কলকাতায় বড়সড় জালিয়াতির চক্র! পোস্ট অফিসের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, গ্রেপ্তার এক...
আজকাল | ৩০ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: যাদবপুর পোস্ট অফিসে জালিয়াতি চক্রের পর্দাফাঁস। ঘটনায় জোর চাঞ্চল্য! পোস্ট অফিসের ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট ঘিরে সামনে এল এক বিপুল আর্থিক প্রতারণার ঘটনা। অভিযোগ, এক পোস্ট অফিস কর্মী এবং তাঁর সহযোগীরা মিলে জাল পাসবই তৈরি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছে পোস্ট অফিসের এজেন্ট সিদ্ধার্থ করঞ্জাই এবং রিজেন্ট এস্টেট পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার নিজে। তাঁরা অন্যান্যদের সঙ্গে মিলে এক অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন বলে অভিযোগ। তদন্তে উঠে এসেছে, তাঁরা প্রায় ২০-২৫ টিরও বেশি জাল পাসবই তৈরি করে একাধিক গ্রাহকের পরিপক্ক ফিক্সড ডিপোজিটের টাকাগুলি অবৈধভাবে তুলেছিলেন।
পুলিশের অনুমান, এই প্রতারণার মাধ্যমে মোট ৩.৫ কোটি টাকারও বেশি আত্মসাৎ করা হয়েছে। এই প্রতারণার ধরণ এতটাই সূক্ষ্ম ছিল যে প্রথমে কেউ টেরই পাননি। পরবর্তীতে গ্রাহক টাকা তুলতে গিয়েই সত্যি আসে প্রকাশ্যে।
এই ঘটনায় যাদবপুর থানায় মামলা দায়ের হয়েছে ধারা ৩১৯(২)/৩১৮(৪)/৩৩৮/৩৩৬(৩)/৩৪০(২)/৩৪১(১)/৬১(২) ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী। তদন্তে, প্রধান অভিযুক্ত সিদ্ধার্থ করঞ্জাইকে গত ২৫ অক্টোবর ২০২৫ তারিখ বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আদালত তাঁকে ৫ ই নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে জানার চেষ্টা করছে যে এর পেছনে আরও কারা যুক্ত আছে এবং ঘটনাটি কীভাবে এবং কাদের সঙ্গে ঘটানো হয়। একইসঙ্গে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে পোস্টমাস্টারের হদিস।
এছাড়াও, এই ঘটনায় অন্য অভিযুক্ত পোস্ট মাস্টারের খোঁজে তল্লাশি চলছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধেও শক্ত প্রমাণ মিলেছে এবং খুব শীঘ্রই তাঁকেও গ্রেপ্তার করা হবে।
তদন্তে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু জাল পাসবই ও নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি, অর্থের লেনদেনের গতিপ্রকৃতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারা এই বিপুল অর্থের ভাগীদার, সেই দিকেও নজর দিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় ছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান। গ্রাহকদের তথ্য ও স্বাক্ষর নকল করে জাল ডকুমেন্ট তৈরি করে টাকা তোলা হয়েছে। এই জালিয়াতি কাণ্ডে একে একে সমস্ত সংশ্লিষ্টদের শীঘ্রই গ্রেপ্তার করা হবে"।
পুলিশের দাবি, তদন্তের পরিধি আরও বিস্তৃত করা হচ্ছে। এই প্রতারণার পেছনে অন্য কোনও বড় চক্র কিংবা পোস্টমাস্টার ছাড়াও উচ্চপদস্থ ব্যক্তি যুক্ত আছেন কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কলকাতা যাদবপুর থানা এলাকার রিজেন্ট এস্টেট পোস্ট অফিসে এই ঘটনাকে ঘিরে ইতিমধ্যেই তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। বহু আমানতকারী এখন তাঁদের টাকার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
এক প্রবীণ আমানতকারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,“আমরা সরকারকে ভরসা করে টাকা রাখি। এখন যদি পোস্ট অফিসেও এমন জালিয়াতি হয়, তাহলে ভরসা রাখব কোথায়?”
পুলিশ সূত্রে আরও খবর, এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত একজন গ্রেপ্তার হলেও, অপরজন পোস্টমাস্টারের খোঁজে তল্লাশি চলছে। পাশাপাশি পুলিশ আরও জানিয়েছে, এটা কোনও একক কাজ নয়, বরং একটি সংগঠিত প্রতারণা চক্রের ফলাফল। পুলিশ শীঘ্রই সমস্ত অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করবে এবং আত্মসাৎ হওয়া অর্থ উদ্ধারে পদক্ষেপ করছে।
কলকাতার এই পোস্ট অফিস কেলেঙ্কারি এখন শহরের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। পরবর্তী তদন্তের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে সাধারণ মানুষ। তবে সাধারণ মানুষের একটা বড় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। পোস্ট অফিসের এজেন্ট বা পোস্টমাস্টার যদি এ ধরণের জালিয়াতিতে যুক্ত থাকে তাহলে আগামী দিনে পোস্ট অফিসের উপরে ভরসাটাই উঠে যাবে, যা সম্পূর্ণটাই কেন্দ্র সরকার দ্বারা পরিচালিত।