• দীপাবলিতে দূষণ ছুঁয়েছিল দিল্লিকে, নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ পুরসভার, ছটে শব্দবাজির তাণ্ডব চললেও শহরে বাতাসের গুণমান মোটের উপর ভালো
    বর্তমান | ২৯ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কালীপুজোয় আলোর থেকেও বেশি নজর ছিল বাজিতে। ওইদিন শহরে দেদার শব্দবাজি ফেটেছিল। দীপাবলির রাতে রাজধানী দিল্লির দূষণের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দিয়েছিল কলকাতা। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) দেখে ভিরমি খেয়েছিলেন পরিবেশবিদরা। দিল্লির মতো সমান বিষ দেখা গিয়েছিল তিলোত্তমার বাতাসে। কিন্তু এক সপ্তাহ পরেই ঠিক উল্টো ছবি। দিল্লির তুলনায় তো বটেই, সারা দেশের তুলনাতেও কলকাতার একিউআই যথেষ্ট ভালো। ছটপুজো উপলক্ষ্যে শহরের বহু জায়গায় শব্দবাজি ফাটলেও তাতে বায়ুদূষণ সূচক খুব একটা মন্দ ছিল না। সোম এবং মঙ্গলবার সেই সূচক কোথাও সবুজ, কোথাও আবার হলুদ ছিল। অর্থাৎ ‘ভালো’ এবং ‘মোটের উপর ভালো’—এই দুই সূচকেই ঘোরাফেরা করেছে কলকাতার বাতাসের মান। 

    শীতকাল এলেই কার্যত গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয় দিল্লি। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বাতাসের গুণমান সূচক তলানিতে। অন্যদিকে, শীতে কলকাতার দশা প্রায় একই হয়। যদিও গত ক’বছরে কলকাতার পরিস্থিতি কিছুটা হলে উন্নত হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে পুরস্কার পেয়েছে কলকাতা। তবে চলতি বছর দীপাবলিতে রাজধানীর দূষণের সঙ্গে সমানতালে টক্কর দিয়েছে তিলোত্তমা। সেদিন গোটা কলকাতাই ছিল শব্দবাজির দখলে। 

    কালীপুজোর রাতে দেখা গিয়েছে, দিল্লির আনন্দবিহার আর কলকাতার যাদবপুরের বাতাস প্রায় একই রকম খারাপ ছিল। প্রতি ঘনমিটারে ধূলিকণা বা পিএম ২.৫-র সর্বোচ্চ পরিমাণ ছিল ৫০০ মাইক্রোগ্রাম। দিল্লির চাঁদনি চক আর কলকাতার ভিক্টোরিয়া চত্বরেও প্রতি ঘনমিটারে ধূলিকণার সর্বোচ্চ পরিমাণ ছিল ৫০০ মাইক্রোগ্রাম। দিল্লির লোধি রোডে যেখানে ধূলিকণার সর্বোচ্চ পরিমাণ ছিল ৫০০ মাইক্রোগ্রাম, সেখানে কলকাতার বিধাননগরে ছিল ৪৭০। অন্যদিকে, দিল্লি এয়ারপোর্ট চত্বরেও ৫০০, তো বালিগঞ্জে ৪৫০। কে কত খারাপের দিকে যেতে পারে, তা নিয়ে ছিল সেয়ানে সেয়ানে টক্কর। এই পরিস্থিতিতে দূষণ কমাতে বাতাসে লাগাতার জল স্প্রে এবং রাস্তায় জল দিতে শুরু করে কলকাতা পুরসভা। যদিও কলকাতা পুরসভার আধিকারিকদের ব্যাখ্যা, পরিকল্পনা করে কালীপুজোর এক সপ্তাহ আগে থেকেই প্রতিদিন জল ছিটিয়ে দূষণ কমানোর তোড়জোড় করেছি আমরা। 

    শব্দবাজির তাণ্ডবের পরেও ছটের দু’দিনে শহরে বায়ুমান সূচক মোটের উপর ভালো। সোমবার ফোর্ট উইলিয়ামে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (৯১.৬) ‘সবুজ’ ছিল। অন্যদিকে, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় অঞ্চলে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ছিল ৮২.৭৩, রবীন্দ্র সরোবরে ছিল ৫৫.৬৬। অর্থাৎ, মান ছিল সর্বত্র সবুজ। ভিক্টোরিয়া এবং বালিগঞ্জ অঞ্চলে এই সূচক ‘হলুদ’ বা মডারেট ছিল অর্থাৎ সেটিও মোটের উপর ভালো। মঙ্গলবার সামগ্রিকভাবে তিলোত্তমার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের গড় ছিল ৭৯। বিধাননগরে এদিন তা ছিল ৭৫, ফোর্ট উইলিয়ামে ৮৪, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮১, রবীন্দ্র সরোবরে ৭৭, ভিক্টোরিয়া অঞ্চলে ৮১। 

    পুরসভার জঞ্জাল সাফাই এবং কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক কর্তা বলেন, এই উৎসবের মরশুমে এবং শীতকালে শহরে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রাক্তন পুর কমিশনার ধবল জৈন আধিকারিকদের বিশেষ উদ্যোগ নিতে বলেছিলেন। যার ফল হাতেনাতে মিলেছে। এখন রোজ সকাল, বিকেল এবং রাতে কুড়িটি ওয়াটার স্প্রিংকলার এবং দু’টি মিস্ট ক্যানন শহর জুড়ে ঘুরছে। রাস্তায় জল ছিটানো থেকে বাতাসে জল স্প্রে— সবই করা হচ্ছে। গাছগুলিও ধোয়ানো হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, কলকাতার বাতাসের মান গোটা দেশে সব থেকে ভালো। কেন্দ্রীয় সরকার পুরস্কারও দিয়েছে। মাঝেমধ্যে খারাপ হলে তা নিয়ে খবর হয়। ভালো হলে কেউ বাহবা দেয় না। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, কলকাতা পুরসভার বহু উদ্যোগের সুফল এটি।
  • Link to this news (বর্তমান)