• পর্যটন-ব্যবসায় জুড়ে যাচ্ছে দেওয়াল চিত্রও
    আনন্দবাজার | ৩০ অক্টোবর ২০২৫
  • জঙ্গল ঘেরা চড়াই-উতরাই পথের পাশে সার সার কাঁচাবাড়ি। দেওয়ালে আঁকা ফুল-লতা-পাতার নকশা যেন চোখ জুড়িয়ে দেয়। বাঁদনা ও সহরায় উৎসবে উপলক্ষে সাজিয়ে তোলা জঙ্গলমহলের এই সব দেওয়াল চিত্র কি রূপসী পুরুলিয়ার পর্যটনের অন্যতম মুখ হয়ে উঠছে? উৎসবের মরসুমে অযোধ্যাপাহাড়ে বেড়াতে আসা পর্যটকদের অনেকে দেওয়াল চিত্রের টানে গ্রামে গ্রামে ঘুরতে থাকায় পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা উঁকি মারছে।

    এত দিন অযোধ্যা পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কিংবা মুখোশ গ্রাম চড়িদার টানে ভিড় জমত পর্যটকদের। তবে এই কয়েক বছরে বাঁদনা এবং সহরায় উৎসবের সময়ে পাহাড়ের এক-একটি জনপদের সেজে ওঠা দেওয়ালই যেন বাড়তি আকর্ষণ হয়ে উঠেছে অতিথিদের কাছে। তাঁদের কাছে বাহবা পেয়ে আরও বেশি উৎসাহ পাচ্ছেন দেওয়াল সাজানোর কুশলীরা।

    অন্য দিকে, শুধু রঙিন জনপদগুলির টানে পাহাড়ে আলাদা করে পর্যটকেরা এলে সামগ্রিক ভাবে পর্যটন ক্ষেত্রের আরও বিকাশ হবে বলে আশাবাদী হোটেল ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে পর্যটনশিল্পের সঙ্গে যুক্ত লোকজন।

    ‘বাঘমুণ্ডি হোটেল অ্যান্ড লজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক সুজিতচন্দ্র কুমারের কথায়, ‘‘উৎসবে আদিবাসী গ্রামগুলি এ বার কেমন সেজেছে পর্যটকদের অনেকেই ফোন করে জানতে চাইছেন। আমরাও পরিচিত পর্যটকদের ফোন করে ও ছবি পাঠিয়ে অযোধ্যা পাহাড়ে ঘুরতে আসার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’’

    তা হলে কি এ বার পর্যটনের বিপণনে জুড়তে চলেছে জঙ্গলমহলের সাজানো দেওয়ালও। ‘টুরিস্ট গাইড’ ও গাড়ি চালকদেরও দাবি, পাহাড়ে পা রেখেই পর্যটকদের অনেকে কোন কোন গ্রামে এ বার চোখ জুড়ানো দেওয়াল চিত্রর দেখা যাবে, তা জানতে চাইছেন।

    পাহাড়ের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, দেওয়াল সাজানোর কাজে বরাবরই নজর কাড়ে ছাতনি, ভুইঁঘোরা, তেলিয়াভাসা, কালহা, শিলাংদা ও রাঙ্গার মতো ছোট ছোট জনপদ। এ বারও প্রায় সেই একই ছবিই দেখা গিয়েছে। কোথাও লতাপাতা দিয়ে সাজানো হয়েছে দেওয়াল, কোথাও আবার দেওয়ালের মধ্য দিয়ে সামাজিক সচেতনতার বার্তা দেওয়ার ভাবনাও শুরু করেছেন শিল্পীরা।

    ছাতনি গ্রামের রহিরাম মান্ডির কথায়, ‘‘সাবেকিয়ানার পাশাপাশি শিল্পীদের অনেকেই বৈচিত্র আনার চেষ্টা করছেন। তাই কিছু কিছু গ্রামে ‘বন্দে ভারত ট্রেন’ কিংবা ‘ইউটিউবের লোগো’ কিংবা সামাজিক মাধ্যমেরও টুকরো কিছু কোলাজকে দেওয়ালে ফুটিয়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে।’’ শিল্পীদের মধ্যে শিলাংদা গ্রামের সুজাতা হেমব্রম বলেন, ‘‘উৎসবের সময়ে আমরা মনের মতো করে ঘরদোর সাজিয়ে তুলি। অতিথিদের তা ভাল লাগলে উৎসাহ পাই।’’

    যদিও জঙ্গলঘেরা বাড়িগুলির দেওয়ালে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছবি দেখতেই বেশি ভাল লাগে বলে জানাচ্ছেন অধিকাংশ পর্যটক। তাঁদের মধ্যে কলকাতার বেহালা থেকে আসা শতাব্দী ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘জঙ্গলে বেড়াতে এসে মাটির কথা দেওয়ালে দেখতেই বেশি ভাল লাগছে।’’

    পেশায় গাড়ি চালক পঙ্কজ মাহাতো পর্যটকদের গোটা এলাকা ঘুরিয়ে দেখান। অযোধ্যা পাহাড়ের পাদদেশে আড়শার সেনাবনা গ্রামে তাঁর বাড়ি। পঙ্কজ বলেন, ‘‘পরিচিত পর্যটকদের অনেকেই আমাদের ফোন করছেন। জানতে চাইছেন, পাহাড়ের কোন গ্রামে গেলে বাহারি দেওয়ালের দেখা মিলবে। আমরা নিজেরাও চেনাশোনা পর্যটকদের ফোন করে জানাচ্ছি।’’ অযোধ্যা পাহাড়ের বাসিন্দা অখিল সিং সর্দারের কথায়, ‘‘এখন এক মাস ধরে বিভিন্ন গ্রাম ধাপে ধাপে এই উৎসব পালন করছে। গো বন্দনার পাশাপাশি নাচগান চলছে। পর্যটকদের কাছে এ সবই বাড়তি পাওনা।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)