• ফের বিশ্বভারতীতে দুঃসাহসিক চুরি! খোয়া গেল মূল্যবান সামগ্রী ...
    আজকাল | ৩০ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিশ্বভারতীর 'হেরিটেজ কোর' এলাকায় চুরির ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়াল ক্যাম্পাসে। ‌বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী চীনা ভবনের পিছনে সম্পত্তি বিভাগের একটি স্টোর রুম থেকে শতাধিক কম্পিউটারের ১২০টি ইউপিএস ও স্টেবিলাইজার-সহ অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী চুরি হয় বলে বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে। হেরিটেজ কোর এলাকায় নিরাপত্তা বেষ্টনী সাধারণত বেশ কড়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেসরকারি সংস্থার নিরাপত্তারক্ষীরা সেখানে ২৪ ঘণ্টা অতন্দ্র পাহারা দেন। সেই নজরদারি ভেঙে তারের বেড়াজাল কেটে এভাবে চুরি হওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার ঘটনাস্থলে যায় শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ। তদন্ত শুরু করেছেন পুলিশের আধিকারিকরা। তবে লক্ষ্য করার মতো বিষয় — গুরুত্বপূর্ণ ওই এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও সিসি ক্যামেরা নেই। ফলে গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান সামগ্রী চুরি করা সহজ হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন কর্তৃপক্ষ। কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ।

    রাজ্যের একমাত্র কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বভারতী — বর্তমানে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের স্বীকৃতি পাওয়া প্রতিষ্ঠান। দেশ ও বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে পড়ুয়ারা আসেন কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে। অথচ নজরদারি ও নিরাপত্তা যে কতটা ঢিলেঢালা, এই চুরির ঘটনাই তা ফের সামনে এনে দিল বলে অভিযোগ।

    ক্যাম্পাস সংলগ্ন নির্জন রাস্তায় অতীতে ইভটিজিং, শ্লীলতাহানি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও ঘটেছে। সেই কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতন ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, ছাত্রছাত্রী, অধ্যাপক ও অন্যান্য কর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করাই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য ছিল। এই জন্যই বিশ্বভারতীতে চালু হয়েছিল ‘ওয়াচ অ্যান্ড ওয়ার্ড’ বিভাগ। ক্যাম্পাসে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় মোতায়েন করা হয়েছিল নিরাপত্তাকর্মী। তবুও একের পর এক চুরির ঘটনা রোখা যায়নি।

    ২০২৪ সালের ২৫ মার্চ, রবীন্দ্রভবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থেকেই চুরি যায় বিশ্বকবির নোবেল পদক-সহ ঠাকুর পরিবারের মূল্যবান সামগ্রী। সিবিআই তদন্ত করেও সেই নোবেল আজও উদ্ধার করতে পারেনি। তার আগে শান্তিনিকেতনের আনন্দ সদন হস্টেলের ভিতরে ঢুকে প্রাক্তন প্রেমিক অমরেশ কুন্ডুর গুলিতে খুন হন সঙ্গীত ভবনের ছাত্রী শাশ্বতী পাল। এই ঘটনায় সারা দেশে আলোড়ন পড়েছিল। ঘটনার পর সরকারি ও বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হলেও বাস্তবে সেই নজরদারি কতটা কার্যকর হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেছে।

    এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে স্থানীয় বিধায়ক এবং রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা বলেন, 'বিশ্বভারতীর নিরাপত্তায় কোথাও গাফিলতি আছে বলেই এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। আশা করব নতুন উপাচার্য এই দিকটিতে নজর দেবেন।' 

    বর্তমানে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন জায়গায় সিসি ক্যামেরা লাগানো থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে তার অধিকাংশই বিকল। এর ফলে হেরিটেজ কোরের মতো সংরক্ষিত এলাকাও নিরাপত্তাহীন। নোবেল চুরির পরেও একাধিকবার রবীন্দ্রভবন সংলগ্ন এলাকা ও ক্যাম্পাসের ভিতর থেকে রাতের অন্ধকারে মূল্যবান চন্দন গাছ কেটে পাচারের অভিযোগ উঠেছে। এই গাছ চুরির ঘটনাও বহুবার সামনে এলেও, আজ পর্যন্ত কোনও স্থায়ী সমাধান বা কঠোর নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি বলেই অভিযোগ।

    এরই মাঝে, ২০২৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের রিয়াদে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৪৫তম অধিবেশনে শান্তিনিকেতনকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। রবীন্দ্রনাথের চিন্তাধারা ও শান্তিনিকেতনের শিক্ষা-সংস্কৃতির অনন্য বৈশিষ্ট্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলেও, সেই ঐতিহ্য ও গৌরব রক্ষায় প্রশাসনিক ব্যর্থতা বারবার চোখে পড়ছে বলে অভিযোগ।

    হেরিটেজ কোর এলাকায় এই চুরির ঘটনায় প্রশাসনিক গাফিলতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলেই মনে করছেন সকলে। শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। তবে এই ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ ও নজরদারি আরও কড়া করার দাবি উঠছে নানা মহলে। আগামী দিনে এ ধরনের অপরাধমূলক ঘটনা ঠেকাতে কী পদক্ষেপ নেয় বিশ্বভারতী, সেদিকেই এখন নজর সকলের।
  • Link to this news (আজকাল)