• ছোবল থেকে বাঁচতে পায়ে বস্তা জড়িয়ে জমিতে নামছেন চাষিরা
    বর্তমান | ২৯ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: গ্রামেগঞ্জে সাপের উপদ্রবে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু বিগত কয়েকদিনে পরপর সাপের ছোবল ও মৃত্যুর ঘটনায় বোলপুর মহকুমাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। মাঠে পাকা ধান হাওয়ায় মাথা দোলাচ্ছে। অথচ, বিষধর সাপের ছোবলের ভয়ে ধান কাটার লোক মিলছে না। এই পরিস্থিতিতে চরম অসহায়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন বীরভূমের চাষিরা। তারপরেও অনেক চাষি বাধ্য হয়ে পাকা ধান তুলতে জমিতে যাচ্ছেন। তবে, তাঁদের পায়ে মোটা করে বস্তা জড়ানো থাকছে। এমনই চিত্র উঠে আসছে বোলপুর মহকুমার বিভিন্ন এলাকায়।

    স্থানীয় ও স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রের খবর, চলতি অক্টোবর মাসেই জেলায় সাপের ছোবলে একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বিশেষত, বোলপুর মহকুমায় গত প্রায় ১০দিনে তিনজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। গত শনিবার কৃষিজমিতে কীটনাশক ছড়াতে গিয়ে সাপের ছোবলে মৃত্যু হয় লাভপুরের ইন্দাস অঞ্চলের লোহাড্ডা গ্রামের বাসিন্দা অজিত হাজরার। তার আগে গত ১৬ অক্টোবর লাভপুরের বিপ্রটিকুরী অঞ্চলের তিলটিকুড়ি গ্রামের বাসিন্দা কালীপ্রসাদ দাসের মৃত্যু হয়। একই অঞ্চলের গঙ্গারামপুর গ্রামের বাসিন্দা এক্রামূল হকের মৃত্যু হয়েছে গত ২১ অক্টোবর। মৃতের পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, কৃষিজমিতে কাজ করতে গিয়েই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। সাপের ছোবল খেয়ে হাসপাতালে ভর্তিও রয়েছেন অনেকে। কীভাবে মাঠ থেকে ধান তুলবেন, সেই চিন্তায় ঘুম উবেছে চাষিদের। সাপের আতঙ্কে বাড়ির পুরুষদের জমিতে যেতে দিচ্ছেন না গঙ্গারামপুরের মহিলারা। গ্রামের মহিলারা বলছেন, মাঠে গেলেই বেঘোরে প্রাণ যাওয়ার ভয় রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাড়ির কর্তাদের পাঠাই কী করে? তাঁদের দাবি, ধান মাঠেই পড়ে থাকুক। তবুও আমরা স্বামী-ছেলেকে মাঠে পাঠাব না। ওই এলাকার চাষি পলাশ ঘোষ এদিন কীটনাশক দিতে দুরুদুরু বুকে জমিতে গিয়েছিলেন। পায়ে তাঁর প্লাস্টিকের বস্তা জড়ানো ছিল। পলাশ বলেন, ধানে পোকা লেগেছে। কীটনাশক দিতেই হবে। এদিকে, মাঠে প্রচুর বিষধর সাপ বেরিয়েছে। অনেকের মৃত্যুও হয়েছে। সাপের ছোবল থেকে রক্ষা পেতে পায়ে বস্তা বেঁধে জমিতে যাই। অনেকে জমির আশেপাশে কার্বলিক স্প্রে করছেন। তবে চাষিদের আর্জি, এব্যাপারে প্রশাসন হস্তক্ষেপ করুক।

    কৃষিদপ্তরের কর্তারা জানাচ্ছেন, বীরভূমের বোলপুর, লাভপুর, নানুর সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতি বছরই এই সময়ে সাপের উপদ্রব বাড়ে। সর্প বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সময় পাকা ধান খাওয়ার জন্য মাঠে প্রচুর ইঁদুর দেখা যায়। ইঁদুর খাওয়ার লোভে সাপেরাও হাজির হয়। এই সময় মাঠে সাধারণত গোখরো, কেউটে, চন্দ্রবোড়া কিংবা কালাচের মতো বিষধর সাপ দেখা যায়। অনেক সময় দেরিতে হাসপাতালে পৌঁছনো, কিংবা মহকুমা হাসপাতালে সাপের চিকিৎসার পর্যাপ্ত পরিকাঠামো না থাকায় মৃত্যু পর্যন্ত হয়। তাঁদের পরামর্শ, মাঠে গেলে অবশ্যই পা ঢাকা হাঁটু সমান উঁচু জুতো পরতে হবে। ধান কাটার সময় মাঠে লাঠি দিয়ে ঠুকলে, তার কম্পনে সাপ পালিয়ে যাবে।
  • Link to this news (বর্তমান)