• বিপর্যয়ে হারিয়েছে সব নথি, এবার এসআইআর নিয়ে চিন্তায় দুর্গতরা, সহায়তার জন্য ক্যাম্প করবে তৃণমূল, বিজেপির
    বর্তমান | ২৯ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: জন্ম সার্টিফিকেট, আধার কার্ড, ভোটার কার্ড। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বিপর্যয়ে এমন একগুচ্ছ নথি খুইয়ে ফ্যাসাদে পাহাড় ও সমতলের বহু মানুষ। তাঁরা এখন কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন (এসআইআর) নিয়ে ঘোর আতঙ্কিত। তাঁদের একাংশ ‘নিজভূমে পরিবাসী’ হওয়ার আশঙ্কা করছেন। আর তাঁদের সহায়তায় ঝাঁপিয়েছে দার্জিলিং জেলা প্রশাসন। তারা দুর্গতদের নথি জোগাড় করে দিতে ক্যাম্প অব্যাহত রেখেছে। এদিকে, বাসিন্দাদের সহযোগিতা করতে ক্যাম্প করবে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি। 

    সম্প্রতি প্রকৃতির ভয়াবহ রোষের মুখে পড়ে দার্জিলিং জেলা। মেঘভাঙা বৃষ্টি, ধস এবং ঝোরা ও নদীর জলস্ফীতিতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় পাহাড়ের একাংশ। আর সমতলের মাটিগাড়া, নকশালবাড়ি, খড়িবাড়ির কিছু গ্রাম ও শিলিগুড়ি শহর সংলগ্ন জলপাইগুড়ির পোড়াঝার প্লাবিত হয়। এতে পাহাড় ও সমতলের হাজার হাজার মানুষ খুইয়েছে গুরুত্বপূর্ণ নথি। কারও নথি ধসে চাপা পড়েছে, আবার কারও নথি ভেসে গিয়েছে নদীর জলে। এমন প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশন এসআইআর চালু করায় আতঙ্কিত বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ওই বাসিন্দারা। 

    বিপর্যয় বিধ্বস্ত জোড়বাংলো-সুখিয়াপোখরি ব্লকে এখনও ৮টি ত্রাণ শিবির চলছে। যারমধ্যে সালুর ত্রাণ শিবিরের কয়েকজন দুর্গত বলেন, আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, জন্মের সার্টিফিকেট, মাধ্যমিক পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড, রেজাল্ট, স্নাতকের সার্টিফিকেট সবকিছুই ধসে চাপা পড়েছে। এখানে বিএলও এলে কি দেখাব, বুঝতে  পারছি না। আগামীতে ভোটার তালিকায় নাম থাকবে কি না চিন্তায় রয়েছি। ফলে রাতেরঘুম উবে গিয়েছে। ব্লক প্রশাসন জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত তাদের কাছে খুইয়ে যাওয়া নথির জন্য আবেদন করেছেন প্রায় ৫০ জন। শীঘ্রই তাঁদের নথি জোগাড়ের চেষ্টা চলছে। 

    একই অবস্থা শিলিগুড়ি মহকুমার দুর্যোগ কবলিত গ্রামগুলির। মাটিগাড়ার প্রমোদনগরের কয়েকজন বলেন, কয়েক দশক ধরে বসবাস করছি। অতীতের বিভিন্ন নির্বাচনে অংশও নিয়েছি। কিন্তু বালাসন নদীর ভাঙনে বার্থ সার্টিফিকেট, স্কুলের সার্টিফিকেট, আধার, ভোটার কার্ড খুইয়েছি। পোড়াঝারের কয়েকজন বলেন, বাংলাদেশ থেকে অত্যাচারিত হয়ে দু’দশক আগে ভারতে আসি। প্রথমে ওড়িশায় ভোটার তালিকায় নাম তুলি। সেখান থেকে কর্মসূত্রে শিলিগুড়িতে এসেছি। তাই পোড়াঝারেই সমস্ত নথি নিয়ে চলে আসি। দুর্যোগে সমস্ত নথি ভেসে গিয়েছে। তাঁদের আশঙ্ক, এসআইআরের জেরে হয়তো ভোটার তালিকা থেকে কাটা যাবে নাম। 

    গত ৪ অক্টোবর বিপর্যয়ের পর দুর্গতদের পাশে দাঁড়ায় প্রশাসন। তারা দুর্গতদের নথি জোগাড় করে দিতে ত্রাণ শিবিরে ক্যাম্প করে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, বিপর্যয়ে হারিয়ে যাওয়া, নষ্ট হওয়া নথি দুর্গতদের জোগাড় করে দিতে প্রথমে ত্রাণ শিবিরগুলিতে ক্যাম্প করা হয়েছিল। এখন সেই ক্যাম্প পঞ্চায়েত অফিসগুলিতে চলছে। বিএসকেগুলিতে ক্যাম্প হবে। শীঘ্রই আবেদনকারীরা সমস্ত নথি পাবেন বলেই আশা করছি।  ফাইল চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)