পূর্বাভাস মতো বুধবার সকাল থেকেই আকাশের মুখভার। গতকাল ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হয়েছিল কলকাতা-সহ জেলায় জেলায়। দফায় দফায় বৃষ্টি হয় দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে। বুধবার সকালে থেকেই ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’র প্রভাবে কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায় নামল বৃষ্টি। একাধিক জেলায় চলতি সপ্তাহ জুড়েই ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। জারি রয়েছে সতর্কতাও। এমনকী কয়েকটি জেলায় অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতাও রয়েছে।
অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’ মঙ্গলবার রাতেই অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে আছড়ে পড়ে। আবহাওয়া দপ্তরের খবর অনুসারে, কাকিনাড়ার কাছাকাছি মছলিপত্তনম ও কলিঙ্গপত্তনমের মধ্যে ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং পরবর্তী তিন থেকে চার ঘণ্টা ধরে চলে তার তাণ্ডব। ঝড়ের সময় বাতাসের গতি ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার ছিল। দুর্যোগে প্রাণহানিও হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশে জারি হয়েছে হাই অ্যালার্ট। তবে ‘মন্থা’ ইতিমধ্যেই শক্তি হারিয়ে সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। যার পরোক্ষ প্রভাবে বাংলার বেশ কিছু জেলায় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
আলিপুর সূত্রে খবর, পূর্ব-মধ্য আরব সাগরে গুজরাত উপকূলের কাছে আরও একটি শক্তিশালী নিম্নচাপ তৈরি হচ্ছে। উত্তর-পূর্ব রাজস্থানেও রয়েছে একটি ঘূর্ণাবর্ত। তবে এগুলি স্থলভাগে প্রবেশের সম্ভাবনা কম। আপাতত ‘মন্থা’ শক্তি হারিয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ছত্তিশগড়ের দিকে এগোবে বলে খবর। এর প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গে ঝড় না হলেও বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বেশির ভাগ জেলায়। উত্তাল থাকবে সমুদ্রও। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। বৃষ্টির জেরে উত্তরের পার্বত্য এলাকায় ধস নামতে পারে বলেও জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর। ক্ষতি হতে পারে ফসলের।
আগামী দু’দিন দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বুধবার কলকাতা-সহ দক্ষিণের সব জেলাতেই কমবেশি ঝড়বৃষ্টি হবে। তবে উপকূলবর্তী চার জেলা দুই চব্বিশ পরগনা এবং দুই মেদিনীপুরে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বাকি জেলাগুলিতে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ দুর্যোগের পাশাপাশি ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া বইবে। বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম এবং মুর্শিদাবাদে বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। শুক্রবারও দুই বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ ও নদিয়ায় ঝড়বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
শহর কলকাতা ও আশপাশের এলাকাগুলিতেও এদিন সকাল থেকে হালকা বৃষ্টি দেখা গিয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা জারি করেছে হাওয়া অফিস। দমকা হাওয়াও বইতে পারে। বুধবার সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিক তাপমাত্রার থেকে ৪.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। গতকাল, মঙ্গলবার বিকেলে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিক তাপমাত্রার থেকে ২.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৫৭ থেকে ৯৪ শতাংশ। আগামী ২৪ ঘন্টায় কলকাতায় তাপমাত্রা থাকবে ২৬ ডিগ্রি থেকে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। বৃষ্টির পরিমাণ ০.৬ মিলিমিটার।
উত্তরবঙ্গেও ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আজ, বুধবার থেকেই বৃষ্টি হবে উত্তরের পাবর্ত্য অংশের জেলাগুলিতে। বৃহস্পতিবার ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে মালদহ, উত্তর দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং ও দার্জিলিং জেলায়। উত্তরের অন্যান্য জেলাগুলিতে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে শুক্রবার থেকে উত্তরের সব
জেলাতেই বৃষ্টির পরিমাণ অনেকটাই বাড়বে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা থাকছে দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহারে। এইসব জেলাগুলিতে কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলে ধসের আশঙ্কাও রয়েছে। শনিবার বৃষ্টির পরিমাণ কমবে। বিক্ষিপ্তভাবে দু-এক জায়গায় বজ্রবিদ্যুৎ বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকছে। রবিবার থেকে আবহাওয়ার উন্নতি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। উজ্জ্বল আকাশ থাকবে বলে খবর।