প্রেমিক বিবাহিত! জানতেই লিভ-ইন সম্পর্ক ছিন্ন, বিয়ের প্রস্তাব ফেরায় তরুণী, প্রতিশোধ নিতেই গুলি, বিজয়গড় কাণ্ডে তথ্য
বর্তমান | ২৯ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: প্রেমিক বিবাহিত! জানার পরই বেঙ্গালুরুর লিভ-ইন সম্পর্ক ছিন্ন করে বেরিয়ে এসেছিলেন বিজয়গড়ের তরুণী। যোগাযোগ রাখতেন না আর। কেন সম্পর্ক ছিন্ন করল, কেন বিয়ে করবে না—আক্রোশ থেকেই তরুণীকে ‘খতম’ করার পরিকল্পনা নিয়েছিল একদা লিভ-ইন পার্টনার বিহারের যুবক রবি ভরদ্বাজ। সেই পরিকল্পনা রূপায়ন করতেই সোমবার সন্ধ্যায় বিজয়গড়ের বাড়িতে গিয়ে প্রাক্তন প্রেমিকাকে খতম করার জন্য গুলি চালিয়েছিল রবি। দেওয়ালে লেগে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়াতেই প্রাণে বেঁচে যান তার প্রাক্তন প্রেমিকা। তদন্তে নেমে চাঞ্চল্যকর এই তথ্য পেয়েছে পুলিশ। সোমবার সন্ধ্যার ওই ঘটনার পর কড়া নজরদারি শুরু হলেও, পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে গা-ঢাকা দিতে সক্ষম হয়েছে রবি। হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেনে চেপে হয় বিহারের আবাসস্থল বেগুসরাই না হলে কর্মস্থল কর্ণাটকের বেঙ্গালুরু পালিয়েছে বলে তদন্তকারীদের অনুমান। রবির খোঁজে ওই দুই রাজ্যে পুলিশের পৃথক দুটি টিম রওনা দিয়েছে।
তদন্তকারীরা বলছেন, বিজয়গড় কাণ্ডে অভিযুক্ত যুবক রবি প্রাক্তন প্রেমিকার বাড়িতে আসার দিন দশেক আগে রীতিমতো ‘রেকি’ করে গিয়েছিল গোটা এলাকা। বিজয়গড়ে ঢোকা-বেরোনোর সমস্ত রাস্তা দেখে নিয়ে তারপরই সোমবার রাতে হানা দিয়েছিল সেখানে। তদন্তে নেমে এই তথ্য হাতে এসেছে পুলিশের। বেঙ্গালুরুতে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের অফিস চালানো রবির সঙ্গে বিহারের অপরাধ জগতের কয়েকজনের পরিচয় রয়েছে। তাদের কাছ থেকেই আগ্নেয়াস্ত্র কিনেছিল বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। তরুণীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অফিসাররা জানতে পারেন, রবি তাঁর পূর্ব পরিচিত। তরুণী পুলিশকে জানিয়েছেন, চাকরির খোঁজে বেঙ্গালুরুতে গিয়েছিলেন। সেখানে একটি কোম্পানিতে যোগ দেওয়ার পর সহকর্মী রবির সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। পরে রবি নিজে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা চালু করলে, সেখানে যোগ দেন ওই তরুণীও। ধীরে ধীরে দু’জনের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। বিয়ের সিদ্ধান্তও হয়। রবির হয়ে কোম্পানির যাবতীয় কাজকর্ম বিজয়গড়ের তরুণীই দেখাশোনা করতেন। পুলিশ জানিয়েছে, এই পর্বেই বেঙ্গালুরুতে দুজনের লিভ-ইন শুরু হয়। কিন্তু পরে রবির বিভিন্ন কাজকর্ম দেখে তরুণীর সন্দেহ হয়। তার মোবাইল ঘেঁটে এক মহিলার ছবি পান। পরে ওই তরুণী জানতে পারেন, রবি বিবাহিত। বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে কেন প্রণয়ঘটিত সম্পর্কে জড়ালো, এই নিয়ে রবির সঙ্গে তরুণীর অশান্তি শুরু হয়। সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসেন ওই তরুণী। ওই সংস্থার কাজও ছেড়ে দেন। বেঙ্গালুরুতে অন্য একটি সংস্থায় চাকরি করছিলেন। কিন্তু সেখানে গিয়েও বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করে রবি। তরুণী রাজি না হওয়ায় তাঁকে বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন করতে থাকে ওই যুবক। তরুণী কাজ ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন। তারপরেও তাঁকে ফোনে উত্যক্ত করছিল রবি। নানাভাবে ভয়ও দেখায়। তদন্তে উঠে এসেছে, গুলিকাণ্ডে অভিযুক্ত রবি ট্রেনেই কলকাতা আসে। আগ্নেয়াস্ত্রটি ব্যাগে ভরে সঙ্গে এনেছিল। অভিযুক্তের মোবাইলের সূত্র ধরে জানা যায়, সোমবার ঘটনার পর সে হাওড়া স্টেশনের দিকেই গিয়েছিল।