বালকেশ্বরী বারোয়ারি, দেবী জগদ্ধাত্রীর সিংহের পায়ের তলায় ফুটবল!
বর্তমান | ২৯ অক্টোবর ২০২৫
সংবাদদাতা, কৃষ্ণনগর: মা জগদ্ধাত্রী সিংহের উপর আসীন। এটা সবার জানা। কিন্তু কৃষ্ণনগরের এই পুজোর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য সিংহের পায়ের নীচে মহিষ অথবা হাতির ছিন্ন মস্তক থাকে না, তার পরিবর্তে থাকে একটি কালো রংয়ের ফুটবল! এই ব্যতিক্রমী প্রতিমা আজও বিস্মিত করে দর্শকদের। অনেকেই বলেন, কৃষ্ণনগরের আনন্দময়ী বালকেশ্বরী জগদ্ধাত্রী পুজোর সঙ্গে যেহেতু একদল বালকের ফুটবলের স্মৃতি জড়িয়ে তাই এমন প্রতিমা গড়া হয়। কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রীপুজো মানেই ঐতিহ্যের রং, ইতিহাসের গন্ধ ও ভক্তির মিশেল। ঐতিহ্যের অন্যতম রত্ন আনন্দময়ীতলার বালকেশ্বরী বারোয়ারি জগদ্ধাত্রী পুজো। এই পুজোর বয়স আড়াইশো বছরেরও বেশি। যুগের পর যুগ ধরে এই পুজো শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, স্থানীয় সংস্কৃতির গর্বও বটে। স্থানীয় প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তৎকালীন সময়ে আনন্দময়ী তলার কিছু ফুটবলপ্রেমী বালক খেলার শেষে জগদ্ধাত্রী পুজোর আলোচনা শুরু করেছিলেন। রাজবাড়ির একদম নিকটস্থ জায়গা হওয়ায় তাঁরাও সিদ্ধান্ত নেয় জগদ্ধাত্রী পুজো করার। সেই শুরু, সেই থেকে আজও প্রথা মেনে মায়ের পুজো হয়ে আসছে এখানে। যেহেতু বালকদের দ্বারা এই পুজো শুরু হয়েছিল, তাই মায়ের নাম হলো বালকেশ্বরী। আমরা দেখি, কৃষ্ণনগর শহরে বিভিন্ন জগদ্ধাত্রী নানা নামে পরিচিত। তার সূত্রপাত কিন্তু এই আনন্দময়ীতলা বালকেশ্বরী বারোয়ারী থেকেই। বারোয়ারি সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, প্রতিবছর পুজোর দিনে সকাল থেকেই ভিড় জমে যায় মণ্ডপে। প্রতিমায় থাকে বিশেষ বৈশিষ্ট্য। মা সিংহাসনের উপর অধিষ্ঠিতা। মায়ের বাহন সিংহের পায়ের তলায় মহিষের ছিন্ন মস্তকের বদলে রয়েছে ফুটবল। যেহেতু ফুটবল খেলার শেষে আলোচনার মাধ্যমে পুজো শুরু হয়েছিল, তাই যুব সম্প্রদায়ের উন্মাদনার প্রতীকী চিহ্ন হিসাবে ও জগদ্ধাত্রী আরাধনার সূচনার অনুষঙ্গ হিসাবে সিংহের পায়ের তলায় ওই বল রাখা হয়। আবার অনেকে ভাবেন, সূচনালগ্নে বালকবৃন্দ বলটিকে নিখিল বিশ্ব হিসাবে কল্পনা করেছিল। এই বিশ্বাসে যে যিনি জগতের ধাত্রী, তিনিই জগদ্ধাত্রী। তিনিই তো মা বালকেশ্বরী।