• আজও বৃষ্টি দক্ষিণে, কাল চিন্তা উত্তরে
    এই সময় | ৩০ অক্টোবর ২০২৫
  • এই সময়: দমকা হাওয়ার দাপট বুধবার ভালোই টের পাওয়া গেল বাংলার উপকূলে। সঙ্গী হয়ে এসেছিল বৃষ্টিও। মঙ্গলবার রাতে মান্থা–র ল্যান্ডফল বাংলার আবহাওয়ায় তেমন প্রভাব ফেলতে না পারলেও, ঘূর্ণিঝড়ের মেঘরাশির ‘আউটার ব্যান্ড’ দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকাকে ভিজিয়ে দিয়ে গেল। দক্ষিণবঙ্গে ফিরল সদ্য শেষ হওয়া বর্ষাকালের বিরক্তিকর অনুভূতি। আজ–কাল বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে দক্ষিণে। কাল, শুক্রবার অতিভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে উত্তরবঙ্গে। উত্তরে কাল কমলা সতর্কতা জারি করেছে হাওয়া অফিস।

    মঙ্গলবার রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ অন্ধ্রপ্রদেশের কাঁকিনাড়ার কিছুটা দক্ষিণে নরসাপুর অঞ্চল দিয়ে ঘূর্ণিঝড় মান্থা–র কেন্দ্র (আই) ভারতের মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করে। ওই সময়ে অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওডিশার বিস্তীর্ণ এলাকা প্রবল ঝোড়ো হাওয়া এবং তুমুল বৃষ্টিতে বিধ্বস্ত হয়েছিল। ল্যান্ডফলের সময়ে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার। সেই হিসেবে মান্থা–কে আবহবিদরা ‘তীব্র ঘূর্ণিঝড়’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। তবে ল্যান্ডফলের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দ্রুত শক্তি খোয়াতে শুরু করেছিল মান্থা। বুধবার দুপুরে মৌসম ভবন জানিয়েছে, ল্যান্ডফলের কিছুক্ষণের মধ্যেই তীব্র ঘূর্ণিঝড়টি শক্তি হারিয়ে সাধারণ একটি ঘূর্ণিঝড়ে এবং বুধবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ আরও দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। তারপরে সেটি ছত্তিসগড়ের দিকে এগিয়ে যায়।

    আবহবিদরা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় হিসেবে মান্থা যে খুব শক্তিশালী ছিল এমনটা নয়। গত কয়েক বছরে মান্থা–র চেয়ে অনেক শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের জন্ম দিয়েছে বঙ্গোপসাগর। মান্থা–র ল্যান্ডফল যে জায়গায় হয়েছিল, সেই জায়গাটিও বাংলার উপকূল থেকে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দূরে। এর পরেও বাংলার উপকূল এবং দক্ষিণবঙ্গের অনেকটা এলাকায় এমন বৃষ্টি হলো কেন? আবহবিদরা জানাচ্ছেন, ঘূর্ণিঝড়ের মেঘরাশির ‘আউটার ব্যান্ড’–এর বিস্তার খুব বেশি থাকার জন্যই এমনটা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র বা ‘চোখ’ হিসেবে পরিচিত অংশের (আই) চারপাশে ক্রমাগত পাক খেতে থাকে যে ঘন মেঘের রাশি, সেই মেঘের একেবারে বাইরের দিকের অংশই ‘আউটার ব্যান্ড’ হিসেবে পরিচিত। ঘূর্ণিঝড় হিসেবে মান্থা খুব শক্তিশালী না হলেও, তার আউটার ব্যান্ডের বিস্তার এত বেশি ছিল যে ৮০০ কিলোমিটার দূরে বাংলাতেও তার প্রভাব পড়ে।

    বুধবার আলিপুর হাওয়া অফিসের রিপোর্ট অনুযায়ী, সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে কাঁথিতে (৮৪ মিলিমিটার)। তারপর সাগরদ্বীপ (৬১ মিমি), দিঘা (৫৯.২ মিমি), হলদিয়া (৪৯.২ মিমি), মেদিনীপুরে (৪৭ মিমি)। তবে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির পর্ব এখানেই শেষ হবে না। আগামিকাল, শুক্রবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় দফায় দফায় বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে হাওয়া অফিস।

    মান্থা ল্যান্ডফলের পরে শক্তি খুইয়ে ফেললেও তার যে অবশেষ, প্রথমে ছত্তিসগড় এবং তারপরে উত্তরপ্রদেশ হয়ে হিমালয়ের দিকে এগিয়ে যাবে। তার প্রভাবে উত্তরবঙ্গের হিমালয়–সংলগ্ন এলাকাগুলিতে মাঝারি থেকে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দক্ষিণবঙ্গের বৃষ্টির নেপথ্য কারিগর যেমন ‘আউটার ব্যান্ড’, উত্তরবঙ্গে তেমন নয়। এই অঞ্চলে বৃষ্টি হবে মান্থা–র অবশিষ্ট জলীয় বাষ্পের প্রভাবে।

  • Link to this news (এই সময়)