• পথিকের মৃত্যুতে চিন্তা অন্য পরিযায়ী পরিবারে
    আনন্দবাজার | ৩০ অক্টোবর ২০২৫
  • গ্রাম থেকে ভিন্‌ রাজ্যে কাজে যাওয়া আদিবাসী পরিযায়ী শ্রমিকের দেহ মিলেছে রেললাইনের ধারে। ওই ঘটনায় আতঙ্কে পাড়ুইয়ের দামোদরপুরের অন্য পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিজনেরা। অনেকেই জানালেন, তাঁরা আর পরিবারের লোকজনকে বাইরে কাজে যেতে দেবেন না।

    দিন চারেক আগে উত্তরপ্রদেশে রেললাইনের ধার থেকে উদ্ধার হয় দামোদরপুর গ্রামের বাসিন্দা পথিক হেমব্রমের (৩২) রক্তাক্ত দেহ। তিনি তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ে কাজ করলেও কী ভাবে উত্তরপ্রদেশ থেকে তাঁর দেহ মিলল তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাঁর পরিজনেরা। মঙ্গলবার পাড়ুই থানায় খুনের অভিযোগও দায়ের করেন তাঁরা। ওই রাতেই গ্রামে ফেরে তাঁর দেহ। ভিন্‌ রাজ্যে বাঙালি বিদ্বেষের আবহে এই ঘটনায় আতঙ্কিত গ্রামের অন্য পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিজনেরা।

    প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বোলপুর শ্রীনিকেতন ব্লকের বিভিন্ন গ্রামের অন্তর্গত প্রায় সাড়ে চার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক এই মুহূর্তে ভিন্‌ রাজ্যে কর্মরত রয়েছেন। শুধু কসবা গ্রাম পঞ্চায়েতের এলাকার বাসিন্দাই রয়েছেন প্রায় সাড়ে ৮০০ জন। এর মধ্যে পাড়ুই থানার দামোদরপুর এলাকায় ৮-১০ জন রয়েছেন। তারাও এই মুহূর্তে ভিন্‌ রাজ্যে কর্মরত। কিন্তু পথিকের যে ভাবে মৃত্যু হয়েছে তাতে সকলেই আতঙ্কিত।

    দামোদরপুর গ্রামের বাসিন্দা সুমিত্রা বাসকির ছেলে গত চার মাস হল চেন্নাইয়ে ইট তৈরির কাজে গিয়েছেন। তাঁকে নিয়ে চিন্তায় পড়েছে গোটা পরিবার। একই ভাবে, গত সাত মাস হল মহারাষ্ট্রে একটি সুতোর কারখানায় কাজে গিয়েছেন ভবনাথ কিস্কুর ছেলে দেবচাঁদ। তাঁকে নিয়েও চিন্তায় তাঁর পরিবার। সুমিত্রা, ভবনাথরা বললেন, ‘‘প্রায়ই শুনছি পরিযায়ী শ্রমিকেরা কাজে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন। তাই ঘরের ছেলে বাইরে থাকায় খুব চিন্তায় দিন কাটছে। এ বার ছেলে বাড়ি ফিরে এলে তাকে আর বাইরে যেতে দেব না।’’

    মাস দেড়েক আগে চেন্নাইয়ে ইট তৈরির কারখানায় কাজ করতে গিয়েছেন গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত কিস্কু। তাঁর সঙ্গে এ দিন ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা একই গ্রামের ছেলে। পেটের দায়ে কাজে এসেছি। ভাবতেও পারছি না পথিকের এমন পরিণতি হবে।’’ ওই ঘটনার পর তিনিও যথেষ্ট আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন বলে জানালেন সুব্রত। তিনি বললেন, ‘‘কিছু দিন পরে বাড়ি ফিরে আমিও অন্য কাজের খোঁজ করব।’’ গ্রামেরই বাসিন্দা রাম সরেন গত ছ’মাস ধরে মহারাষ্ট্রের পুণেতে একটি সুতোর কারখানায় কাজ করছেন। তাঁকে নিয়েও উদ্বেগে তাঁর পরিবার। রামের দাদা বাবুই সরেন বলেন, ‘‘ফিরে এলে আর বাইরে পাঠাব না। এখানেই কিছু করে পেট চালাতে বলব।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)