নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: আশঙ্কাই সত্যি হলো! কৃষ্ণনগর পুরসভার বোর্ড ভেঙে দিল পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর। ইতিমধ্যেই সেই নির্দেশিকা জেলায় পৌঁছেছে। সেখানে কৃষ্ণনগর পুরসভার বর্তমান বোর্ড বাতিল করার পাশাপাশি মহকুমা শাসককে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দিতে বলা হয়েছে। পরবর্তী নির্বাচিত বোর্ড গঠন না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসকই চালাবেন পুরসভা। ফলে কৃষ্ণনগর শহরের ‘কাউন্সিলার’ পদ হারালেন জনপ্রতিনিধিরা।
নির্দেশিকার পাশাপাশি এসেছে পৃথক একটি চিঠিও। সেখানে শহরের নাগরিক পরিষেবা ভেঙে পড়া এবং উন্নয়নের কাজ স্তব্ধ করে রাখার জন্য কৃষ্ণনগর পুরসভাকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছে দপ্তর। রাজনৈতিক মহলের দাবি, দলীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব জিইয়ে রেখে, দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে গিয়ে নিজেরাই নিজেদের পায়ে কুড়ুল মেরেছেন তৃণমূলের কাউন্সিলারদের একাংশ।
এনিয়ে জেলাশাসক অনীশ দাশগুপ্ত বলেন, ‘পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর থেকে আমাদের কাছে চিঠি এসেছে। নির্দেশানুযায়ী কৃষ্ণনগর পুরসভার বোর্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কৃষ্ণনগর সদরের মহকুমা শাসককে পুরসভার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।’ অপসারিত চেয়ারপার্সন রীতা দাস বলেন, ‘আমাকে চক্রান্ত করে সরানো হয়েছিল। সেটা আরও একবার প্রমাণিত হল। জোর করে ক্ষমতায় দখল করেছিল ওরা। কিন্তু গত তিনমাস নাগরিক পরিষেবা ও শহরকে সচলকে রাখতে ওরা ব্যর্থ হয়েছে। তাই রাজ্য সরকার আর ওদের উপর ভরসা করতে পারছে না। তাই প্রশাসক বসানো হয়েছে।’ বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নরেশ চন্দ্র দাস বলেন, ‘এটা রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত। সরকার যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমার সেই নির্দেশ পালন করব।’
নির্দেশিকায় স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আগামী ছ’মাস মহকুমা শাসক পুরসভার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। সেইসঙ্গে বলা হয়েছে, নতুন বোর্ড গঠন না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসকই পুরসভার দায়িত্ব সামলাবেন। পুরসভায় অবৈধভাবে বাজেট পাশ এবং নানা অনিয়মের অভিযোগে এনে গত জুলাই মাসের শেষের দিকে কৃষ্ণনগর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারপার্সন রীতা দাসকে অপসারিত করা হয়। একজন কংগ্রেস এবং একজন নির্দল কাউন্সিলারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তৃণমূলের ১৩ জন কাউন্সিলার সেই অনাস্থা আনেন। যদিও তা দলের নির্দেশ উপেক্ষা করেই আনা হয়েছে। অনাস্থা আনার চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে শহরের নাগরিক পরিষেবার অচলাবস্থা নিয়ে কৃষ্ণনগর পুরসভাকে কড়া চিঠি দেয় পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর। তাতে পুরবোর্ড ভাঙার কার্যত হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছিল। সকল কাউন্সিলারকে শোকজ করে, পুরবোর্ড না ভাঙার পক্ষে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। যদিও সকল কাউন্সিলার চিঠি লিখে শোকজের জবাব দেন।
সম্প্রতি চিঠিতে পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর জানিয়েছে, শহরের ২৫ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ২২ জন কাউন্সিলারের জবাব গ্রহণ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে নদীয়ার জেলা শাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, কৃষ্ণনগর পুরসভার পরিষেবা ব্যাহত হওয়া ও অচলাবস্থা নিয়ে রিপোর্ট জমা দিতে। সেই রিপোর্টেই স্পষ্ট হয়েছে পুরবোর্ডের অচলাবস্থার কথা। রিপোর্টে উঠে এসেছে, নির্ধারিত বৈঠক আহ্বান করতে ব্যর্থ হওয়ায় কৃষ্ণনগর পুরসভার কাউন্সিলার বোর্ড কার্যত অচল হয়ে পড়ে। যা শেষ পর্যন্ত চেয়ারপার্সন অপসারণ পর্যন্ত গড়ায়। ফলে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। মৌলিক নাগরিক পরিষেবা—যেমন আবর্জনা অপসারণ, নিকাশি পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতা রক্ষা ও অভিযোগ নিষ্পত্তি একাধিক কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিন ব্যাহত হয়ে পড়ে। তাতে নাগরিক জীবনে ব্যাপক প্রভাব পড়ে এবং জনস্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। এবার প্রশাসকের ভূমিকার দিকে তাকিয়ে কৃষ্ণনগরবাসী।