকারি সংস্থা লোকসান থেকে মুনাফার পথে হাঁটতে শুরু করেছে। যদিও প্রশ্ন হল, এখনও সরকার এই ঘোষণা করেনি যে, বেসরকারিকরণের পথ থেকে তারা সরে আসবে কি না। কারণ একটি জল্পনা চলছে, আগামী দিনে বেসরকারিকরণের সম্ভাবনা আরও বেড়ে যাচ্ছে। কারণ, এই প্রতিটি সংস্থা যে লাভজনক এবং ক্রমেই সেই মুনাফা বাড়ছে, সেটা বেসরকারিকরণের জন্য আরও ভালো বিজ্ঞাপন। সুতরাং এতদিন ছিল রুগ্ণ সংস্থার বেসরকারিকরণ। এবার চর্চা শুরু হয়েছে লাভজনক সরকারি সংস্থার বিক্রির।