• জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার ভারত, তাপপ্রবাহে ব্যাপক ক্ষতি, ল্যানসেট জার্নালের রিপোর্টে চাঞ্চল্য
    এই সময় | ২৯ অক্টোবর ২০২৫
  • জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার গোটা বিশ্ব। ভারতের অবস্থা কী, সম্প্রতি সে ব্যাপারে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করল ল্যানসেট। ওই জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, উষ্ণতার নিরিখে ২০২৪ সাল ছিল রেকর্ড সৃষ্টিকারী এক বছর। যার জেরে ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ভারত-সহ বিশ্বের একাধিক দেশ। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে একজন ভারতীয় বছরে গড়ে প্রায় ২০ দিন তাপপ্রবাহের (heat wave) শিকার হয়েছেন।

    ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালে অত্যধিক গরমের ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শ্রমদিবসের উপর। অত্যধিক গরমের কারণে বছরে মোট ২৪৭ বিলিয়ন সম্ভাব্য কাজের সময় বা শ্রমঘণ্টা নষ্ট হয়েছে। এই ক্ষতি প্রতি ব্যক্তি পিছু প্রায় ৪২০ ঘণ্টা কাজের সময় হারানোর সমতুল্য।

    গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ১৯৯০-৯৯ দশকের তুলনায় ২০২৪ সালে শ্রমঘণ্টা নষ্টের পরিমাণ ১২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই তথ্য স্পষ্ট করে যে, জলবায়ু সংকটের জেরে দেশের অর্থনীতিতে কর্মীদের কাজের ক্ষমতা হ্রাস ক্রমশ গুরুতর হচ্ছে।

    'দ্য ল্যানসেট কাউন্টডাউন অন হেলথ অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ' শীর্ষক প্রতিবেদন অনুসারে, এই ক্ষতির ৬৬ শতাংশ হয়েছে কৃষি খাতে (agriculture) এবং ২০ শতাংশ হয়েছে নির্মাণ শিল্পে (construction)। প্রবল উষ্ণতার কারণে শ্রম ক্ষমতা হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে ২০২৪ সালে ভারতের আয়ের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৯৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ১৭১ হাজার কোটির বেশি)।

    লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজের নেতৃত্বে ৭১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় রাষ্ট্রপুঞ্জের ১২৮ জন বিশেষজ্ঞের একটি দল ল্যানসেট কাউন্টডাউন ২০২৫-এর বার্ষিক সমীক্ষা রিপোর্ট তৈরি করেছে। রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, তাপপ্রবাহের ফলে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে, যার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে জনজীবনের উপরে।

    বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির উপরে মানুষের নির্ভরতা ক্রমশ বাড়ছে। এমনকী, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে ব্যর্থ হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। যার জেরে ঝুঁকির মুখে পড়ছে মানুষের স্বাস্থ্য এবং জীবিকা। ল্যানসেট জার্নালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৯০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তাপপ্রবাহজনিত মৃত্যু ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ল্যানসেট জার্নালের রিপোর্টে স্পষ্ট লেখা হয়েছে, ‘২০২৪ সালে গড়ে একজন ভারতীয় বছরে ১৯.৮ দিন তাপপ্রবাহের শিকার হয়েছেন।’

    ল্যানসেট জার্নালের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, ২০২০-২০২৪ সালের মধ্যে ভারতে অগ্নিকাণ্ড থেকে হওয়া দূষণের ফলে বছরে গড়ে ১০,২০০ মৃত্যু ঘটেছে—যা ২০০৩-২০১২ সালের চেয়ে ২৮ শতাংশ বেশি। এই মৃত্যুর ৪৪ শতাংশ কারণ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। পাশাপাশি, অন্যান্য কারণে ২.৬৯ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

    শ্রী রামচন্দ্র ইনস্টিটিউট অফ হায়ার এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (SRIHER), চেন্নাই-এর ডিন (রিসার্চ) এবং WHO-কোলাবোরেটিং সেন্টারের পরিচালক ডক্টর কল্পনা বালাকৃষ্ণান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘রান্নার জ্বালানির ক্ষেত্রে এমন কিছু ব্যবহার করতে হবে, যা থেকে কম দূষণ হয়।’ তামিলনাড়ু জলবায়ু পরিবর্তন মিশনের গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য ডক্টর স্বামীনাথন জানিয়েছেন, ধসের মতো অন্যান্য দুর্যোগের ক্ষেত্রে প্রাথমিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থার দিকে নজর দিতে হবে। তাহলে অনেক মৃত্যু এড়ানো যাবে।

  • Link to this news (এই সময়)