মেডিকেল কলেজে স্ট্রেচারের জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষা, মারা গেলেন রোগী
বর্তমান | ২৯ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, রায়গঞ্জ: রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে এলেও স্ট্রেচার মেলেনি বলে অভিযোগ। জরুরি বিভাগের বাইরে অপেক্ষা করতে করতে শেষপর্যন্ত বিশেষভাবে সক্ষম রোগীর মৃত্যুতে পরিষেবা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।
মঙ্গলবার দুপুরে রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এমন ঘটনায় তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সুপার প্রিয়ঙ্কর রায়ের বক্তব্য, একটা ঘটনা ঘটেছে শুনেছি। তবে, রোগী পরিবারের তরফে কোনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ হলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, মৃত গৌতম কুমার সরকার (৫০) ইটাহারের বানবোল এলাকার বাসিন্দা। তাঁর ভাই উত্তম কুমার সরকার বলেন, দীর্ঘদিন ব্লাড সুগারের সমস্যা ছিল দাদার। মঙ্গলবার ভোররাতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাড়িতেই তাঁর শুশ্রূষা করা হচ্ছিল। কিন্তু শারীরিক অবস্থার সেভাবে উন্নতি না হওয়ায় দুপুরে রায়গঞ্জ মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু দাদাকে বাঁচাতে পারলাম না।
উত্তমের দাবি, এদিন মেডিকেলে যাওয়ার পর প্রায় আধঘণ্টা রোগীকে নিয়ে জরুরি বিভাগের বাইরে গাড়িতে স্ট্রেচারের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু যথাসময়ে স্ট্রেচার পাওয়া যায়নি। জরুরি বিভাগে ঢুকে স্ট্রেচারের জন্য খোঁজ করেও কোনও লাভ হয়নি। যখন স্ট্রেচার এসেছে,ততক্ষণে রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন।
এই মৃত্যুর পর কান্নায় ভেঙে পড়েন গৌতমবাবুর পরিবারের সদস্যরা। জানা গিয়েছে, শেষপর্যন্ত গৌতমবাবুর অসাড় দেহ জরুরি বিভাগে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করলে বোঝা যায়, তাঁর মৃত্যু হয়েছে। মৃতের দিদি বলেন, গঙ্গারামপুর থেকে এসে ভাই গৌতমকে নিয়ে রায়গঞ্জ মেডিকেলে পৌঁছেছিলাম। পরিবারের অন্য সদস্যরাও আমার সঙ্গে ছিলেন। সকলেই স্ট্রেচারের জন্য জরুরি বিভাগের বাইরে গাড়িতে অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু স্ট্রেচার পাওয়াই যাচ্ছিল না। প্রায় আধঘণ্টা অপেক্ষার পর যখন শেষপর্যন্ত স্ট্রেচার এল, ততক্ষণে সব শেষ। আমাদের আক্ষেপ, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও কার্যত বিনা চিকিৎসায় ভাইয়ের মৃত্যু হল।
রায়গঞ্জ মেডিকেলে স্ট্রেচার না পাওয়ার অভিযোগ এই প্রথম নয়। আগেও বেশকয়েকবার এধরনের অভিযোগ উঠেছে। ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, স্ট্রেচারের সমস্যার থেকেও হাসপাতালে নিযুক্ত কর্মীদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের জন্যই এমন অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটছে। সরাসরি গাফিলতির অভিযোগ না করলেও যদি কিছুটা তত্পরতা দেখানো যেত, তাহলে হয়তো রোগীর প্রাণ বাঁচানো যেত। যদিও তাঁর শারীরিক অবস্থা কেমন ছিল, সেটাও বিচার্য বলে মনে করছেন তাঁরা।  নিজস্ব চিত্র।