কার্তিকের বৃষ্টিতে জল জমেছে ধানজমিতে, মাথায় হাত চাষিদের
আনন্দবাজার | ৩০ অক্টোবর ২০২৫
ঘূর্ণিঝড় মোন্থার প্রভাবে দুর্যোগের পূর্বাভাস ছিল। তবে বুধবার সকালে ঝলমলে আকাশ দেখে কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন জেলাবাসী। বেলা বাড়তেই ছবি বদলে যায়। আকাশ ছেয়ে যায় কালো মেঘে। দুপুর ১টার আগে নামে অঝোরে বৃষ্টি। সঙ্গে দমকা হাওয়া। বিকেল পর্যন্ত কোথাও মাঝারি, কোথাও ঝিরঝরে বৃষ্টি হয়।
জেলার বহু জায়গায় জমিতে লুটিয়ে পড়েছে ধান গাছ। নিচু এলাকার জমিগুলিতে জল জমতে শুরু করেছে। চাষিদের দাবি, শুধু ধান, দুর্যোগে ক্ষতির মুখে পড়েছে আনাজ চাষও। টানা বৃষ্টি হলে বাড়বে ক্ষতির বহর। পিছিয়ে যাবে রবি মরসুমের পেঁয়াজ, আলু, সর্ষের মতো ফসল।
রাজ্যের শস্যগোলা পূর্ব বর্ধমানে এ বার প্রায় ৩ লক্ষ ৭৭ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। চাষিরা জানিয়েছেন, ভাল বৃষ্টি মেলায় এ বার ধানগাছের বৃদ্ধিও ভাল। তাতে ভাল ফলনের আশায় রয়েছেন তাঁরা। কোথাও কোথাও ধান পেকে এসেছে, কোথাও পাকার মুখে। কিছু এলাকায় ধান কাটার কাজ শুরু হয়েছে। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে আলু চাষের জন্য জমি তৈরির কাজ শুরু করে দেওয়ার কথা ছিল।
এমন সময়ে দুর্যোগ শুরু হওয়ায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কপালে। এ দিন কালনার ধর্মডাঙা, রুকসপুর, কদম্বা, আনুখাল, মধুপুর, নান্দাইয়ের মতো এলাকায় জমিতে ধানগাছ লুটিয়ে পড়েছে বলে দাবি চাষিদের। নিচু জমিতে জমেছে জল। দুর্যোগের মধ্যে জমির পাশে দাঁড়িয়ে আনুখালের চাষি সঞ্জয় মণ্ডল বলেন, ‘‘এ বার ধানচাষের উপযুক্ত আবহাওয়া ছিল। ভেবেছিলাম ভাল ফলন মিলবে। কয়েক দিন পরে ধান কেটে খামারে নিয়ে যেতাম। সব মাটি করে দিল বৃষ্টি আর ঝোড়ো হাওয়া। গোটা জমির ধান লুটিয়ে পড়েছে। ১ নভেম্বর পর্যন্ত দুর্যোগের পূর্বাভাস রয়েছে। জমিতে লুটিয়ে পড়া ধান জলে ডুবে থাকলে তা নষ্ট হবে। ফলে দুর্যোগ নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে।’’ নান্দাইয়ের চাষি বাপি শেখের দাবি, ‘‘ধান পেয়ে যাওয়ায় গাছের উপরের অংশ ভারী হয়েছে। দমকা হাওয়ায় বহু জমিতে লুটিয়ে পড়েছে ধান গাছ।’’ রবি মরসুমের পেঁয়াজ চাষের জন্য বীজতলা প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছিলেন অনেকে। তাঁদের দাবি, দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু বীজতলায় পেঁয়াজ চারা।
দুর্যোগ ভাবাচ্ছে আলু চাষিদেরও। অনেকেই জানিয়েছেন, জমিতে জল জমলে আলু চাষের জন্য জমি তৈরি করতে দেরি হবে। পিছিয়ে যেতে পারে আলু চাষ। সময়ে আলু গাছ পর্যাপ্ত শীত পাবে না। বাড়বে পোকার হামলা। মেমারির আলু চাষি রহিম শেখ বলেন, ‘‘দুর্যোগ দ্রুত কেটে গেলে সামলে নেওয়া যাবে। তবে বৃষ্টি না থামলে সমস্যা হবে।’’
সমস্যায় আনাজ চাষিরাও। এ বছর লাগাতার দুর্যোগে বারবার ক্ষতি হয়েছে আনাজ চাষের। ফলে উৎসবের মরসুমে চড়া দামে আনাজ কিনতে হয়েছে ক্রেতাদের। সম্প্রতি আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ায় বাড়ছিল ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর-সহ বেশ কিছু আনাজের ফলন। এ দিন বিকেলে ফুলকপির জমি থেকে জমা জল বাইরে বার করার সময়ে চাষি বাণেশ্বর ঘোষের বক্তব্য, ‘‘ফুলকপির ভাল দাম মিলছিল। তবে জমিতে ফের জল জমে যাওয়ার ফলে নষ্ট হবে হবে ফুলকপি।’’
এক কৃষি বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘‘জমিতে ধান লুটিয়ে পড়লে সমস্যা হবে। দুর্যোগে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে আনাজ চাষেরও। তবে সব কিছু নির্ভর করছে দুর্যোগ কতক্ষণ চলবে তার উপরে।’’ কৃষি দফতরের পরামর্শ, জমা জল দ্রুত বার করতে হবে। ধান কাটা আপাতত বন্ধ রাখতে হবে। আনাজ তোলা অথবা কাটার উপযোগী হলে দ্রুত খামারে আনতে হবে।