• মা টয়লেট যেতেই ট্রেন থেকে মরণঝাঁপ যাদবপুরের পড়ুয়ার
    বর্তমান | ৩০ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর: ছেলেকে নিয়ে ট্রেনে চড়ে বাড়ি ফিরছিলেন মা। মাঝে তিনি একবার বাথরুমে যান। আর সেই সুযোগে ট্রেন থেকে কাঁসাই নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া। মৃতের নাম সোহম পাত্র (২১)। তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিন্টিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। বাড়ি বাঁকুড়া শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায়। রেল পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটে। রাতের অন্ধকারে তল্লাশি চালালেও সোহমের দেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বুধবার সকালে নিখোঁজ ছাত্রের পরিবারের সদস্যরা চলে আসেন মেদিনীপুর শহরে। পরে নদীতে ভেসে ওঠে সোহমের দেহ। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে খড়গপুর লোকাল থানার সাদাতপুর ফাঁড়ির পুলিশ। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। এদিন আরপিএফের সুবেদার দীপক ঘোষ বলেন, ‘খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। পড়ুয়ার মা বাথরুমে যেতেই উনি ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিয়েছেন বলেই অনুমান করা হচ্ছে। সকালে নদী থেকে মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে।’

    রেল পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার বিকেলে ৫টা নাগাদ হাওড়া-আদ্রা শিরোমণি এক্সপ্রেসে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন সোহম এবং তাঁর মা মল্লিকা পাত্র। রাস্তায় দু’জনের মধ্যে খুব একটা কথা হয়নি। ট্রেন মেদিনীপুর ঢোকার ঠিক আগে কাঁসাই হল্ট স্টেশনে পৌঁছোতেই বাথরুমে যান মা। তখনই সোহম নিজের সিট ছেড়ে সটান ট্রেনের দরজার কাছে চলে যান। অনুমান করা হচ্ছে, তারপরই তিনি ঝাঁপ দেন নদীতে। কাসাই নদীর উপর থাকা সেতুর রেলিংয়ে ধাক্কা খেয়ে নদীতে পড়ে যান ওই ছাত্র। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ট্রেন মেদিনীপুর স্টেশনে পৌঁছোয়। ততক্ষণে বাথরুম থেকে বেরিয়ে ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে চিন্তায় পড়ে যান সোহমের মা। সেই সময় সহযাত্রীরাই ট্রেন থেকে সোহমের ঝাঁপ দেওয়ার কথা জানান। মেদিনীপুর স্টেশনে কর্তব্যরত রেল পুলিশকেও বিষয়টি জানানো হয়। আধিকারিকদের সন্দেহ হয়, ট্রেনের দরজায় দাড়িয়ে টাল সামলাতে না পেরে সেতুর উপর পড়ে যেতে পারেন ওই পড়ুয়া। রাতেই সেতুর চারপাশে খোঁজাখুজি শুরু হয়। কিন্তু রাতে সোহমের সন্ধান মেলেনি। এদিন সকালে কাঁসাই হল্ট এলাকায় রেলব্রিজের ঠিক নীচেই নদীতে তাঁর দেহ ভেসে ওঠে। বাঁকুড়া শহরে সোহমের বাড়ি এদিন ছিল তালাবন্ধ। প্রতিবেশীরাও তাঁদের সম্পর্কে বিশদে কিছুই জানাতে পারেননি। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, দেহ উদ্ধার করে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য। পরিবারের তরফে কোনও অভিযোগ দায়ের না হলেও, অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে, অনেক দিন ধরেই মানসিক রোগে ভুগছিলেন সোহম। তাঁর চিকিৎসা চলছিল। মাঝে মধ্যেই তিনি আত্মঘাতী হওয়ার কথাও জানাতেন পরিবারের সদস্যদের। যদিও এদিন সোহমের মা মল্লিকা পাত্র, বাবা দীপক পাত্র বলেন, ‘এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না। কী ঘটেছে সেটা পুলিশ বলবে। আমরা কিছু সন্দেহও করছি না। সকলে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি।’ গোটা ঘটনায় উদ্বেগপ্রকাশ করেছেন মনোবিদরা। মনোবিদ বিদিশা গোস্বামী বলেন, ‘বর্তমানে অনেকেই মনের রোগে ভুগছেন। সঠিক সময়ে চিকিৎসার প্রয়োজন। এই রোগ লুকিয়ে রাখলেই বিপদ।’
  • Link to this news (বর্তমান)