গামছা, কার্ডবোর্ডে বাড়িতেই তৈরি ১০ ফুটের জগদ্ধাত্রী, তাক লাগাল চুঁচুড়ার স্কুলছাত্র সৌমজিৎ
প্রতিদিন | ২৯ অক্টোবর ২০২৫
সুমন করাতি, হুগলি: জগদ্ধাত্রী পুজোয় আলোকমালায় সেজে উঠেছে চন্দননগর। পুজোর দিনগুলিতে দর্শনার্থীদের ভিড়। নিয়ম-নীতি মেনে চলছে পুজো। চুঁচুড়া পুরসভার সৌমজিতের বাড়িতেও পুজোর ব্যস্ততা। তবে এখানে প্রতিমার মৃন্ময়ী রূপ নয়। ওই বাড়ির প্রতিমা গামছা, কার্ডবোর্ড, আর্ট পেপার দিয়ে তৈরি। আর সেই প্রতিমা তৈরি করেছে সৌমজিৎ নিজেই।
চুঁচুড়া পুরসভার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভাগীরথী লেনের বাসিন্দা স্কুলপড়ুয়া সৌমজিৎ মণ্ডল। ওই এলাকাতেও ধুমধাম করে জগদ্ধাত্রী পুজো হয়। ছোট থেকে জগদ্ধাত্রী ঠাকুর দেখতে বিভিন্ন জায়গায় যায় সৌমজিৎ। আর সেই ঠাকুর দেখার পরেই ওই পড়ুয়া ভেবেছিল, নিজে হাতে ঠাকুর বানালে কেমন হয়? যেমন ভাবা তেমন কাজ। গত তিন বছর আগে প্রথম সে অনেক চেষ্টার পরে জগদ্ধাত্রী ঠাকুর তৈরি করেছিল। সেবার কাগজ দিয়ে ওই প্রতিমা তৈরি করা হয়। তারপর থেকে প্রতি বছর নিজে হাতেই মূর্তি বানায় সে।
এবারও অন্যথা হয়নি। এই নিয়ে তিনবার সৌমজিৎ দেবীর মূর্তি তৈরি করেছে। চলতি বছর প্রায় ১০ ফুট উচ্চতার প্রতিমা বানিয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। ওই স্কুল পড়ুয়ার তৈরি প্রতিমার এবারের থিম ‘বাংলার শিল্পকলা মা জগদ্ধাত্রী’। এবার আর কেবল কাগজ নয়, একাধিক জিনিসপত্র ব্যবহার করা হয়েছে প্রতিমা তৈরিতে। দেবী জগদ্ধাত্রীর মূর্তি গড়তে প্রায় পাঁচ থেকে ছ’টি গামছা ব্যবহার হয়েছে। তাছাড়াও থার্মোকল, কার্ডবোর্ড, আর্ট পেপার ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যবহার হয়েছে রং-তুলির। দেবীকে সাজানো হয়েছে একটি শাড়ি ও বেনারসি ওড়না দিয়ে। দেবীর পিছনের চালচিত্র তৈরি করা হয়েছে নিষ্ঠার সঙ্গেই। পটচিত্র দিয়ে ওই চালচিত্র তৈরি হয়েছে বলে খবর।
নিতান্ত সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে সৌমজিৎ। ছোট থেকেই আঁকা ও হাতে-কলমে বিভিন্ন জিনিস বানানোর প্রতি তার ঝোঁক। এমনই জানিয়েছেন তার বাবা-মা। আগে কাগজ দিয়ে দুর্গা, লক্ষ্মী এবং সরস্বতীর মূর্তি তৈরি করেছে সে। পরে জগদ্ধাত্রী মূর্তি তৈরির পরিকল্পনা করে ওই স্কুলছাত্র। সৌমজিতের বাবা সুভাষচন্দ্র মণ্ডল বলেন, “ছেলের হাত ধরেই আমাদের বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু হয়েছে। ছেলে নিজেই মূর্তি তৈরি করে পুজো করবে বলেছিল। আমরা বাধা দিইনি।” কিন্তু পড়াশোনার চাপ রয়েছে তার। পড়াশোনা করে কখন এই মূর্তি বানাল সে? জানা গিয়েছে, এই কাজের জন্য পড়াশোনার কোনও খামতি দেখায়নি সে। রাত জেগে এই মূর্তি তৈরি করেছে সৌমজিৎ। এবার এই মূর্তি বানাতে দুই সপ্তাহ সময় লেগেছে বলে খবর।
শিল্পী সৌমজিৎ কী বলছে এই গোটা বিষয়ে? মৃদু হেসে সে বলে, “আমি নিজের মতো করেই পুজো করি। বাড়িতে মাটির মূর্তি তৈরি করা বেশ কঠিন। তবে কাগজের মূর্তি তৈরি করা সহজ।” পুজোর প্রস্তুতিও বাড়িতে হয়েছে। নির্দিষ্ট, নীতি-নিয়ম মেনে পুজো চলছে বাড়িতে। পুজো উপলক্ষে আত্মীয়স্বজন থেকে প্রতিবেশীরাও উপস্থিত হচ্ছেন। সৌমজিৎকে নিয়ে গর্বিত বাবা-মা।