প্রথম দফায় শুধুই ইনিউমারেশন ফর্ম, দিতে হবে না নথি, ব্যাখ্যা কমিশনের
বর্তমান | ২৯ অক্টোবর ২০২৫
শুভঙ্কর বসু, কলকাতা: রাজ্যে স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন বা এসআইআরের প্রথম পর্ব ইনিউমারেশন। আর তখন কোনও নথিই দেখাতে হবে না ভোটারদের। কাগজ দিতে হবে খসড়া তালিকা প্রকাশের পর। তাও যদি ওই তালিকায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম না থাকে। শুধু তাই নয়, ইনিউমারেশন ফর্ম বিতরণের পর যে সব ভোটার সেই ফর্ম জমা দেবেন না, তাঁদের ক্ষেত্রেও প্রথমেই কঠোর পদক্ষেপ করা হবে না। বিহার থেকে শিক্ষা নিয়ে এসআইআরের দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রতিটি পা মেপে ফেলতে চাইছে নির্বাচন কমিশন। তার জেরেই এই সাবধানী সিদ্ধান্ত।
সোমবার পশ্চিমবঙ্গ সহ ১২টি রাজ্যে এসআইআর ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবারই শুরু হয়েছে কাজ। এই পর্বে সব রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে পাঠানো চিঠিতে কমিশন জানিয়েছে, এসআইআরের প্রথম অর্থাৎ ইনিউমারেশন পর্বে ভোটারদের কাছ থেকে কোনও নথি চাওয়া যাবে না। শুধুমাত্র পূরণ করা ইনিউমারেশন ফর্ম জমা নিতে হবে বুথ লেভেল অফিসারদের। বিহারে কিন্তু ছিল এর ঠিক উলটো চিত্র। সে রাজ্যে ইনিউমারেশন পর্বেই ভোটারদের বয়স ও নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র (কমিশন নির্ধারিত ১১টি নথি) জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছিল কমিশন। ফলে তুমুল রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি হওয়ার পাশাপাশি ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টে এসআইআর মামলা চলাকালীন শুনানিতে বিহারের ইনিউমারেশন পর্ব নিয়ে রীতিমতো বাগযুদ্ধ দেখা গিয়েছিল আইনজীবীদের মধ্যে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, বিহার থেকে শিক্ষা নিয়েই দেশজুড়ে এসআইআরের দ্বিতীয় পর্যায়ে যথেষ্ট সাবধানী পদক্ষেপ ফেলতে চাইছে কমিশন। নয়া নিয়ম অনুযায়ী যেসব ভোটারকে (যাঁদের ক্ষেত্রে নথি জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক) প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে হবে, তাঁদের ক্ষেত্রে খসড়া তালিকা প্রকাশের পর নোটিশ ইশ্যু করবেন ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার বা ইআরওরা।
এখানেই শেষ নয়। ইনিউমারেশন ফর্ম বিতরণের পর যাঁরা সেই ফর্ম জমা দেবেন না, তাঁদের ক্ষেত্রেও প্রথমে কঠোর পদক্ষেপে নারাজ মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার। এসআইআর সংগঠিত করার ক্ষেত্রে কমিশনের পদক্ষেপে যাতে কোনও প্রশ্ন না ওঠে, সেজন্যই এই সিদ্ধান্ত। সিইওদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ভোটার কেন ইনিউমারেশন ফর্ম জমা দিচ্ছেন না, তা যাচাই বা অনুসন্ধানের দায়িত্ব থাকবে বিএলওদের কাঁধে। কমিশন জানিয়েছে, ইনিউমারেশন ফর্ম জমা না দেওয়ার সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখতে ওই ভোটাদের বাড়ি বা প্রতিবেশীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে বিএলওদের। প্রথমেই দেখতে হবে সংশ্লিষ্ট ভোটার কি অনুপস্থিত? নাকি তিনি মৃত? অন্যত্র চলে যাননি তো? এই সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার পরই ভোটারদের বুথভিত্তিক তালিকা তৈরি করতে হবে। কিন্তু তালিকার ভিত্তিতে প্রথমেই নাম বাদ দেওয়ার মতো পদক্ষেপ করা যাবে না। কমিশন জানিয়েছে, বুথভিত্তিক ওই তালিকা গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস, বিডিও অফিস সহ সংশ্লিষ্ট জেলা সদর কার্যালয়ে টাঙিয়ে দিতে হবে। শহরাঞ্চলের ক্ষেত্রে পুরসভা ও বরো অফিসগুলিতে ওই তালিকা এমনভাবে রাখতে হবে, যাতে সকলের নজরে আসে। সবশেষে ওই ভোটারদের রাজ্যভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ তালিকা সিইও অফিসের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। এক্ষেত্রেও বিহারে ঠিক ভিন্ন চিত্র দেখা গিয়েছিল। এই ধরনের কোনও পদক্ষেপ ছাড়াই সরাসরি ৬৫ লক্ষ ভোটাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার জেরে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল কমিশনকে। সে কথা মাথায় রেখেই এবার এসআইআর নিয়ে প্রথম থেকেই যথেষ্ট সাবধানী কমিশন।