পার্ক স্ট্রিটের হোটেলে খুনের ঘটনায় ওড়িশা থেকে ধৃত ২
বর্তমান | ৩০ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কয়েক মিনিটেই হয়ে যায় বন্ধুত্ব। মদ্যপান করতে সদ্য পরিচিত রাহুল লালের সঙ্গে হোটেলের রুমে এসেছিল ওড়িশার দুই ব্যবসায়ী। তাদের কাছ থেকে টাকা হাতাতে দুই ব্যবসায়ীর বুকে ছুরি ধরেছিল নতুন বন্ধু রাহুল। কিন্তু শিকারিই হয়ে যায় শিকার! বিছানার চাদর পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে খুনের পর বক্স খাটের মধ্যে দেহ ভরে দুই ব্যবসায়ী পালিয়েছিল নিজের রাজ্যে। তদন্তে নেমে শেষ পর্যন্ত শশীকান্ত বেহেরা ও সন্তোষ বেহেরাকে ওড়িশার ঢেঙ্কানল থেকে গ্রেফতার করে কলকাতায় নিয়ে এল লালবাজার। আধার কার্ডে থাকা মোবাইলের সূত্রেই তাদের ধরা হয়েছে বলে খবর।
গত ২৪ অক্টোবর পার্ক স্ট্রিট থানা এলাকার রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডে হোটেলের রুমে বক্স খাটের মধ্যে থেকে উদ্ধার হয় রাহুল লালের (২৬) মৃতদেহ। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, তার সঙ্গে দুই যুবক এসেছিল। তারা ওড়িশার বাসিন্দা পরিচয় দিয়ে রুম ভাড়া নিয়েছিল। সেখানে জমা দেওয়া আধার কার্ড থেকে জানা যায়, তাদের একজনের নাম শশীকান্ত বেহেরা। প্রথমে তদন্তকারীরা ভেবেছিলেন, আধার কার্ডটি ভুয়ো। তদন্তে জানা যায়, নাম ঠিক থাকলেও আধার নম্বরটি জালিয়াতি করা হয়েছে। যোগাযোগ করা হয় আধার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। তারা ওই নামে ইস্যু হওয়া একাধিক আধার কার্ডের তথ্য পাঠায়। আধারে লিঙ্ক করা মোবাইলের সূত্র ধরে তদন্তকারীরা দেখেন কোন নম্বরটির অবস্থান কলকাতায় রয়েছে। সেখান থেকে একটি নম্বরকে চিহ্নিত করেন তাঁরা। দেখা যায়, গত ২২ অক্টোবর রাতে সেটির অবস্থান ছিল রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডের ওই হোটেল। মোবাইলের সাবস্ক্রাইবার আইডি শশীকান্ত বেহেরার নামে। তখন তার টাওয়ার লোকেশন ওড়িশার ঢেঙ্কানল বলে জানতে পারে পুলিশ। সেইমতো গোয়েন্দারা সেখানে হানা দিয়ে মঙ্গলবার গ্রেফতার করে শক্তিকান্ত ও তার সহযোগী সন্তোষকে।
তাদের জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, দুজনেই ওড়িশায় ফুলের ব্যবসা করে। গত ২২ অক্টোবর কলকাতায় এসে তারা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল বেড়াতে যায়। সেখানে তারা ঘোড়ার গাড়িতে চাপে। ঘোড়ার গাড়ির চালক রাহুল তাদের সঙ্গে আলাপ জমায়। বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দেয় ওই দুজনের সঙ্গে। কথায় কথায় জেনে নেয়, তারা ওড়িশার ব্যবসায়ী। টাকাপয়সা নিয়ে এসেছে শহরে। দুই অভিযুক্ত মদ্যপানের ইচ্ছা প্রকাশ করলে রাহুল জানায়, রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডে তার পরিচিতের হোটেল রয়েছে। সেখানে সকলে মিলে মদ্যপান করা যাবে। সেইমতো দুজনকে নিয়ে ওই হোটেলে এসে ওঠে। আধার কার্ড জমা দেয় এক অভিযুক্ত। এরপর মদ নিয়ে আসে। তিনজনে মিলে খাওয়া শুরু হয়।
তদন্তে উঠে এসেছে, টাকার লোভে আচমকাই রাহুল ওই দুই অভিযুক্তের বুকে ছুরি ধরে বসে। তখনই শশীকান্ত ও সন্তোষ লাথি মেরে রাহুলকে খাট থেকে ফেলে দেয়। তারপর বেডশিট পেঁচিয়ে রাহুলকে শ্বাসরোধ করে বলে পুলিশ জেনেছে। তথ্যপ্রমাণ লোপাট করতে খুনের পর বক্সখাটের মধ্যে দেহ ভরে পালিয়ে যায়। ধৃতরা জানিয়েছে, তারা জানত, যখন দেহ পাওযা যাবে. তখন তারা অনেক দূর চলে যাবে। সেক্ষেত্রে তাদের ধরা সম্ভব হবে না।