• বাংলায় একটা হলেও আসন বাড়াব, বিজেপিকে ৫০-এ নামাব: অভিষেক
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৯ অক্টোবর ২০২৫
  • বঙ্গে এসআইআর নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সুর চড়ালেন। মঙ্গলবার তিনি নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণ ছুঁড়ে দিয়ে দাবি করেছেন, ‘এসআইআর হলেও ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের আসন সংখ্যা বাড়বে। আর বিজেপির আসন সংখ্যা ৫০-এর নীচে নেমে যাবে।’

    অভিষেক অভিযোগ করেন, ‘আগে মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করে ঠিক করত কারা সরকার গঠন করবে। এখন সরকার ঠিক করছে কে ভোট দেবে। এসআইআর-এর নামে প্রকৃত ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, ২০০২ সালে এসআইআর করতে দুই বছর সময় লেগেছিল। কী জাদু কাঠি আছে যে এখন দুই মাসে ১২টি রাজ্যে একই কাজ করা হচ্ছে? এছাড়া তিনি দাবি করেন, ২০২৬-এর নির্বাচনের জন্য কৌশলগতভাবে অসমকে এসআইআর-র তালিকা থেকে বাদ রাখা হয়েছে। কারণ অসমে বিজেপি সরকার রয়েছে।

    এদিকে এনআরসি আতঙ্কে পানিহাটিতে আত্মহত্যার ঘটনাকে উল্লেখ করে তিনি অমিত শাহ এবং মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে এফআইআর-এর নয় কেন, সে বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন অভিষেক। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে অভিষেক বলেন, ‘২০২৩ সালে ট্রেলার দেখিয়েছিলাম, এবার পুরো সিনেমাটা দেখাব।’

    প্রসঙ্গত, শুক্রবার পানিহাটিতে প্রণদীপ কর নামে এক ব্যক্তির আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে অভিষেক কেন্দ্র ও নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করে বলেন, ‘প্রণদীপ করের মৃত্যুর দায় অমিত শাহ ও জ্ঞানেশ কুমারের ওপর আছে। এদের বিরুদ্ধে এফআইআর হবে না কেন? আর কত রক্ত চাইছেন, জ্ঞানেশ কুমার? আর কত রক্ত চাইছেন, অমিত শাহ?’ তিনি কেন্দ্র সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করে বলেন, ‘আজ নয় কাল, কিন্তু সরকার পাল্টাবে জ্ঞানেশবাবু। তখন দেশ ছেড়ে পালাবেন না, যেখানে যাবেন খুঁজে নিয়ে আসব।’

    এদিন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যে বলা হয়, ‘স্বচ্ছ ভোটার তালিকা আমরা চাই। কিন্তু এসআইআর-এর নামে যদি বৈধ ভোটার বাদ পড়ে এবং সাম্প্রদায়িক বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসিদ্ধির জন্য এটিকে ব্যবহার করা হয়, তা মেনে নেওয়া হবে না।’ অভিষেক অভিযোগ করেন, কেন্দ্র ও নির্বাচন কমিশন সরকারের অপচেষ্টায় বাংলাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘তারা বাংলাকে অপমান করতে চাইছে’।

    অভিষেকের আক্রমণের পাশাপাশি তিনি দেশের মানচিত্র দেখিয়ে প্রশ্ন তোলেন, বাংলাদেশি বা রোহিঙ্গারা যে রাজ্য দিয়ে প্রবেশ করতে পারে, সেখানে কেন এনআরসি করা হয়নি? পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত সংলগ্ন রাজ্যগুলিতে এনআরসি না হওয়া এবং বাংলাকে লক্ষ্যবস্তু করা— সবকিছুই তার ব্যাখ্যায় একটি পরিকল্পিত কৌশল বলে অভিষেক দাবি করেন।

    উল্লেখ্য, পানিহাটি ঘটনার পর রাজ্য রাজনীতিতে উত্তেজনা তীব্র হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সোশ্যাল মিডিয়ায় শোকবার্তা দিয়েছেন এবং কেন্দ্রকে কড়া আক্রমণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এমন মৃত্যু ভারতের সংবিধান ও গণতন্ত্রের প্রতি গভীর আঘাত।’ তৃণমূল নেতৃত্ব আজকের বক্তব্যে বারবার জোর দিয়েছেন, তাঁরা স্বচ্ছ ভোটার তালিকা চান। কিন্তু ‘এসআইআর-এর নামে ঐক্যবদ্ধভাবে ভোটারদের কর্তৃত্বহীন করার চেষ্টা চললে’ সেটির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। নির্বাচন কমিশনের তৎপরতার জেরে এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মাঝেই রাজনৈতিক ময়দান আরও উত্তাল হওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)