• বাড়ল পারিশ্রমিক, কমল কাজের সময়! টলিউড নিয়ে আর কী কী বড় ঘোষণা ইম্‌পা-ফেডারেশনের?
    আনন্দবাজার | ৩০ অক্টোবর ২০২৫
  • নতুন বছরের আগেই টালিগঞ্জের টেকনিশিয়ানদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধির যুগ্ম ঘোষণা ইম্‌পা-ফেডারেশনের। একই সঙ্গে কমল কাজের সময়সীমাও। তৈরি হচ্ছে বাংলা ছবিমুক্তির ‘ক্যালেন্ডার’। কোনও উৎসবকে ঘিরে ছবিমুক্তির সময়ে যাতে টলিউডে আর কোনও গন্ডগোল না বাধে, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে ছবিমুক্তির সংখ্যা।

    বুধবার ধর্মতলায় ইম‌্‌পা-র অফিসে সাংবাদিকদের সামনে এ রকমই একগুচ্ছ নতুন যুগ্ম ঘোষণা ইম্‌পা এবং ফেডারেশনের। দুই সংগঠনের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা করেন যথাক্রমে পিয়া সেনগুপ্ত এবং স্বরূপ বিশ্বাস। উপস্থিত ছিলেন প্রযোজক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, নিসপাল সিং রানে, অঙ্কুশ হাজরা, রানা সরকার, গোপাল মদনানি, নীলরতন দত্তের পক্ষ থেকে নীলাঞ্জন দত্ত, পরিবেশক শতদীপ সাহা-সহ টলিউডের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। এ বছরের বড়দিন এবং আগামী বছরের ২৩ জানুয়ারি তাঁদের ছবি মুক্তি পেলেও এ দিন বৈঠকে অনুপস্থিত দেব, রাজ চক্রবর্তী!

    সাংবাদিক বৈঠকের আগে এ দিন দফায় দফায় একাধিক বৈঠক হয় ইম‌্‌পা, প্রযোজক এবং ফেডারেশনের মধ্যে। ঠিক হয়, বাংলা ছবির স্বার্থে এক দিনে তিনটির বেশি ছবি মুক্তি পাবে না। সেই অনুযায়ী, এ বছরের বড়দিনে মুক্তি পাবে পূর্বঘোষিত ‘প্রজাপতি ২’, ‘মিতিনমাসি’ এবং শ্রীকান্ত মোহতা-মহেন্দ্র সোনির একটি ছবি। আগামী ২৩ জানুয়ারি মুক্তি পাবে ‘হোক কলরব’, শ্রীকান্ত-মহেন্দ্রের আর একটি ছবি এবং ‘ভানুপ্রিয়া ভূতের হোটেল’। স্বরূপ এবং পিয়া দু’জনেই জানান, ২৩ জানুয়ারি অঙ্কুশ হাজরা এবং ফিরদৌসল হাসানের একটি করে ছবি বাণিজ্যের কারণে পিছিয়ে গিয়েছে।

    নতুন নিয়মে, একটি বড় বাজেটের ছবিমুক্তির ১৫ দিনের মধ্যে মুক্তি পাবে না বড় বাজেটের আর একটি ছবি। প্রত্যেকটি ছবি দর্শক-সাফল্য প্রমাণ করার সুযোগ যাতে পায়, সে কারণেই এই নিয়ম। এ প্রসঙ্গে আনন্দবাজার ডট কম-কে স্বরূপ জানিয়েছেন, তবে দুটো বড় ছবির মাঝে ছোট বা নতুন প্রযোজক চাইলে তাঁদের কম বাজেটের ছবির মুক্তি দিতে পারবেন। তবে পুরোটাই আলোচনাসাপেক্ষ।

    বাংলা ছবির স্বার্থে তৈরি হয়েছে একটি নতুন বিভাগও। কোন প্রযোজক বছরে ক’টি করে ছবি বানাতে পারবেন, তার একটি তালিকা চাওয়া হয়েছিল। সেই তালিকা অনুযায়ী বছরে ছ’টি ছবি প্রযোজনার দায়িত্ব নিয়েছে এসভিএফ, সুরিন্দর ফিল্মস, নন্দী মুভিজ়। চারটি ছবি বানানোর তালিকায় উইন্ডোজ় প্রযোজনা সংস্থা, দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়া, সুরিন্দর ফিল্মস, ক্যামেলিয়া প্রোডাকশনের নাম। বছরে দুটো ছবি বানানোর কথা জানিয়েছেন জিৎ, পিয়া সেনগুপ্ত, অঙ্কুশ হাজরা। ছবি বানানোর সংখ্যা অনুযায়ী মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির প্রাইম টাইম শো পাবেন প্রযোজকেরা।

    আশ্চর্যজনক ভাবে তিনটি তালিকার একটিতেও নাম নেই দেব এন্টারটেনমেন্ট ভেঞ্চার্সের!

