মারাত্মক অভিযোগ পুলিশের, আরও চাপে উমর খালিদ-শারজিল ইমামরা...
আজকাল | ৩০ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিল্লি পুলিশ ২০২০ সালের দিল্লি হিংসা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত উমর খালিদ, শারজিল ইমাম, মীরান হায়দার, গলফিশা ফাতিমা এবং অন্যান্যদের জামিনের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে একটি হলফনামা দাখিল করবে। তাতে কী থাকবে? পুলিশ দাবি করেছে যে, ২০২০ সালে দিল্লির বুকে হিংসা ছিল শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে একটি পরিকল্পিত অভিযান।
পুলিশের মতে, পাঁচ বছর আগের সেই হিংসা স্বতঃস্ফূর্ত ছিল না। হলফনামায় পুলিশের দাবি, দেশের শান্তি বিঘ্নিত করার এবং বিশ্বব্যাপী ভারতের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য ২০২০ সালের হিংসা খুব সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পিত প্রচেষ্টা ছিল।
দিল্লি হাইকোর্ট ২০২০ সালের হিংসার সঙ্গে সম্পর্কিত বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন (ইউএপিএ) মামলায় জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রনেতা উমর খালিদ, শারজিল ইমাম এবং অন্যান্যদের জামিন অস্বীকার করার পর এই আগ্রগতির বিষয়ে জানা গিয়েছে।
পুলিশ বলেছে যে, তারা সাক্ষীদের বক্তব্য, নথি এবং প্রযুক্তিগত প্রমাণ সংগ্রহ করেছে, যা অভিযুক্তদের "সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে তৈরি গভীর ষড়যন্ত্রের" উদ্দেশ্য স্পষ্ট করেছে।
পুলিশ বলেছে যে, নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন (সিএএ)-এর বিরুদ্ধে মতবিরোধকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে "ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতার উপর আঘাত করার জন্য" ২০২০ সালে অস্থিরতা তৈরি করা হয়েছিল।
স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ নয়দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে যে, আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এবং দেশকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরার লক্ষ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ভারত সফরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই এই হিংসা সংঘটিত হয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, সিএএ ইস্যুটিকে "শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের ছদ্মবেশে উগ্রপন্থী অনুঘটক হিসেবে কাজ করার জন্য সাবধানতার সঙ্গে বেছে নেওয়া হয়েছিল।"
ইচ্ছাকৃত বিলম্বদিল্লি পুলিশ উমর খালিদ, শারজিল ইমাম, মীরান হায়দার এবং গলফিশা ফাতিমা-সহ আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে "অযৌক্তিক আবেদন" এবং "সমন্বিত অসহযোগ" বলে অভিহিত করে বিচার কার্যক্রমকে পরিকল্পিতভাবে বিলম্বিত করার অভিযোগ তুলেছে। হলফনামা অনুসারে, অভিযুক্তরা নিম্ন আদালতকে অভিযোগ গঠন এবং বিচার শুরু করতে বাধা দেওয়ার জন্য "প্রক্রিয়ার নির্লজ্জ অপব্যবহার" করেছে। পুলিশের যুক্তি, বিচার প্রক্রিয়ায় বিলম্বের জন্য তদন্তকারী সংস্থাগুলি নয়, অভিযুক্তরা নিজেরাই দায়ী।
'জামিন নয়, জেলই নিয়ম'বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন (ইউএপিএ) প্রয়োগ করে দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে যে, সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুতর অপরাধের জন্য "জামিন নয়, জেল" হল নিয়ম। হলফনামায় দাবি করা হয়েছে যে, অভিযুক্তরা প্রাথমিকভাবে অপরাধের অনুমানকে অসত্য বলে প্রমাণে বা খণ্ডণে ব্যর্থ হয়েছে এবং অপরাধের গুরুত্ব কেবল বিচারের বিলম্বের কারণে লঘু হয়ে যাবে এমনটা হয় না।
পুলিশ অব্যবস্থাপনাযোগ্য সাক্ষীর তালিকা সম্পর্কে দাবি খারিজ করে দিয়েছেন। পুলিশ স্পষ্ট করে বলেছে যে- মাত্র ১০০-১৫০ জন সাক্ষীই গুরুত্বপূর্ণ এবং অভিযুক্তরা সহযোগিতা করলে দ্রুত বিচার শেষ করা সম্ভব।
বিশ্বব্যাপী দৃষ্টি আকর্ষণের পরিকল্পনাডোনাল্ড ট্রাম্পের উল্লেখ করে চ্যাট বার্তা-সহ পুলিশ প্রমাণ উদ্ধৃত করে যুক্তি দিয়েছে যে, দিল্লির বুকে পূর্বপরিকল্পিত ছিল এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। পুলিশ বলেছে যে, হিংসা আন্তর্জাতিক মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য এবং সিএএ ইস্যুটিকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে লক্ষ্যবস্তু হিসাবে চিত্রিত করে "বিশ্বব্যাপী" তা প্রচার করার জন্য করা হয়েছিল।
ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং জাতীয় প্রভাবপুলিশের মতে, দিল্লির বুকে ওই ষড়যন্ত্রের ফলে ৫৩ জন নিহত হয়েছিলেন, ব্যাপকভাবে সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করা হয়েছিল। শুধুমাত্র দিল্লিতেই ৭৫০ টিরও বেশি এফআইআর দায়ের করা হয়। তাদের দাবি, রেকর্ডে থাকা তথ্যগুলি ভারতজুড়ে অস্থিরতার পুনরাবৃত্তি করার চেষ্টার ইঙ্গিত দেয়, যা একটি বিস্তৃত, সর্ব-ভারতীয় হিংসার পরিকল্পনার দিকে ইঙ্গিত করে।