'পাকা ধানে মই', ঘূর্ণিঝড় মান্থার জেরে ভারী বৃষ্টি বাংলায়, বিপুল পরিমাণ ফসল নষ্ট, মাথায় হাত কৃষকদের ...
আজকাল | ২৯ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: মঙ্গলবার রাতে অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে আছড়ে পড়েছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মান্থা। উপকূল ছাড়িয়ে সে রাজ্যের ভিতরেও প্রবেশ করেছে। এই ভারী বৃষ্টির ফলে পাকা ধান নষ্টের আশঙ্কা রয়েছে। বুধবার সকাল থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় শুরু হয়েছে তুমুল বৃষ্টি। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়াও বইছে। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
প্রশাসনের তরফে প্রতিটি মহকুমা ও ব্লকস্তরে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে এবং পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। বৃষ্টির জেরে নিম্নাঞ্চলে জল জমার আশঙ্কা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মান্থার প্রভাবে ইতিমধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবনের উপকূল তীরবর্তী এলাকায় শুরু হয়েছে মুষলধারে বৃষ্টি। অকাল বৃষ্টিতে মাথায় হাত ধান চাষীদের। দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূল তীরবর্তী এলাকায় বোরো ধান ব্যাপক ক্ষতি। জমিতেই নষ্ট হলো কয়েকশো বিঘার ফসল।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূল তীরবর্তী এলাকার সাগর, নামখানা, পাথর প্রতিমা, গোসাবা, ক্যানিং জয়নগর, ডায়মন্ড হারবার সহ একাধিক জায়গায় এই সময় বোরো ধান চাষ করেন কৃষকেরা। ঘূর্ণিঝড় মান্থার প্রভাবে, ঝোড়ো হওয়ার ফলে ধান গাছ শুয়ে পড়েছে মাঠে। অতিবৃষ্টির ফলে ধান গাছের গোড়াতে জমতে শুরু করেছে জল। আর এই জমা জলের কারণে মাঠে নষ্ট হবে ফসল, এমনটাই আশঙ্কা এলাকাবাসীদের।
ঘূর্ণিঝড়ের ফলে উপকূল তীরবর্তী এলাকায় মাটির নদী বাঁধগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এলাকা প্লাবিত হওয়ার দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন এলাকার মানুষেরা। এ বিষয়ে সাগরদ্বীপের বাসিন্দা তরুণ মাইতি জানান, 'ইতিমধ্যেই ঘূর্ণিঝড় মান্থার প্রভাব পড়তে শুরু করে দিয়েছে আমাদের এই এলাকায়। অতিবৃষ্টির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ধান চাষ। এবং আমাদের দুশ্চিন্তার অন্যতম কারণ মাটির নদী বাঁধ। সমুদ্র যদি উত্তাল হয়ে যায় তাহলে মাটির নদী বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হতে পারে। নদী কিংবা সমুদ্রে নোনা জল ঢুকতে পারে। গ্রামের মধ্যে নষ্ট হবে ফসল।'
ইতিমধ্যে ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। মৎস্যজীবীদের মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। মৎস্যজীবীরা উপকূলে ফিরে এসেছেন। তিনি জানিয়েছেন, 'সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক এবং মৎস্যজীবীদের পাশে দাঁড়াক রাজ্য সরকার।' এ বিষয়ে এক কৃষক অরবিন্দু মণ্ডল জানান, 'ধান গাছের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। অতিবৃষ্টির কারণে মাঠের ধান মাঠেই নষ্ট হয়েছে। ধান গাছের গোঁড়াতে জমা জল থাকার কারণে নষ্ট হয়েছে ফসল। কী হবে বুঝতে পারছি না।'
এ বিষয়ে এক কৃষক সরজ গুহ তিনি জানান, 'অকাল বৃষ্টির কারণে সমস্ত ধান গাছ মাঠে শুয়ে পড়েছে। সেই ধান আমরা আর পাব না। মাঠেই নষ্ট হল ফসল। ধানের পাশাপাশি সবজি চাষেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এই অকাল বৃষ্টির কারণে সবজি গাছের গোরাতে জমা জলের কারণে বিভিন্ন রকমের সবজির গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কী হবে বুঝে উঠতে পারছি না।'
দিঘা, তাজপুর ও মন্দারমণি সহ সমুদ্র তীরবর্তী এলাকাগুলিতে সকাল থেকেই চলছে প্রশাসনের মাইকিং। পর্যটকদের সমুদ্রে নামার ক্ষেত্রে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি ঘাটে দড়ি বেঁধে দেওয়া হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি ঘাটে ব্যারিকেড বসানো হয়েছে। সমুদ্রের জল ফুঁসছে। উত্তাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরবর্তী অঞ্চলে। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টা বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আজ বুধবার দক্ষিণবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এই চার জেলায় হলুদ সর্তকতা জারি রয়েছে। পাশাপাশি কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। সঙ্গে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিমি বেগে দমকা ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। জারি রয়েছে হলুদ সর্তকতা।
আগামিকাল বৃহস্পতিবার বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, পূর্ব বর্ধমান, পুরুলিয়ায় ভারী বৃষ্টির হলুদ সতর্কতা রয়েছে। এই জেলাগুলিতে ৭ থেকে ১১ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে। কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতে বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি, দমকা ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। জারি রয়েছে হলুদ সর্তকতা। আগামী শুক্রবার শুধুমাত্র বীরভূম ও মুর্শিদাবাদে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এই দুই জেলায় হলুদ সর্তকতাও রয়েছে। আগামী শনিবার থেকে সোমবারের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির দাপট কমে যাবে। বিক্ষিপ্তভাবে হালকা বৃষ্টি হতে পারে।