• কালীপুজোর রেশ ছটের বিধিভঙ্গেও, ঘুম উড়ল পাড়ার
    আনন্দবাজার | ২৯ অক্টোবর ২০২৫
  • আশঙ্কাই সত্যি হল আবারও। কালীপুজো এবং পরের কয়েক দিনে যে ভাবে নিষিদ্ধ বাজির শব্দ-তাণ্ডব চলেছিল, মঙ্গলবার ছটপুজোতেও তার ব্যতিক্রম হল না। কোনও কোনও পাড়ায় রাত কাঁপিয়ে ফাটল দেদার শব্দবাজি। বহু এলাকায় আবার সোমবার দিনভর তারস্বরে বাজতে থাকা মাইক, সাউন্ড বক্সের সঙ্গেই রাতে যুক্ত হল শব্দবাজির তাণ্ডব! ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আবারও দর্শকের ভূমিকায় দেখা গেল পুলিশকে। বার বার থানায় ফোন করেও সুরাহা মিলল না বহু ক্ষেত্রেই। তবে সুভাষ এবং রবীন্দ্র সরোবর কড়া হাতেই পাহারা দিল পুলিশ। শব্দ-যন্ত্রণায় নাজেহাল অনেকেরই মন্তব্য, ‘‘পুলিশ চাইলে সব পারে। দুই সরোবর রক্ষার তৎপরতাই তার প্রমাণ। বাজির ক্ষেত্রে পুলিশ তৎপর থাকে না বলেই বাজির তাণ্ডব বন্ধ হয় না।’’

    এ দিন দুই সরোবরেই ছিল কড়া পুলিশি প্রহরা। রবীন্দ্র সরোবরের মতো জাতীয় সরোবরের ১২টি গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল গার্ডরেল বসিয়ে। ছোট পথগুলিও গার্ডরেল, বাঁশ, টিন দিয়ে আটকানো ছিল। প্রতিটি গেটের বাইরে ছিলেন পুলিশের অফিসার পদমর্যাদার আধিকারিকেরা। গোটা চত্বরের দায়িত্বে ছিলেন এক জন উপ-নগরপাল পদমর্যাদার অফিসার। পূর্ব কলকাতার সুভাষ সরোবরেও একই রকম কড়াকড়ি চোখে পড়েছে। সেই দিকে কোনও গাড়ি এলেও ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।

    তবে সরোবর বন্ধ থাকলেও রাত থেকেই ভিড় শহরে তৈরি করা বিকল্প ঘাটগুলিতে। দেদার ভিড় গঙ্গার ঘাটেও। এই বিকল্প ঘাটে যাওয়ার পথেই এ দিন বিধিভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। পাড়ায় পাড়ায় গভীর রাত থেকে বাজতে থাকা মাইক, সাউন্ড বক্সের আওয়াজে ঘুম ভেঙেছে অনেকেরই। মানিকতলার বাসিন্দা এমনই এক জনের অভিযোগ, ‘‘সারা দিন কানে তালা ধরানো আওয়াজ সহ্য করতে হয়েছে। রাতেও ঘুমোনো যায়নি। থানায় ফোন করলে, এক দিন সহ্য করে নেওয়ার উপদেশ শুনতে হয়েছে।’’ বেহালার আর এক বাসিন্দার দাবি, ‘‘পরিবারের দুই বয়স্ককে নিয়ে রাতভর জেগে কাটাতে হয়েছে। ভোরের দিকে এর সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে শব্দবাজির আওয়াজ।’’

    এ দিন দেখা গিয়েছে, রাস্তা আটকে রীতিমতো শব্দবাজি বসিয়ে তাতে আগুন ধরানো চলছে। বৌবাজার চত্বরে এমন দৃশ্য দেখেও দর্শকের ভূমিকায় পুলিশ। একসঙ্গে ১২০ বার ফাটে, এমন শব্দবাজিতে আগুন ধরিয়ে উল্লাস চলেছে। তার পরে শুরু হয়েছে চকলেট বোমা ফাটানো। জোড়াবাগান এলাকায় আবার চকলেট বোমায় আগুন ধরিয়ে গাড়ি লক্ষ্য করে ছুড়ে দিতেও দেখা গিয়েছে। প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডে পুণ্যার্থীদের লরি থেকে ছোড়া চকলেট বোমা স্কুলমুখী একরত্তির সামনে গিয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। শব্দবাজির দাপট দেখা গিয়েছে ইডেন গার্ডেন্স চত্বরেও। সেখানে গঙ্গা অভিমুখে যাওয়া উৎসবমুখী জনতাকে প্রকাশ্যে চকলেট বোমা ফাটাতে দেখা গিয়েছে। সেখানে কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘দু’ঘণ্টার মতো সময় মানিয়ে নিয়েই কাজ চালাতে বলা হয়েছে।’’ তবে মানিয়ে নেওয়ার জেরে ব্যতিব্যস্ত হল নিঃশব্দ এলাকা হিসাবে চিহ্নিত হাসপাতাল সংলগ্ন চত্বরও। সেখানে বাজি ফাটাতে ব্যস্ত এক তরুণীর মন্তব্য, ‘‘হাসপাতালে শুয়ে যাঁরা, তাঁদেরও তো আনন্দ করার ইচ্ছে করে!’’ এখানেও দর্শকের ভূমিকায় পুলিশ। গেটে দাঁড়ানো এক ঊর্দিধারী বলেন, ‘‘গেট পাহারার দায়িত্বে আছি।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)