• পুরুলিয়ায় ‘দুয়ারে দেশি মদ’, ফোনে বার্তা যেতেই বাড়িতে হাজির দিলখুশ-দিল সে!
    প্রতিদিন | ২৯ অক্টোবর ২০২৫
  • সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ছ’শোর একটা দিলখুশ। ফোনে বার্তা যেতেই ১০ মিনিটের কম সময়ে সাইকেল নিয়ে হাজির। একটা ৫০, আরেকটা কালচিটে ১০ টাকা দিতেই সাইকেল আরোহী পকেট থেকে বার করে দেন দিলখুশ। সকাল ৬টা হোক। বা রাত ১২টার পর মদের হোম ডেলিভারি একেবারে ২৪ ঘন্টা! যদি বলা হয়, একটা ৩৭৫-র দিল সে। ওপার থেকে বলে হবে না। ক্যাপ্টেনের ১৬০ আর ১০০ আছে। দোকানে কর্মীর কাছ থেকে এই কথা শুনে ফোনেই ঝাপট। আর তারপর আধ ঘণ্টার আগেই এক সাইকেল আরোহী ঝাপট দেওয়া ওই ক্রেতার হাতে তুলে দেন ৩৭৫ মিলিলিটারের দিল সে! নগদ ৪০ টাকা হাতে নিয়ে আবার কারও বাড়িতে ওই সাইকেল আরোহী। ততক্ষণে যে দোকান থেকে ফোনে আরও অর্ডার চলে এসেছে। ঠিক এভাবেই পুরুলিয়ার সাঁওতালডিহিজুড়ে সময়ের কোনও বিধিনিষেধ ছাড়াই দেশি মদের হোম ডেলিভারি চলছে। একেবারে ঘরের ‘দুয়ারে মদ’। কিন্তু কতটা বিধিসম্মত? কতটা নয়। সে বিতর্ক চুলোয় যাক। তাই পুরুলিয়ায় মদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পরিধি বেড়ে এবার সাঁওতালডিহিতে পথে নামলেন মহিলারা।

    সোমবার রাতে সাঁওতালডিহির কাঁকি বাজারে রাস্তায় নেমে মদ বন্ধের প্রতিবাদে মিছিল করেন মহিলারা। সেইসঙ্গে একাধিক লাইসেন্সপ্রাপ্ত মদের দোকানে গিয়েও রীতিমতো চোখ রাঙায় প্রমিলা বাহিনী। কাঁকি বাজারের লাইসেন্সপ্রাপ্ত একটি মদের দোকানের কর্মীদেরকে মহিলারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “মদের দোকান খোলার যে সময় আছে সেই সময় দোকান খুলতে হবে। তার আগে দোকান খুললে তাঁরা বুঝে নেবেন বলে হুমকি দেন। অভিযোগ কাঁকি বাজারের একটি লাইসেন্সপ্রাপ্ত মদের দোকান নাকি সকাল ছ’টাতেই খুলে যাচ্ছিল। এছাড়া কাঁকিবাজার এলাকায় যে সব দেশী মদের ঠেক রয়েছে তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে বলে মিছিল থেকে আওয়াজ ওঠে।” আবগারি দপ্তরের সুপারিনটেনডেন্ট অর্ণব সেনগুপ্ত বলেন, “এই বিক্ষোভের পিছনে একটি চক্র চলছে। আমরা সব খোঁজ নিচ্ছি। যে মদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে সেগুলি সবই দেশি। আমরা চোলাই মদ একেবারে বন্ধ করে দিয়েছি বলেই এভাবে বিক্ষোভ করা হচ্ছে। তবে আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। যেখানে যা ঘটনা ঘটছে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। দোকান বন্ধ-খোলার বিষয়ে যাতে কোনও বেনিয়ম না হয় সেই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।” আবগারি দপ্তরের তথ্য বলছে, এই জেলায় দেশি মদ বলতে দিলখুশ আর দিল সে-র বিক্রি সবচেয়ে বেশি। ফি মাসে প্রায় ২৪ লক্ষ বোতল বিক্রি হয়। যার জন্য আবগারি দপ্তরের ঘরে রাজস্ব ঢোকে প্রায় ৫০ কোটি। জেলাজুড়ে মদের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন চলতে থাকলে রাজস্বে যে টান পড়বে তা মানছেন আবগারি দপ্তরের কর্তারা।

    সাঁওতালডিহি গ্রামের মহিলাদের অভিযোগ, দেশি মদ দিন রাত যে কোন সময় বাড়ি-বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। একেবারে হোম ডেলিভারি। অবিলম্বে এই মদ বন্ধ করতে হবে। তাঁদের অভিযোগ, এই মদের জন্য সংসারে কলহ লেগেই রয়েছে। পুরুষরা কার্যত সর্বশান্ত হয়ে যাচ্ছেন। ঘরে হাঁড়ি চড়ছে না। অভিযোগ, ঘরের পুরুষরা মহিলাদের মারধর করে সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে মদ খাচ্ছেন। ঝাড়খণ্ড ছুঁয়ে থাকা জঙ্গলমহলের এই জেলায় প্রায় আড়াই-তিন বছর ধরে মদের বিরুদ্ধে এমন রোষ চলছে। তবে এই প্রথম ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন ব্লকে মদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে। এর আগে ঝালদা দুই, আড়শা এই দু’টি ব্লকেই সবচেয়ে বেশি মদের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠতো। এখন ওই দুই ব্লকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পুরুলিয়া এক, জয়পুর, মানবাজার দুই, সেই সঙ্গে পাড়া ব্লকের সাঁওতালডিহিও। সোমবার সাঁওতালডিহির কাঁকি বাজারে সন্ধ্যা ৭টা থেকে মিছিল শুরু করেন মহিলারা। তারপর ৮টা নাগাদ বিভিন্ন দোকানে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। আবগারি দপ্তর সূত্রে খবর, সাধারণভাবে লাইসেন্সপ্রাপ্ত মদের দোকানগুলি সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে। কোন কোন দোকানের ক্ষেত্রে সকাল ৯টা বা রাত ১১টা রাখা হয়। আবগারি দপ্তর জানিয়েছে, এই বিধিনিষেধ কোনওভাবেই যাতে না ভাঙে। সেই বিষয়গুলি আবগারি দপ্তর দেখবে বলে গ্রামবাসীদের আশ্বাস দিয়েছে।
  • Link to this news (প্রতিদিন)