এসআইআর ঘোষণা হয়েছে। শীঘ্র বিএলও-রা (বুথ লেভেল অফিসার) ভোটারদের তথ্য যাচাইয়ের কাজে নামবেন। অভিযোগ, বিএলও হিসাবে সবচেয়ে বেশি নেওয়া হয়েছে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের। এ দিকে, পুজোর ছুটির পরে স্কুল খুলে গিয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষকেরা এসআইআর-এর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লে, পঠনপাঠন ব্যাহত হবে বলে অভিযোগ উঠছে।
প্রাথমিক শিক্ষকদের দৈনন্দিন পঠনপাঠন ছাড়াও, মিড-ডে মিল, ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প রূপায়ণ-সহ নানা কাজ করতে হয়। বহু স্কুলে শিক্ষকের সঙ্কট রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, এসআইআর-এর জন্য বিএলও হিসাবে মাস তিনেক কাজ করতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ডিসেম্বরে পরীক্ষা, রিপোর্ট কার্ড তৈরি, জানুয়ারিতে নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তির প্রক্রিয়া, শীতকালীন ভ্রমণ-সহ নানা কর্মসূচি থাকে। পরিস্থিতির কথা ভেবে উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা। তাঁদের দাবি, অনেক স্কুলে প্রথম প্রজন্মের ছাত্রছাত্রী রয়েছে। মূলত স্কুলের পড়াশোনায় ভরসা করেই এগোতে হয় তাদের। কিন্তু শিক্ষকেরা স্কুলে সময় কম দিলে, ভুগতে হবে তাদের। বহু স্কুলের প্রধান শিক্ষককেও বিএলও করা হয়েছে বলে জানান তাঁরা।
দুর্গাপুরের বিভিন্ন প্রাথমিক স্কুলে খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, স্কুলের প্রায় অর্ধেক বা তার বেশি সংখ্যক শিক্ষককে বিএলও করা হয়েছে। দুর্গাপুর ২ চক্রের ইস্পাতনগরী প্রাথমিক স্কুলে হিন্দি ও বাংলা মাধ্যমের পঠনপাঠন চালু রয়েছে। হিন্দির জন্য রয়েছেন দু’জন শিক্ষক। বাংলার জন্য আছেন পাঁচ জন শিক্ষক। হিন্দি বিভাগের দু’জন শিক্ষককেই বিএলও করা হয়েছে। অর্থাৎ, তাঁরা চলে গেলে কে ছাত্রছাত্রীদের পড়াবেন, তা জানা নেই অভিভাবকদের। আবার বাংলা মাধ্যমে ৫ জনের মধ্যে এক জন প্রধান শিক্ষক। বাকি ৪ জনের মধ্যে এক জন নভেম্বর, অন্য এক জন জানুয়ারিতে অবসর নেবেন। তাঁদের বাদ দিয়ে বাকি দুই শিক্ষককে বিএলও করা হয়েছে। অভিভাবকদের বক্তব্য, তাহলে জানুয়ারির পরে ওই স্কুলে হিন্দি ও বাংলা মাধ্যম মিলিয়ে মাত্র এক জন শিক্ষক থাকবেন, তিনি প্রধান শিক্ষক।
কাঁকসা ব্লকের কৃষ্ণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দু’জন শিক্ষকের মধ্যে এক জনকে বিএলও করা হয়েছে। দুর্গাপুরের কুসুমতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, বিএলও-র তালিকা তৈরির সময়ে সেখানকার এক শিক্ষিকা মাতৃত্বকালীন ছুটিতে ছিলেন। সেই সময়ে স্কুলে শিক্ষক ছিলেন আরও চার জন। দু’জনকে বিএলও করা হয়েছে। তাঁদের এক জন চিরঞ্জিত ধীবর বলেন, ‘‘স্কুলে কাজ দিন দিন বাড়ছে। দৈনন্দিন কাজকর্মের পাশাপাশি, সংখ্যালঘু বৃত্তি প্রকল্পের নোডাল শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে থাকি। এর পরে বিএলও-র কাজ। শিক্ষকের দায়িত্ব কী ভাবে পুরোপুরি পালন করব, তা ভেবে মানসিক অশান্তিতে রয়েছি।’’ তাঁর দাবি, তাঁরা বুনিয়াদি শিক্ষায় যুক্ত। ভোট নেওয়ার সময়ে যেমন বিভিন্ন দফতর ও প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের কাজে লাগানো হয়, সে ভাবে বিএলও হিসাবেও তাঁদের কাজে লাগালে, প্রাথমিক স্কুলগুলির উপরে কম চাপ পড়ে।
‘উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর রাজ্য সম্পাদক ভাস্কর ঘোষ বলেন, ‘‘কোনও স্কুলে সব শিক্ষককে তুলে নেওয়া হয়েছে। কোথাও কোনও বিষয়ের একমাত্র শিক্ষককে নেওয়া হয়েছে। ফলে, পঠনপাঠন তো বটেই, স্কুলের দৈনন্দিন কাজকর্মও ব্যাহত হবে। ভুগতে হবে ছাত্রছাত্রীদের।’’ হাই স্কুলের শিক্ষকদেরও বিএলও করা হয়েছে। ফলে, সেখানেও পঠনপাঠনের সমস্যা হবে বলে আশঙ্কা করছেন সে সব স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা।
জেলা শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক যদিও বলেন, ‘‘স্কুলের কাজকর্ম যাতে স্তব্ধ হয়ে না যায়, সে ভাবেই বিএলও তালিকা তৈরি করা হয়েছে। বেশি সমস্যা হলে, বিকল্প কিছু করা যায় কি না, খতিয়ে দেখা হবে।’’