"আরএসএস কবে একজন দলিত মহিলাকে ওদের সরসংঘচালক বানাবে?", বিস্ফোরক দাবি প্রিয়াঙ্ক খাড়গের!
আজকাল | ৩০ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: কর্ণাটকের মন্ত্রী প্রিয়াঙ্ক খাড়গে ও বিজেপি-র জাতীয় সাধারণ সম্পাদক বি.এল. সান্তোষের মধ্যে ‘সনাতন ধর্ম’ বিতর্ককে ঘিরে বুধবার তীব্র বাকযুদ্ধ শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার মন্ত্রিসভার সদস্য প্রিয়াঙ্ক খাড়গে, যিনি কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের পুত্র, সরাসরি আরএসএস ও বিজেপির আদর্শকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন।
প্রিয়াঙ্ক খাড়গে সান্তোষকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “তোমাদের আদর্শ গুরু নারায়ণ, বাসবন্না, বাবাসাহেব আম্বেদকর — সকলেরই বিরোধিতা করেছে এবং এখনো করে চলেছে। কোনও আশ্চর্যের বিষয় নয়। আমাদের ভুল প্রমাণ করো, দেখাও যে আরএসএস বদলেছে এবং সমানাধিকারের সমাজে বিশ্বাস করে। জানাও তো, কবে আরএসএস-এর প্রধান (সরসংঘচালক) হিসেবে কোনও দলিত বা নারীকে দেখা যাবে?”
এর জবাবে বিজেপি নেতা বি.এল. সান্তোষ বলেন, “যখন আমরা তথ্যভিত্তিক কথা বলি, তখন তোমরা সেটাকে ‘হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটি’ বলে উড়িয়ে দাও — যার ভাইস চ্যান্সেলররা আসলে কংগ্রেস নেতারা নিজেরাই। চন্দ্রযান-৩ উৎক্ষেপণের দিনেও সেটা স্পষ্ট হয়েছে। তথ্য না থাকলে তোমরা সবসময় সেই ‘আরামদায়ক’ জায়গায় গিয়ে দাঁড়াও।”
এর আগে সান্তোষ “পেটে সংক্রমণ থাকলে মাথা কাটা যায় না” — এমন একটি মন্তব্য করেছিলেন, যা ‘সনাতন ধর্ম’ বিলোপ সংক্রান্ত বিতর্কে বড় প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। সেই মন্তব্যের জবাব দিতেই প্রিয়াঙ্ক খাড়গে ‘বর্ণ বিভাজন’ প্রসঙ্গ তোলেন।
বিতর্ক আরও এগিয়ে নিয়ে সান্তোষ বলেন, “ভালো লাগছে যে আপনি আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। সমাজে শোষণ ও সংস্কার — এই দুই দিক থেকেই সমস্যাকে দেখা যায়। গৌতম বুদ্ধ থেকে শুরু করে বাসবন্না, অন্নাভূষণ, ড. বি.আর. আম্বেদকর — সবাই সমাজ সংস্কারের পথে কাজ করেছেন, এবং সফল হয়েছেন।”
এরপর সান্তোষ প্রশ্ন তোলেন, “যদি কংগ্রেস বাবাসাহেব আম্বেদকরকে এতই শ্রদ্ধা করত, তাহলে তাঁকে নির্বাচনে জিততে দিল না কেন? আপনি কি জানেন, আরএসএস প্রচারক দত্তোপন্ত ঠেংগাড়িই আম্বেদকরকে সহায়তা করেছিলেন?”
এই মন্তব্যের জবাবে প্রিয়াঙ্ক খাড়গে বলেন, “আপনার সন্দেহ দূর করতে আমি সদা প্রস্তুত। যদি আপনি সত্যিই বাবাসাহেবের লেখা পড়ে থাকতেন, তাহলে এমন সরল ও অজ্ঞ প্রশ্ন করতেন না। আসল বিষয়ে মুখোমুখি না হয়ে ‘আরামদায়ক’ আলোচনার দিকে পালিয়ে যাচ্ছেন আপনি।”
তিনি ঐতিহাসিক তথ্য তুলে ধরে বলেন, “বাবাসাহেব ও কংগ্রেসের মধ্যে বহু বিতর্ক ও মতবিরোধ ছিল — তা তিনি নিজেই লিখেছেন। যখন তিনি বোম্বে নর্থ সেন্ট্রাল থেকে নির্ধারিত জাতির ফেডারেশন প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন, তখন হিন্দু মহাসভা তাঁর বিরোধিতা করেছিল। পরে বাংলার বিভাজনের ফলে তাঁর আইনসভা সদস্যপদ হারিয়ে যায়। সেই সময় কংগ্রেসই তাঁর গুরুত্ব বুঝে তাঁকে পুনরায় সংবিধান সভায় আনার উদ্যোগ নেয়। ১৯৪৭ সালের ৩০ জুন রাজেন্দ্রপ্রসাদ নিজে বোম্বের প্রধানমন্ত্রী বি.জি. খেরকে চিঠি লিখে অনুরোধ করেন যে বাবাসাহেবকে কংগ্রেসের সমর্থনে নির্বাচিত করা হোক।”
খাড়গে আরও বলেন, “আপনাদের মতাদর্শগত গুরুগণ কেবল বাবাসাহেবের বিরোধিতাই করেননি, তাঁরা মুসলিম লীগ-এর সঙ্গেও বাংলায়, সিন্ধে ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে জোট সরকার চালিয়েছিলেন। দত্তোপন্ত ঠেংগাড়ি ও বাবাসাহেবের সম্পর্ক আরএসএসের কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়।”
বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ নিয়ে প্রিয়াঙ্ক খাড়গে বলেন, “বাবাসাহেব বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন কারণ তিনি এটিকে সবচেয়ে বৈজ্ঞানিক ধর্ম মনে করেছিলেন। অথচ সাভারকর তাঁর রূপান্তরকে উপহাস করেছিলেন। সাভারকর বলেছিলেন, ‘এই মহার জাতের মানুষরা বৌদ্ধ হয়ে গ্রামে ফিরে গেলে তারা কি এখন স্পর্শযোগ্য হয়ে যাবে? একেবারেই না।’”
শেষে প্রিয়াঙ্ক খাড়গে উদ্ধৃত করেন বাবাসাহেবের মন্তব্য: “ঋগ্বেদের স্তোত্রে মানুষ নিজের ভেতর নয়, দেবতাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু বৌদ্ধধর্ম মানুষকে নিজের অন্তর্নিহিত শক্তি অনুসন্ধান করতে শেখায়। যেখানে বেদে দেবতার স্তবগান ও প্রার্থনা, সেখানে বৌদ্ধধর্ম মনকে প্রশিক্ষিত করে ন্যায়পথে চলতে শেখায়।”
‘সনাতন ধর্ম’ বিতর্কে এই নতুন রাজনৈতিক সংঘাত শুধু কর্ণাটকেই নয়, জাতীয় পর্যায়েও আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই তর্ক এখন ভারতের সামাজিক ও রাজনৈতিক বিতর্কের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।