নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: পুজোর ছুটিতে প্রায় এক মাস বন্ধ সরকারি অফিস, স্কুল, আদালত। কর্মসূত্রে বাইরে থাকা অনেক মানুষজনও ফিরে এসেছেন প্রিয়জনের কাছে। কিন্তু তাতেই বেঁধেছে গোলমাল। মাসখানেকের দাম্পত্যেই ফাটল চওড়া হয়েছে সংসারে। এমনকি মান-অভিযান, ক্ষোভ, রাগ, ঝগড়ার পরিসর পেরিয়ে আলাদা হওয়ার মতো চরম সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছেন অনেকে। আর তাই সোমবার সাড়ে ১০টায়, পুজোর ছুটির এক মাস পর পূর্ব মেদিনীপুর ডিস্ট্রিক্ট ফ্যামিলি কোর্ট খুলতেই ডিভোর্সের মামলা দায়েরের হিড়িক পড়ে গেল। গত ৪৮ ঘণ্টায় মোট ৩২টি বিবাহ বিচ্ছেদের মামলার আর্জি! তমলুকের ওই আদালতের কর্মীরাই বলছেন, সোমবার ১৫টি এবং মঙ্গলবার আরও ১৭টি ডিভোর্স কেস জমা পড়েছে। অতীতে কখনও এমনটা হয়েছে বলে শুনিনি।
শুধুমাত্র তমলুক মহকুমার এলাকার বাসিন্দারা পূর্ব মেদিনীপুর ডিস্ট্রিক্ট ফ্যামিলি কোর্টে মামলা দায়ের করেন। এই মুহূর্তে ওই আদালতে সাড়ে তিন হাজার ডিভোর্স, খোরপোশ এবং সন্তানের আইনি অধিকারের মামলা ঝুলছে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে পুজোর ছুটি পড়েছিল। বন্ধ ছিল ওই আদালতও। সোমবার কোর্ট খুলতেই ফাইল হাতে বিচ্ছিন্ন হতে চাওয়া বিবাহিতদের এই লাইন দেখে আদালতের কর্মীরাও অবাক হয়ে যান। সোমবার মিউচুয়াল কেস অর্থাৎ স্বামী ও স্ত্রী দু’জনেই আলাদা হতে আগ্রহী এমন আর্জি ছিল চারটি। বাকি ১১টি কনটেস্টিং ডিভোর্স কেস। অর্থাৎ স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে একজন বিচ্ছেদ চাইলেও অপরজন চাইছেন না। মঙ্গলবার আরও চারটি মিউচুয়াল কেস এবং ১৩টি কনটেস্টিং ডিভোর্স কেস।
পাঁশকুড়ার উত্তর মেচগ্রামের এক শিক্ষক সোমবার ডিভোর্স মামলা দায়ের করেছেন। তিনি কর্মসূত্রে মুর্শিদাবাদে থাকেন। পুজোর সময় স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে থাকাকালীন সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে। একই কাহিনি শুনিয়েছেন বিচ্ছেদের আর্জি জানাতে ময়নার কিয়ারানা এবং আঁধারিয়া গ্রাম থেকে দুই যুবকও। তাঁদের মধ্যে একজন আন্দামান এবং অপরজন কেরলে থাকেন। পুজোর ছুটিতে বাড়িতে এসে স্ত্রীর সঙ্গে প্রবল ঝামেলা। কোলাঘাটের ভোগপুরের এক গৃহবধূও সোমবার ডিভোর্স মামলা ফাইল করেছেন। স্বামী কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। বাড়ি ফিরে প্রেমিকাকে সময় দিচ্ছেন বলে অভিযোগ ওই বধূর।
সোমবার কোলাঘাটের বৃন্দাবনচক গ্রাম থেকে এক বৃদ্ধ ছেলেকে নিয়ে ফ্যামিলি কোর্টে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘স্ত্রী পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়েছে। এই সন্দেহে বাপের বাড়ি পাঠাতে চায়নি ছেলে। এতে দু’জনের মধ্যে তুমুল ঝামেলা। শেষপর্যন্ত ওরা বিবাহিত সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
শুধু শিক্ষক কিংবা সাধারণ চাকুরে নন, গত দু’দিনে ডিভোর্স চেয়ে পূর্ব মেদিনীপুর ডিস্ট্রিট ফ্যামিলি কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন বিচারক থেকে সরকারি অফিসার ও কর্মীরাও। পুরুলিয়ার এক বিচারক কোলাঘাটে বিয়ে করেছেন। তাঁর ডিভোর্স মামলাও এই আদালতে চলছে। অধিকাংশেরই বক্তব্য এক, পরকীয়ার কারণেই ভাঙছে সংসার। আর সেই পরকীয়া সম্পর্ক তৈরিতে অনুঘটকের কাজ করছে ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ। মোদ্দা কথা, বিয়ে ভাঙার ক্ষেত্রে আসল ভিলেন স্মার্টফোন!