সংবাদদাতা, মানকর: জগদ্ধাত্রী পুজো বললেই প্রথমেই মাথায় আসে চন্দননগরের নাম। দুর্গাপুজোর মতোই সেখানে মহাধুমধামে জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন হয়। তবে, সেরকম জাঁকজমকপূর্ণভাবে না হলেও আউশগ্রাম ও গলসি-১ ব্লকে নিষ্ঠা সহকারে একাধিক পারিবারিক জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন করা হয়। পুজোগুলি বেশ প্রাচীন এবং ঐতিহ্যমণ্ডিত। পারিবারিক এই পুজোয় রীতিনীতির মধ্যেও রয়েছে বৈচিত্র্য।
আউশগ্রামের উত্তর রামনগরের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের জগদ্ধাত্রী পুজো শতবর্ষ প্রাচীন। এই পুজোকে ঘিরে রয়েছে একাধিক রীতি। পারিবারিক পুঁথি দেখে দেবীর পুজো করা হয়। পরিবার সূত্রে জানা যায়, জমিদার কিরণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছয় কন্যা সন্তান জন্মায়। তবে, দু’জন বাদে সকলেই মারা যায়। সেই সময় কিরণচন্দ্র স্বপ্নাদেশ পান জগদ্ধাত্রী পুজো করার। কালবিলম্ব না করে কিরণচন্দ্র মাকে প্রতিষ্ঠা করেন। দেখা যায়, দেবীকে প্রতিষ্ঠা করার বছরে তাঁর প্রথম পুত্র সন্তান জন্মায়। সেই সন্তানের নাম রাখা হয় জগদীশচন্দ্র। তারপর থেকে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা বংশ পরম্পরায় এই পুজো করে আসছেন। এখানে একদিনে দেবীর সপ্তমী থেকে নবমী পুজো হয়। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত হোম করা হয়। সূর্যাস্ত হয়ে গেলে হোমে পূর্ণাহুতি দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরাই পুজো করেন। এই প্রজন্মে উৎসব চট্টোপাধ্যায় ও পুলক চট্টোপাধ্যায়রা পুজো করছেন। বাড়ির সদস্য শ্রীধর চট্টোপাধ্যায় বলেন, একসময় তালপাতার পুঁথি ধরে পুজো হতো। এই পুঁথির শেষ সংস্করণ করেছেন বংশের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য পদ্মশ্রী প্রাপক সুজিত চট্টোপাধ্যায়। এখানে দেবী মূর্তির সঙ্গে ডানদিকে থাকেন নারদ মুনি ও বামদিকে থাকেন ভোলানাথ। দেবী এখানে চতুর্ভুজা। সপ্তমী পুজোয় সাতরকম, অষ্টমীতে আটরকম ও নবমী পুজোয় নয় রকমের ভাজা নিবেদন করা হয়। মাকে নিরামিষ ভোগ দেওয়া হয়।
গলসির চাকতেঁতুল গ্রামে ২০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন জগদ্ধাত্রী পুজো হচ্ছে। নায়ক পরিবার এই পুজোর আয়োজন করেন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্বপুরুষ পূর্ণচন্দ্র নায়কের সময় দুর্গাপুজো হতো। কিন্তু বলির সময় একবার অঘটন ঘটে। মায়ের অঙ্গহানি হয়। সেই সময় দেবীমূর্তি বরাবরের জন্য নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়। পূর্ণচন্দ্র নায়কের পুত্র গিরিশচন্দ্র নায়কের আমলে আর কোনও পুজো হয়নি। পরবর্তীকালে বিশ্বনাথ নায়কের সময় আবার পুজো শুরু হয়। দুর্গার পরিবর্তে তখন থেকেই জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন হয়। কথিত আছে, মাতৃসাধক বিশ্বনাথ নায়ক স্বপ্নাদেশ পেয়ে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেন। এখানে পশু বলি হয় না। আখ বলি হয়।
মানকরে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের জগদ্ধাত্রী পুজোও নামকরা। সেখানের পুজো ঘিরেও রয়েছে নানান রীতি। দেবীকে মাংস ভাজা নিবেদন করা হয়। চট্টোপাধ্যায় পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রথমে তালপাতার ছাউনিতে পুজো হতো। বর্তমানে মন্দির সংস্কার হয়েছে। এখানে দেবীকে মাছ ও মাংস ভাজা নিবেদন করা হয়। ভাইফোঁটার দিন মাটি দিয়ে প্রতিমা গড়া শুরু হয়। শতাব্দী প্রাচীন চট্টোপাধ্যায় পরিবারের পুজো দেখতে ভিড় জমান এলাকার বাসিন্দারা।  আউশগ্রামের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের জগদ্ধাত্রী পুজো।-নিজস্ব চিত্র