কলকাতায় রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ভজন লাল শর্মা, জন্মভূমির অবদান নিয়ে প্রচার চালাতে প্রবাসী রাজস্থানীদের আহ্বান
দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৯ অক্টোবর ২০২৫
মঙ্গলবার কলকাতায় এসেছিলেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ভজন লাল শর্মা। কলকাতায় অনুষ্ঠিত একটি প্রবাসী রাজস্থানী সম্মেলনে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী ভজন লাল। বাংলার অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবাসী রাজস্থানীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে সম্মেলনে জানান রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ভোজন লাল শর্মা। রাজস্থানের সংস্কৃতি ধরে রাখার জন্য প্রবাসী রাজস্থানীদের ভূয়সী প্রশংসাও করেন তিনি। তাঁদের এই কাজের জন্য রাজ্যের যুবসমাজ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হবে বলেও মত প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজস্থান ফাউন্ডেশনের বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন রাজ্য এবং দেশে ২৬টি শাখা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন ভজন লাল। জন্মভূমি থেকে দূরে থাকা সত্ত্বেও, প্রবাসী রাজস্থানীরা তাদের ঐতিহ্য, রীতিনীতি এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ বজায় রেখেছে বলে গর্ব প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বিশ্বজুড়ে বসবাসকারী রাজস্থানীদের কর্মভূমি এবং জন্মভূমির মধ্যে মেলবন্ধন আরও মজবুত করতে ১০ ডিসেম্বর জয়পুরে প্রবাসী রাজস্থানী দিবসের আয়োজন করা হয়েছে। প্রবাসী রাজস্থানীদের কৃতিত্ব উদযাপন এবং জন্মভূমির সঙ্গে তাঁদের সংযোগ আরও গভীর করার প্রচেষ্টা করা হবে এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।
সকল প্রবাসী রাজস্থানীকে আসন্ন প্রবাসী রাজস্থানী দিবসে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ভজন লাল শর্মা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে একটি গতিশীল, বিনিয়োগকারী-বান্ধব পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যার ফলে শিল্প, বাণিজ্য এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। তিনি প্রবাসী রাজস্থানীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পর্যটন এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে রাজস্থানের উন্নয়নে অংশীদার হতে উৎসাহ দেন।
বর্তমানে রাজস্থান দেশের শীর্ষস্থানীয় টেক্সটাইল হাবে পরিণত হয়েছে। প্রায় ১,৫০০ টিরও বেশি কারখানা রয়েছে। পলিয়েস্টার ভিসকস সুতা, পশমের বৃহত্তম উৎপাদনকারী এবং তুলা উৎপাদনে চতুর্থ স্থানে রয়েছে রাজস্থান। প্রায় ৮৫টি খনিজ পদার্থ পাওয়া যায় রাজস্থানে। দস্তা, সীসা, রূপা, মার্বেল এবং বেলেপাথর উৎপাদনে দেশের মধ্যে শীর্ষ স্থানীয় রাজ্য রাজস্থান। সংসদ ভবন থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন পর্যন্ত রাজস্থানের পাথরের ঐতিহ্য অতুলনীয়।
সৌরশক্তি উৎপাদনেও রাজস্থান ভারতের মধ্যে প্রথম বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ভজন লাল শর্মা। রাজস্থানের এইচপিসিএল রিফাইনারি শীঘ্রই চালু হতে চলেছে। রাজস্থান দ্রুত ভারতের হাইড্রোকার্বন এবং পেট্রোকেমিক্যাল হাব হয়ে উঠবে। প্রবাসী রাজস্থানীদের রাজ্যে বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী। পর্যটন শিল্প রাজস্থানের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ বলেও এদিন সম্মেলন থেকে মত প্রকাশ করেন ভজন লাল।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গত বছর ডিসেম্বরে রাইজিং রাজস্থান গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্ট সামিটের সময়, রাজ্য সরকার ৩৫ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। যার মধ্যে ৭ লক্ষ কোটি টাকার প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। রাজস্থান বিনিয়োগ এবং ব্যবসা সহজীকরণের প্রচারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ২২টি নতুন নীতি বাস্তবায়িত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
রাজস্থান ইনভেস্টমেন্ট প্রোমোশন স্কিম (RIPS) ২০২৪ এর অধীনে, বিনিয়োগকারীদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় আর্থিক প্রদান করছে যা সবুজ উন্নয়ন, রপ্তানি প্রচার এবং দক্ষতা উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নগর উন্নয়ন ও প্রতিমন্ত্রী (স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত) শ্রী ঝবর সিং খাড়া বলেছেন, সরকার টাউনশিপ নীতির মতো উদ্যোগের মাধ্যমে টেকসই এবং সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন এবং পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের উপর জোর দিচ্ছে।
এই প্রচেষ্টাগুলিতে প্রবাসী রাজস্থানীদের আরও সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, বিনিয়োগ ও উন্নয়নে প্রবাসী ভারতীয়দের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি উন্নত রাজস্থান গড়ে উঠবে। এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী সমাজসেবার সঙ্গে যুক্ত প্রবাসী রাজস্থানীদের সম্মানিত করেন।
রাজস্থান ফাউন্ডেশনের একটি বইও প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী ভোজন লাল। এই অনুষ্ঠানে রাজস্থানের সৈনিক কল্যাণ বোর্ডের চেয়ারম্যান শ্রী প্রেম সিং বাজোর, রাজস্থান সরকারের শিল্প ও বাণিজ্যের প্রধান সচিব শ্রী অলোক গুপ্তা, সিআইআই পূর্ব অঞ্চলের চেয়ারম্যান শ্রী শাশ্বত গোয়েঙ্কা, রাজস্থান ফাউন্ডেশন কলকাতা চ্যাপ্টারের সভাপতি শ্রী সন্তোষ কুমার পুরোহিত এবং রাজ্য সরকারের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।