স্বচ্ছতার সঙ্গে নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রকাশ এবং ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) নামে আতঙ্ক ছড়ানো বন্ধের দাবিকে সামনে রেখে ১০টি বামপন্থী দল রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরের (সিইও) সামনে বিক্ষোভ দেখাল। এসআইআর সংক্রান্ত যাবতীয় বিধি ব্যাখ্যা করে পুস্তিকা প্রকাশের জন্যও কমিশনের কাছে দাবি জানালেন বিমান বসুরা। পাশাপাশি, তাড়াহুড়ো করে এসআইআর-এ কোনও ‘নির্দোষ’ ভোটারের নাম বাদ গেলে আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিল আর এক বিরোধী দল কংগ্রেস। দলের প্রদেশ, জেলা ও ব্লক কার্যালয়ে সাধারণ মানুষের সহায়তার জন্য ‘হেল্প ডেস্ক’ও খুলবে তারা।
সিপিএম, সিপিআই, সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন, আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক, এসইউসি-সহ ১০টি দলের ডাকে বুধবার বিবাদী বাগে বিক্ষোভ-সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন বাম নেতা-কর্মীরা। ছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান এবং বিভিন্ন বাম দলের তরফে মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী, ত্রিদিব ভট্টাচার্য, অভিজিৎ মজুমদার, স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, তপন হোড়, চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য প্রমুখ। পরে সিইও দফতরে দাবিপত্রও দিয়েছেন বাম নেতৃত্ব। বিক্ষোভ-সমাবেশ থেকে এসআইআর-এর নামে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি দ্বিমুখী আখ্যান তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে বলে সরব হয়েছেন বিমান। তিনি বলেছেন, “বিজেপি কমিশনকে ব্যবহার করছে আর তৃণমূল কমিশনকে আক্রমণ করছে। আসলে দু’পক্ষই এসআইআর নিয়ে দ্বিমুখী আখ্যান তৈরি করতে চাইছে। এটা বন্ধ করতে কমিশনকেই নির্দেশিকা জারি করতে হবে। কমিশনকে দলবাজির শিকার হওয়া চলবে না।” তাঁর সংযোজন, “প্রকৃত ভোটারের নাম বাদ যাওয়া চলবে না। মৃত ভোটার কেন বছরের পর বছর থাকবে? মানুষকে ভয় দেখিয়ে কখনও ভোটার তালিকা নির্ভুল করা যায় না।”
এসআইআর-কে সামনে রেখে বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভয় দেখানোর অভিযোগ তুলে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিম প্রশ্ন তুলেছেন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও। তিনি বলেছেন, “যারা নির্বাচন পরিচালন করছে, তারা নিরপেক্ষ নয়। আমাদের দেশে কেউ মারা গেলে, তাঁর রেশন কার্ড বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু তাঁর নাম ভোটার তালিকায় থাকে কী করে?” এই সূত্রেই আর জি কর হাসপাতালের নির্যাতিতা ও নিহত চিকিৎসকের নাম ভোটার তালিকায় থেকে যাওয়ার প্রসঙ্গও তুলেছেন তিনি। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজনেরও কটাক্ষ, “মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর জাল শংসাপত্র রয়েছে। আর দেশের মানুষকে বলছে কাগজ দেখাতে। বহু প্রান্তিক মানুষের কাছেই কাগজ নেই। কমিশনকে কে অধিকার দিয়েছে নাগরিকত্ব ঠিক করার?”
বুথ লেভল অফিসার (বিএলও) ও বুথ লেভল এজেন্টদের (বিএলএ) নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ২০২৪-সহ আরও কয়েকটি বছরের ভোটার তালিকাকে ‘ভিত্তি-বর্ষ’ হিসাবে মান্যতা দেওয়া, মৃতদের নাম বাদ দিতে দরকারে ‘ডেথ রেজিস্ট্রারে’র সাহায্য নেওয়া, আধার কার্ডকে পূর্ণ মান্যতা দেওয়া, এসআইআর-প্রক্রিয়া চলাকালীন জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (সিএএ) শিবির চালানো বন্ধের মতো বিভিন্ন দাবি তুলেছে বাম দলগুলি।
প্রদেশ কংগ্রেস জানিয়েছে, এসআইআর-এর গণনাপত্র পূরণ শুরুর আগের দিন, অর্থাৎ ৩ নভেম্বর থেকে রাজ্য জুড়ে দলের বিভিন্ন দফতরে হেল্প ডেস্ক খুলবে তারা। দেওয়া হবে আইনি সহায়তাও। মানুষকে সচেতন করতে লাগাতার জনসভা, মিছিলের আয়োজনও করা হবে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার বলেছেন, “বিহারের সময়েই বাংলায় এসআইআর শুরু করা হল না কেন? এত কম সময়ে এই কাজ করা হচ্ছে কেন? তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে কোনও নির্দোষ ভোটারের নাম বাদ গেলে তার দায়িত্ব কে নেবে? তেমন কিছু হলে আমরা আদালতে যেতে বাধ্য হব।’’ এর সঙ্গেই শুভঙ্কর, প্রদেশ কংগ্রেসের এসআইআর সংক্রান্ত দলীয় কমিটির চেয়ারপার্সন প্রসেনজিৎ বসু-সহ দলীয় নেতৃত্ব দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জ্ঞানেশ কুমারের কাছে এসআইআর-প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু পরিবর্তনের দাবি তুলে ফের লিখিত আর্জি জানিয়েছেন।