• ঝুঁকি নাকি পুরস্কার? তেজস্বী যাদবের অ্যাসিড টেস্ট
    আজকাল | ২৯ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহার বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম পর্বের ভোটগ্রহণ শুরু হতে আর মাত্র সাত দিন বাকি। এই সময়েই মহাগঠবন্ধন প্রকাশ করল তাদের যৌথ নির্বাচনি ইস্তেহার— “বিহার কা তেজস্বী প্রাণ”, যেখানে গোটা প্রচারাভিযানের ভার স্পষ্টভাবে তুলে দেওয়া হয়েছে জোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী তেজস্বী যাদবের কাঁধে।

    ইস্তেহার প্রকাশের অনুষ্ঠানও প্রতিফলিত করল গত এক মাস ধরে চলা প্রচারের মূল ভাবনা— একাধিক দলের জোট হলেও, নেতৃত্বে একমাত্র মুখ তেজস্বী। ইস্তেহারের প্রচ্ছদে তাঁর বড় ছবি, যেন ঘোষণা করছে— এই নির্বাচন শুধু তাঁর নেতৃত্বে নয়, তাঁকেই কেন্দ্র করে লড়াই।

    ২০২০ সালে রাজদ নেতৃত্বাধীন মহাগঠবন্ধন “ন্যায় অউর বদলাভ” স্লোগান নিয়ে ভোটে নেমেছিল, মূল প্রতিশ্রুতি ছিল কর্মসংস্থান। পাঁচ বছর পর, প্রেক্ষাপট অনেকটাই বদলেছে। তেজস্বী যাদব এখন শুধু বিরোধী দলনেতা নন, বরং ১৭ মাস নীতীশ কুমারের সঙ্গে সহ-শাসনের অভিজ্ঞতা নিয়েছেন। সেই সময় তিনি সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করেছিলেন, ফলে “চাকরির প্রতিশ্রুতি” এখন তাঁর প্রশাসনিক কৃতিত্ব হিসেবেও দাবি করা যাচ্ছে।তবে এবারের ইস্তেহার শুধুমাত্র চাকরির প্রতিশ্রুতিতে সীমাবদ্ধ নয়। এক পরিবারের এক চাকরির পাশাপাশি ১.২৫ কোটি নতুন কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে নারীকল্যাণ ও নারী-স্বনির্ভরতার অঙ্গীকার— যা আগে তেমনভাবে গুরুত্ব দেয়নি।

    মহিলা ভোটারদের প্রভাব অনুধাবন করেই তেজস্বী ঘোষণা করেছেন “মাই বহিন যোজনা”, যেখানে প্রতিমাসে ২,৫০০ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে মহিলাদের। পাশাপাশি, জীবিকা দিদিদের জন্য স্থায়ী চাকরি ও মাসে ৩০,০০০ টাকা বেতনের আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি— যাঁদের একটি বড় অংশ এতদিন ছিল নীতীশ সরকারের অনুগত।

    দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী পদবীর দাবিতে আন্দোলনরত চুক্তিভিত্তিক কর্মীরাও জায়গা পেয়েছেন তেজস্বীর ইস্তেহারে। তাঁদের দাবিকে সমর্থন জানিয়ে তিনি চেষ্টা করছেন এনডিএ-র মধ্যবিত্ত ভোটব্যাঙ্কে ফাটল ধরাতে।

    অন্যদিকে, কয়েকদিন আগে নীতীশ সরকার চালু করেছে “মুখ্যমন্ত্রী মহিলা রোজগার যোজনা”, যেখানে মহিলাদের এককালীন ১০,০০০ টাকা অনুদান দেওয়া হয়। তেজস্বীর ২,৫০০ টাকার মাসিক সহায়তা তার জবাব হিসেবে ধারাবাহিক আর্থিক সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।

    ইন্ডিয়া ব্লকের ইস্তেহারে শ্রমিক কল্যাণ, সংরক্ষণ বৃদ্ধি এবং সেই সংরক্ষণকে নবম তফসিলভুক্ত করার প্রতিশ্রুতিও রয়েছে— যা সংবিধানিক স্থায়িত্বের এক সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

    ২০২০ সালে তেজস্বীর প্রচার সমালোচিত হয়েছিল সংখ্যালঘু ভোটারদের প্রতি সরাসরি আবেদন না করার জন্য। বিশেষ করে সীমাঞ্চল অঞ্চলে, যেখানে আসাদুদ্দিন ওয়েইসির এআইএমআইএম রাজদের ভোট ভাগ করেছিল। এবার সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ইন্ডিয়া ব্লক সংখ্যালঘু কল্যাণে বিশেষ জোর দিয়েছে এবং বিহারে ওয়াকফ আইনের প্রয়োগ পর্যালোচনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে— মুসলিম ভোটব্যাঙ্কে পুনরায় আস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই।

    ২০২০ ছিল তেজস্বীর রাজনৈতিক অভিষেকের মঞ্চ, আর ২০২৫ তাঁর অগ্নিপরীক্ষা। জোটে একাধিক দল থাকলেও, প্রচার, স্লোগান ও বার্তা— সবকিছুই এখন তেজস্বী-কেন্দ্রিক। যদি ভোটাররা “তেজস্বী প্রাণ” গ্রহণ করেন, তবে তিনি অবশেষে পিতৃ-ছায়া থেকে বেরিয়ে বিহারের সর্বোচ্চ পদে বসতে পারেন। কিন্তু যদি না পারেন, তবে এই নির্বাচনে ব্যর্থতাই হতে পারে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় ধাক্কা। যাই হোক, ঝুঁকি ও পুরস্কার— দুটোই এখন একমাত্র তেজস্বী যাদবের।
  • Link to this news (আজকাল)