    প্রযোজক দেবের নাম কেন কোনও তালিকায় নেই? প্রশ্ন করা হয়েছিল পিয়া-স্বরূপকে। তাঁরা জানান, বৈঠক আরও হবে। তা ছাড়া, দেবের প্রযোজনা সংস্থার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও কিছুই জানানো হয়নি। তিনি যে ক’টি ছবি বানাবেন সেই অনুযায়ী তাঁর নাম তালিকাভুক্ত হবে। একই ভাবে রাজ চক্রবর্তীর পক্ষ থেকেও জানানো হয়নি, বছরে তাঁরা ক’টি ছবি করবেন।

    বৈঠকের দ্বিতীয় ভাগে উঠে এসেছে টেকনিশিয়ানদের পারিশ্রমিক, কাজের সময়সীমা, কম লগ্নির প্রযোজকদের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা-সহ নানা বিষয়। স্বরূপ আনন্দবাজার ডট কম-কে বলেছেন, “এর আগে ছোটপর্দার টেকনিশিয়ানদের ৩০ শতাংশ পারিশ্রমিক বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। এ বার ৩৩ শতাংশ পারিশ্রমিক বাড়ানো হল ব়ড়পর্দার টেকনিশিয়ানদের।”

    পাশাপাশি, কাজের সময়সীমা ২৪ ঘণ্টা থেকে বাড়িয়ে করা হল ১৮ ঘণ্টা। বলিউড যেখানে আট ঘণ্টা কাজের দাবি নিয়ে মুখর, সেখানে টলিউডে ১৮ ঘণ্টা কাজের সময়সীমা! প্রশ্ন রাখতেই পিয়ার বক্তব্য, “ফেডারেশনের সহযোগিতায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়েছে। কারণ, বাংলা বিনোদন দুনিয়ায় অনেক সীমাবদ্ধতা। সে সব পেরিয়ে কাজ করতে গেলে সময়সীমা বাড়ানোর সত্যিই প্রয়োজন।” উভয়ে এও জানিয়েছেন, আগে ২০-২১ ঘণ্টা করে কাজ করতেন সকলে। সেই সময়সীমা কমিয়ে ১৪ ঘণ্টা করা হয়েছিল। টলিউডের স্বার্থেই সেটি ১৮ ঘণ্টা করা হল। পাশাপাশি, কম লগ্নির প্রযোজকদের বাজেটের ঊর্ধ্বসীমা ৩০ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫ লক্ষ টাকা করার চিন্তাভাবনা করছে দুই সংগঠন। সেই সঙ্গে প্রযোজকদের জন্য থাকবে আরও কিছু সুবিধা। এই সুবিধা স্বাধীন পরিচালকেরাও পাবেন।

    এত দিন টেকনিশিয়ানদের স্বার্থে ফেডারেশনের থেকে নিয়ম ছিল, ছবিপিছু নির্দিষ্ট টেকনিশিয়ানদের নিতেই হবে। সেই নিয়মই কি বহাল থাকছে? স্বরূপের দাবি, এই নিয়ে প্রযোজকদের কোনও আপত্তি নেই। আপত্তি জানিয়েছেন মুষ্টিমেয় কিছু পরিচালক। তাঁরা আদতে পরিচালক না প্রযোজক— সেটা অবশ্য জানেন না তিনি।

    ফেডারেশন সভাপতিকে কথাপ্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল অনির্বাণ ভট্টাচার্য সম্পর্কেও। না অভিনয়, না পরিচালনা, না গান— কোনও বিভাগ থেকেই কাজের ডাক পাচ্ছেন না তিনি। তাঁর ভবিষ্যৎ কি ফেডারেশনের হাতে? স্বরূপের জবাব, “বিষয়টি বিচারাধীন। তাই এই নিয়ে কোনও কথা বলতে পারব না।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)