শহরের নামী হোটেলে মাদক পাচারের চেষ্টা,উদ্ধার কোটি টাকার হেরোইন ...
আজকাল | ৩০ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: উৎসবের মরশুম কাটতে না কাটতেই আবার সক্রিয় মাদক পাচার চক্র। মঙ্গলবার গভীর রাতে বিপুল পরিমাণ মাদক-সহ লালগোলা থেকে গ্রেপ্তার হল দুই ব্যক্তি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাত প্রায় দেড়টা নাগাদ লালগোলা থানার পুলিশ, গোডাউন মোর সংলগ্ন মিনার ইটভাঁটা এলাকায় নাকা তল্লাশি চালায়। সেখান থেকে আটক করা হয় দুই ব্যক্তিকে। ধৃতরা মুকলেশুর রহমান (২৬) এবং মহম্মদ কালিমউদ্দিন শেখ (৩০) বলে জানা গিয়েছে। তাদের বাড়ি লালগোলা থানার অন্তর্গত নলডাহারি এবং নতুনগ্রাম এলাকায়। মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার (লালবাগ) রাসপ্রীত সিং বলেন,'ধৃতদের থেকে ১.৩৫ কেজি উন্নত মানের হেরোইন উদ্ধার করা হয়েছে। এত বিপুল পরিমাণ হেরোইন এরা কোথা থেকে পেয়েছিল এবং কোথায় পাচারের উদ্দেশ্য ছিল তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। ধৃতদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে তাদের ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানিয়ে আদালতে পেশ করা হয়েছে। '
জেলা পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া হেরোইন খুবই উন্নতমানের এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এর মূল্য প্রায় এক কোটি দশ লক্ষ টাকার কাছাকাছি। পুলিশ সূত্রের খবর, মঙ্গলবার গভীর রাতে লালগোলার থানার একটি বিশেষ দল গোডাউন মোর সংলগ্ন এলাকায় হানা দেয়। সেখানে ধৃত দুই ব্যক্তিকে উদ্দেশ্যবিহীনভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। তারপর তাদের আটক করে ব্যাগে তল্লাশি চালাতেই উদ্ধার হয় এই বিপুল পরিমাণ হেরোইন।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ভিন রাজ্যের কোনও বড় মাদক মাফিয়ার কাছ থেকেই ধৃতরা মাদক নিয়ে এসেছিল। ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে বিএসএফের নজরদারি শিথিল হলেই এই মাদক বাংলাদেশে পাচার করার পরিকল্পনা ছিল তাদের। উৎসবের মরশুমে বড় শহর এবং সেই সংলগ্ন এলাকার বেশ কিছু হোটেলে 'পার্টি'র জন্য উন্নত গুণমানের হেরোইনের চাহিদা প্রতি বছর থাকে। পুলিশের অনুমান, ধৃত দুই ব্যক্তি এবছর বিভিন্ন হোটেলগুলিতেও মাদক সরবরাহের কাজও করে থাকতে পারে।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ কয়েক দশক ধরেই লালগোলা থানার অন্তর্গত বিভিন্ন গ্রাম হেরোইন তৈরির জন্য কুখ্যাত। আশির দশকে লালগোলা এলাকার কিছু ব্যক্তি রাজমিস্ত্রির কাজ করার জন্য রাজস্থানে গিয়েছিল। অনেক পুলিশ আধিকারিক দাবি করেন, সেখানে কাজ করার সময় কিছু মাদক মাফিয়ার সঙ্গে পরিচয় হয় এক শ্রেণির মুর্শিদাবাদের পরিযায়ী শ্রমিকদের। এরপর সেখানেই তারা হেরোইন তৈরির কৌশল রপ্ত করে। মুর্শিদাবাদে ফিরে এসে সেই মাদক তৈরির কৌশল আরও বহু লোককে শিখিয়ে দেয়। বেশ কয়েকবছর আগে লালগোলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে হেরোইন তৈরি একপ্রকার কুটির শিল্পে পরিণত হয়েছিল বলে অভিযোগ। এই মাদক বাংলাদেশে পাচার করে লালগোলা এলাকার বহু মানুষ একদিকে যেমন কোটিপতি হয়েছে ,তেমনই বহু পরিবার এই মারণ নেশার কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়েছে।
মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, গত কয়েক মাসে কেবলমাত্র লালগোলা থানা এলাকা থেকে ৭-৮ কোটি টাকার উন্নতমানের হেরোইন উদ্ধার হয়েছে। বর্তমানে লালগোলায় হেরোইন তৈরির ব্যবসা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেলেও এই এলাকায় এখনও কিছু মাদক মাফিয়া সক্রিয় রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। তারা ভিন রাজ্যের মাদক মাফিয়াদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে লালগোলাতে হেরোইন নিয়ে আসে এবং তারপর সেই মাদক আন্তর্জাতিক সীমানা পার করে বিভিন্ন দেশে পৌঁছে যায়।
তবে দুর্গাপুজোর আগে থেকেই লালগোলা থানা এলাকায় কয়েক কোটি টাকার বেশি মাদক উদ্ধারের ঘটনা পুলিশ কর্তাদের চিন্তিত করেছে। পুলিশকর্তাদের একাংশের অনুমান,উৎসবের মরশুমে হাতে কিছু কাঁচা টাকা পাওয়ার আশায় অনেক যুবক এই মাদক সরবরাহ চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছেন । এই মাদক পাচার চক্রের সঙ্গে আর কে বা কারা জড়িত রয়েছে এবং মাদক তৈরির কাঁচামালই বা কোথা থেকে আসছে তা তদন্ত করে দেখছে লালগোলা থানার পুলিশ।