আজকাল ওয়েবডেস্ক: মধ্যপ্রদেশের ছত্রপুর জেলায় এক অবিশ্বাস্য ঘটনা সামনে এসেছে, যা গোটা এলাকায় আলোচনার ঝড় তুলেছে। ঘটনাটি যেন হুবহু সাম্প্রতিক হরিয়াণভি ছবি ‘সাওরি’–র কাহিনি মনে করিয়ে দেয়। এক দরিদ্র পরিবার নিজের ছেলের বিয়ের জন্য ৫০ হাজার টাকায় ‘মেয়ে’ কিনে আনে, কিন্তু পরে জানা যায় — নববধূ আসলে একজন হিজড়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুকরু অহিরওয়ার নামের এক শ্রমিক তাঁর ছোট ছেলের বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছায় দীর্ঘদিন ধরে চিন্তিত ছিলেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি আর আগের মতো কাজ করতে পারছিলেন না। সংসার টানতে কষ্ট হচ্ছিল। আত্মীয়-স্বজনরা তাঁকে পরামর্শ দেয়, ছেলের বিয়ে দিয়ে দায়িত্ব হস্তান্তর করে দিন। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে উপযুক্ত মেয়ে পাওয়া যাচ্ছিল না।
ঠিক সেই সময় এক আত্মীয় জানান যে, ছত্তীসগঢ়ে এক “ভালো মেয়ে” আছে, যাকে কিছু টাকায় বিয়ে দেওয়া যাবে। দরিদ্র শুকরু আত্মীয়ের কথায় ভরসা রেখে তাঁর গ্রামের তিন বিঘা জমি বন্ধক রেখে ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করেন। সেই টাকায় ওই মেয়েকে ছত্তীসগঢ় থেকে আনা হয় এবং গ্রামের মধ্যেই ধুমধাম করে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রায় ৮০ হাজার টাকার বেশি ব্যয় হয়।
কিন্তু বিয়ের কয়েক দিনের মধ্যেই নববধূর আচরণ পরিবারকে হতবাক করে দেয়। সে প্রায়ই নিজের বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য জেদ করতে থাকে, কথা কম বলে, এবং একদিন আচমকাই বাড়ি থেকে পালিয়ে গ্রামের পাশের পাহাড়ে সারারাত লুকিয়ে থাকে। এরপর গ্রামে গুজব রটে যে “বউয়ের মধ্যে কিছু একটা গোপন আছে।”
পরবর্তীতে পরিবারের সন্দেহ বাড়তে থাকলে তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। তখনই বেরিয়ে আসে অবিশ্বাস্য তথ্য— ওই ‘মেয়ে’ আসলে একজন হিজড়ে। চিকিৎসকের রিপোর্টে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে খবর দেয়। তদন্ত শুরু হতেই গোটা ঘটনার চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শুকরুর ছেলে বিয়ের রাতেই নববধূর লিঙ্গপরিচয় নিয়ে সন্দেহে পড়ে। পরের দিন পরিবার বিষয়টি বুঝতে পেরে নববধূকে হাসপাতালে নিয়ে যায়, এবং সেখানেই সত্য প্রকাশিত হয়। তবে গ্রামের মানসম্মানের ভয়ে পরিবার পরে পুলিশে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ না করে বিষয়টি চেপে যায় এবং স্থানীয়ভাবে ‘মীমাংসা’ করে ফেলে।
এখন এই ঘটনা গোটা ছত্রপুর জেলায় আলোচনার কেন্দ্রে। সামাজিক সংগঠন ও অধিকারকর্মীরা বলছেন, এই ঘটনায় একদিকে যেমন দরিদ্র পরিবারের অসহায়তা প্রকাশ পেয়েছে, তেমনি মানবপাচার ও বিয়ের নাম করে প্রতারণা চক্রের গভীর দিকও সামনে এসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনাটি গ্রামীণ মধ্যপ্রদেশে দারিদ্র্য, বাল্যবিবাহ, ও নারীদের ক্রয়-বিক্রয়ের মতো সমস্যাগুলির বাস্তব রূপকে আবারও নগ্নভাবে সামনে এনেছে।
গ্রামবাসীদের মধ্যে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন — “কেউ একজন কিভাবে এমন প্রতারণা করতে পারল, আর সমাজ ও প্রশাসন কীভাবে এমন জালিয়াতির চক্রকে এতদিন উপেক্ষা করে এল?”
প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত শুরু হলেও এখনো পর্যন্ত কোনও গ্রেপ্তার বা বড় পদক্ষেপের খবর পাওয়া যায়নি। তবে এই ঘটনা যে গ্রামীণ মধ্যভারতের শোষণ, দরিদ্র ও অসহায়তার এক ভয়াবহ চিত্র সামনে এনেছে, তা নিয়ে সকলেরই একমত।