• রামপুরহাটে আদিবাসী নাবালিকা ধর্ষণ ও খুনে চার্জগঠন, শুক্রবার শুরু শুনানি
    বর্তমান | ২৯ অক্টোবর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: নাবালিকা আদিবাসী ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনে অভিযুক্ত শিক্ষক মনোজ পালের বিরুদ্ধে রামপুরহাট পকসো আদালতে চার্জগঠন হল। আগামী শুক্রবার থেকে ট্রায়াল শুরু হবে। অভিযোগকারীর আইনজীবীদের দাবি, আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে এই মামলা নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। 

    মঙ্গলবার সকাল পৌনে দশটা নাগাদ অভিযুক্ত মনোজ পালকে রামপুরহাট কোর্টে নিয়ে আসা হয়। সাংবাদিকদের ক্যামেরা দেখে অভিযুক্ত দাবি করে, সে নির্দোষ। তার সঙ্গে কেউ ছিল কি না, সে প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যায়। সকাল সোওয়া ১১টা নাগাদ তাকে হাজির করানো হয় এজলাসে। আদালত চত্বরে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। সেখানে তদন্তকারী অফিসার রামপুরহাট এসডিপিও গোবিন্দ সিকদার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ সহ সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দেন। নাবালিকার পরিবারের পক্ষ থেকেও দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি চেয়ে আবেদন জানানো হয়।  অভিযুক্তকে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পড়ে দেখার জন্য প্রায় ৪৫ মিনিট সময় দেওয়া হয়। পরে সাড়ে বারোটা নাগাদ ফের তাকে এজলাসে তোলা হয়। এরপরই বিচারক চার্জগঠনের অনুমতি দেন। 

    এই মামলার স্পেশাল পিপি বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, অভিযুক্তর বিরুদ্ধে কিডন্যাপিং, ধর্ষণ, খুন ও এসসি-এসটি অ্যাক্টের বিভিন্ন ধারায় এদিন চার্জগঠন হল। এবার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। যদিও অভিযুক্ত নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছে। আমরা আদালতের কাছে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ট্রায়ালের জন্য ১৬টা দিন চেয়েছিলাম। বিচারক তা মঞ্জুর করেছেন। আগামী শুক্রবার থেকে সেই ট্রায়াল শুরু হয়ে যাবে। পাশাপাশি তিনি বলেন, বেশকিছু বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পেয়েছি। সেই মতো এদিন সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। আরও কিছু বৈজ্ঞানিক প্রমাণ আমরা পাব। তখন ফের সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেওয়া হবে। অন্যদিকে অভিযোগকারীর আইনজীবী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রদীপ সোরেনরা বলেন, ট্রায়ালের দিনগুলির তারিখ উল্লেখ করে পিপিকে দেখিয়ে আদালতে জমা দেওয়া হয়েছিল। মৃতার পরিবারের পক্ষ থেকে দ্রুত ট্রায়ালের জন্য পিটিশন জমা দেওয়া হয়েছে। বিচারক তা মঞ্জুর করেছেন। আমাদের ধারণা, এক থেকে দেড় মাসের মাথায় এই মামলার নিস্পত্তি করতে পারব। অভিষেকবাবু বলেন, এই মামলায় ৩৮ থেকে ৩৯ জন সাক্ষ্য দেবেন। 

    উল্লেখ্য, রামপুরহাটের বছর তেরোর নাবালিকা আদিবাসী ছাত্রী গত ২৮ আগস্ট থেকে নিখোঁজ ছিল। পরিবারের পক্ষ থেকে স্কুলেরই শিক্ষক মনোজ পালের নামে থানায় অভিযোগ জানানো হয়। প্রথমে ওই শিক্ষককে জেরা করে ছেড়ে দেয় পুলিশ। পরে ফের তাকে জেরা করে ২০ দিনের মাথায় রামপুরহাটের একটি কাঁদর থেকে ছাত্রীর বস্তাবন্দি টুকরো টুকরো দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। যদিও এখনও শরীরের নীচের অংশ মেলেনি। ঘটনার প্রতিবাদে আদিবাসীদের বিক্ষোভে উত্তাল ওঠে রামপুরহাট। অভিযুক্তর ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার হন তাঁরা। এদিকে দেহাংশ উদ্ধারের দশ দিনের  মাথায় ২৬ সেপ্টেম্বর শিক্ষকের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। ওইদিন বিচারক অভিযুক্তর ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। সেইমতো এদিন ফের অভিযুক্তকে আদালতে হাজির করানো হয়। 

    এদিন আদালত চত্বরে আদিবাসী সংগঠনের সদস্যরা হাজির হয়েছিলেন। হুল কমিটির কনভেনর সোম টুডু বলেন, কোর্টের প্রতি আমাদের ভরসা আছে। যতদিন না শিক্ষকের ফাঁসি হচ্ছে ততদিন আমরা রাস্তায় থাকব। আগামী শুক্রবার রামপুরহাটে ফের বড়সড় বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে আদিবাসীরা।
  • Link to this news (বর্তমান)