প্রদীপ করের আত্মহত্যায় শাহ-জ্ঞানেশকে দায়ী করে লড়াইয়ের হুঁশিয়ারি অভিষেকের
দৈনিক স্টেটসম্যান | ৩০ অক্টোবর ২০২৫
এনআরসি ও এসআইআর আতঙ্কে আত্মঘাতী পানিহাটির বাসিন্দা প্রদীপ করের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। মৃতের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি দায়ী করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে। বুধবার পানিহাটির মহাজাতি নগরে মৃতের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি।
অভিষেক বলেন, ‘যাঁদের জন্য প্রদীপ কর আত্মঘাতী হয়েছেন, আগামীদিনে তাঁদের জেলে পাঠাবে তৃণমূল।’ তাঁর কথায়, প্রদীপ করের মৃত্যু কোনও সাধারণ ঘটনা নয়। এটি পরিকল্পিত আতঙ্কের ফল। বিজেপি যে ভয় ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে নাগরিকদের মানসিকভাবে বিধস্ত করছে, সেটাই এখন জীবন্ত প্রমাণ।
তৃণমূলের এই শীর্ষ নেতা ঘোষণা করেন, ‘প্রদীপ করের ন্যায়বিচারের জন্য আমরা সর্বশক্তি দিয়ে লড়ব। সারা বাংলার একটাই স্বর, জাস্টিস ফর প্রদীপ কর।’ তিনি জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টেয় পানিহাটিতে বিশাল মিছিলের আয়োজন করা হবে।
আবেগঘন ভাষণে অভিষেক বলেন, ‘সর্বশক্তি নিয়ে আমরা রাস্তায় নামব। আমি আবারও পানিহাটিতে আসব। বিজেপির ছড়ানো আতঙ্কে কেউ ভয় পাবেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকতে কোনও বৈধ ভোটারকে বাংলাদেশি বলে বিতাড়িত করা যাবে না। একজনের নাম বাদ গেলে এক লক্ষ মানুষ নিয়ে গিয়ে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করব।’
অভিষেকের কটাক্ষ, ‘নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ বা জ্ঞানেশ কুমার— এঁরা কি নিজেদের বাবা-মায়ের জন্মশংসাপত্র দেখাতে পারবেন? বিজেপি নেতারা আগে নিজেদের প্রমাণ করুন, তারপর বাংলার মানুষের কাছে সার্টিফিকেট চাইতে আসুন।’ তাঁর নির্দেশ, ‘যদি কোনও বিজেপি নেতা এলাকায় এসে আতঙ্ক ছড়ান, স্থানীয়রা তাঁদের ঘিরে ধরুন, বলুন নিজের বাবা-ঠাকুরদার কাগজ আগে দেখান।’
তৃণমূল নেতার দাবি, এসআইআর পর্বে রাস্তায় থাকবেন তিনি নিজে। ‘এনুমারেশন ফর্ম বিলির সময় প্রতিটি জায়গায় ক্যাম্প করবে তৃণমূল। প্রয়োজনে আমিও রাস্তায় থাকব, মানুষের পাশে দাঁড়াব,’ আশ্বাস দিয়ে বলেন অভিষেক।
উল্লেখ্য, এনআরসি ও এসআইআর আতঙ্কে সুইসাইড নোট লিখে আত্মঘাতী হয়েছেন পানিহাটির মহাজাতি নগরের বাসিন্দা বছর সাতান্নর প্রদীপ কর। বুধবার পানিহাটিতে মৃতের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে পরিবারকে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। এরপরই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রদীপ করের ন্যায়বিচারের দাবি তুলে সরব হয়েছেন তিনি।
এদিকে এসআইআর আতঙ্কে কোচবিহারের এক বাসিন্দাও আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছেন। সেই প্রসঙ্গ তুলে অভিষেকের ক্ষোভপ্রকাশ, ‘এই আতঙ্ক আর কতদিন? প্রদীপবাবুর মৃত্যু নিয়েও রাজনীতি হচ্ছে! হিন্দুদের ধারক, বাহক, রক্ষাকর্তারা একবারও এই পরিবারের খোঁজ নিয়েছেন? তোমাদের বুকের পাটা থাকলে বাংলার মানুষের গায়ে হাত দিয়ে দেখো। মায়ানমার এবং বাংলাদেশ লাগোয়া পাঁচ-ছ’টি রাজ্যের মধ্যে একমাত্র বাংলাতেই এসআইআর হচ্ছে। কারণ বাঙালি এদের কাছে বশ্যতা স্বীকার করেনি।’