• এআই-ও হচ্ছে মানবিক, সৌজন্যে সফট কম্পিউটিং
    এই সময় | ৩০ অক্টোবর ২০২৫
  • এই সময়: আপনার গৃহসহায়ক রোবটের নাম ধরা যাক অনুকূল। সে রোজ আপনাকে রেঁধে খাওয়ায়। আপনি যদি তাকে এক দিন বলেন, ‘অনুকূল আজ মাছের ঝোলটা একটু কম ঝাল করে বানিও।’ এই ‘কম ঝাল’ কথাটির মানে সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ বক্সির চাকর পুঁটিরাম সহজেই বুঝে নেবেন, এবং তৈরিও করে দেবেন। কিন্তু প্রচলিত কম্পিউটার প্রোগ্রাম কিন্তু এ রকম অস্পষ্ট নির্দেশ বুঝতে পারে না। ‘কম ঝাল’ মানে কতটা কম, অর্থাৎ কতগুলি লঙ্কা বা কতটা লঙ্কাগুঁড়ো তা স্পষ্ট করা অনুকূলের পক্ষে সহজ নয়। এমন পরিস্থিতিতেই দরকার হয় এমন এক কম্পিউটিং পদ্ধতির, যা মানুষের মতো করে যুক্তি নির্ভর, অঙ্ক নির্ভর নয়। যা আন্দাজ করতে পারে এবং অনিশ্চিত তথ্য নিয়েও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এই ক্ষমতাকেই বলা হয় ‘সফ্ট কম্পিউটিং’।

    বুধবার, কলকাতার ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট (আইএসআই)-এর প্ল্যাটিনাম জুবিলি অডিটোরিয়ামে আয়োজন করা হয়েছিল ‘দ্য সিম্পোজ়িয়াম অন আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স’-এর। এর মূল বিষয় ছিল, ‘টু ডেকেডস অফ দ্য সেন্টার ফর সফ্ট কম্পিউটিং রিসার্চ (সিএসসিআর): ডিপ লার্নিং অ্যান্ড গ্র্যানিউলার কম্পিউটিং’। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইএসআই-কলকাতার সভাপতি অধ্যাপক শঙ্কর কুমার পাল, ট্রিপল আইটি-ভূবনেশ্বর-এর অধিকর্তা অধ্যাপক আশিসকুমার ঘোষ, রাজ্যের বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও জৈবপ্রযুক্তি মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস এবং রাজ্য কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং দক্ষতা উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারপার্সন পূর্ণেন্দু বসু। উদ্বোধনের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুভেচ্ছাবার্তা পাঠ করা হয়, যেখানে তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিরাট সম্ভাবনাকে মানবকল্যাণের কাজে লাগানোর আহ্বান জানান এবং তার অপব্যবহার রোধে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

    সিএসসিআর-এর পক্ষে অধ্যাপক কুন্তল ঘোষ বলেন, সফ্ট কম্পিউটিং আজকের গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু— এটি এআই-কে দিয়েছে এক মানবিক মাত্রা। শঙ্করকুমার পাল জানান, ১৯৭০-এর দশক থেকেই আইএসআই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণায় পথপ্রদর্শক। এআই-এর একটি বিশেষ ধারা হলো সফ্ট কম্পিউটিং। আশিস ঘোষ বলেন, ‘২০০৪ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের সহায়তায় সিএসসিআর তৈরি হওয়ার পরে সারা দেশে সফ্ট কম্পিউটিং গবেষণার জগৎকে বিস্তার দিয়েছিল। যখন এই গবেষণা কেন্দ্র তৈরি হয়, তখন সফ্ট কম্পিউটিং নিয়ে গবেষণা কেবলমাত্র আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া এবং ইউরোপের স্পেনে হতো। উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেমন অসীম সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে, তেমনই এর দায়িত্বশীল ব্যবহারের প্রয়োজনও সমানভাবে জরুরি।’

    অনুষ্ঠানে বক্তারা স্পষ্ট করেন যে, সফ্ট কম্পিউটিং শুধু যান্ত্রিক বুদ্ধিমত্তা নয়, যা মানুষের মস্তিষ্কের মতো করে কাজ করতে শেখে। সেই রোবটের মতো, যে ‘কম ঝাল’ মাছের ঝোল বানাতে শেখে। সফ্ট কম্পিউটিং ঠিক তেমনই কম্পিউটারকে শেখাচ্ছে বোঝার, শেখার ও চিন্তা করার এক নতুন ভাষা। প্রচলিত বা হার্ড কম্পিউটিং ব্যবস্থায় সব কিছুই নির্দিষ্ট ও সঠিক হতে হয়। কোনও সমীকরণে একটি সংখ্যা ভুল হলে পুরো হিসেব তালগোল পাকিয়ে যায়। সফ্ট কম্পিউটিং ঠিক এমন পরিস্থিতিতেই কাজ করে, যেখানে নির্ভুল তথ্যের চেয়ে যুক্তিভিত্তিক অনুমান বেশি কার্যকর। এই পদ্ধতির মূল দর্শন হলো, ‘প্রায় সঠিক হওয়াই যথেষ্ট।’

  • Link to this news (এই সময়)