• পরিকল্পনাহীন টাকা নষ্ট বিজেপি সরকারের, কৃত্রিম বৃষ্টি নামাতে কোটি কোটি খরচ করেও দিল্লি সেই তিমিরেই ...
    আজকাল | ৩০ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিল্লি। প্রতিবছর এই সময়টায় একগুচ্ছ সমস্যা এবং সেসব সমস্যা সমাধান করতে না পেরে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে প্রশাসন। এবছর আরও চর্চা, কোটি কোটি খরচ নিয়ে। যাতে আদতে লাভ হল না কিছুই।

    বায়ুদূষণ রোধে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ, গত কয়েক বছর ধরেই দিল্লি বৃষ্টিনামাতে মেঘের বীজ বপন করে। সোজা কথায় ক্লাউড সিডিং। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মঙ্গলবার হয় দিল্লির প্রথম ক্লাউড সিডিং ট্রায়াল। কিন্তু মেঘের গায়ে মেঘের বীজ বপন, আদতে কোনও লাভ হল না। কোটি কোটি টাকা খরচের পরেও, এক ফোঁটা বৃষ্টি হল না দিল্লিতে। ফলে, দিল্লির ঘন ধোঁয়াশা ও দূষিত বাতাস আগের মতোই ভারী রইল।

    কেন বৃষ্টি হল না ক্লাউড সিডিংয়ের পরেও?রূপালী আয়োডাইডের গঠন বরফের মতো। এই ক্ষুদ্র কণাগুলি “বীজ”-এর মতো কাজ করে, যার চারপাশে জলবিন্দু জমা হয়। যখন পর্যাপ্ত বিন্দু একত্রিত হয়, তারা ভারী হয়ে বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়ায়। কিন্তু মঙ্গলবারের এই পরীক্ষায় এক ফোঁটা বৃষ্টিও হয়নি। অধিকাংশ এলাকায় বায়ুমানের অবস্থাও অপরিবর্তিত রয়ে যায়।

    বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ব্যর্থতা ছিল অনিবার্য। কারণ, ক্লাউড সিডিং নির্ভর করে আবহাওয়ার উপর—বিশেষত আর্দ্রতা ও বৃষ্টিবাহী মেঘের উপস্থিতির উপর। শীতকালে দিল্লির আকাশ সাধারণত শুষ্ক থাকে। মঙ্গলবারও যদিও আকাশ মেঘলা ছিল, তবুও মেঘে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল মাত্র ১০-১৫%, যেখানে সফল ক্লাউড সিডিংয়ের জন্য প্রয়োজন ৫০-৬০% আর্দ্রতা। আইআইটি কানপুরের প্রতিবেদনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, “মেঘে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা না থাকায় এটি আদর্শ পরিস্থিতি ছিল না।”

    কিন্তু খরচ হল কোটি কোটি-

    আইআইটি কানপুরের পরিচালক মণীন্দ্র আগরওয়ালের মতে, ২৮ অক্টোবর ৩০০ বর্গকিলোমিটারেরও বেশি জায়গায় পরিচালিত দুটি কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর পরীক্ষার মোট খরচ প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা। প্রতি বর্গকিলোমিটারের হিসেবে খরচের পরিমাণ প্রায় ২০,০০০ টাকা। শীতকালে, যখন দিল্লির বাতাস বিষাক্ত হয়ে ওঠে এবং ধুলো আকাশরেখাকে ঝাপসা করে দেয়, তখন এই ধরনের পাঁচটি পরীক্ষার জন্য দিল্লি সরকার ৩.২১ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করেছে। যদিও, দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী মনজিন্দর সিং সিরসা বলেছেন, আইআইটি কানপুর এই বাজেট থেকে পাঁচটি নয়, মোট ন'টি পরীক্ষা করবে।

    কিন্তু প্রশ্ন উঠছে অন্য জায়গায়। ৩.২১ কোটি টাকার ন'টি ট্রায়ালের জন্য বরাদ্দা হলে, প্রতিটি ট্রায়ালে প্রায় ৩৫.৬৭ লক্ষ টাকা খরচ হওয়ার কথা। সুতরাং, তিনটি ট্রায়াল ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। এতে ইতিমধ্যে ১.০৭ কোটি টাকা ইতিমধ্যেই খরচ হয়ে গেছে। কিন্তু দিল্লিতে একফোঁটাও বৃষ্টি হয়নি। আইআইটি কানপুরের ডিরেক্টর আবার বলছেন, গোটা শীত জুড়ে দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অন্তত ১০টি ট্রায়াল করতে হবে। যেভাবে তা সম্পন্ন করা হবে, তাতে ২৫ থেকে ৩০ কোটিও খরচ হতে পারে। এই বিপুল খরচ করা হচ্ছে যে উদ্দেশ্যে, সেই উদ্দেশ্যই যখন সফল হচ্ছে না, তাহলে এই বড় অঙ্কের খরচে আদতে কী লাভ হচ্ছে দিল্লিবাসির? বিজেপি সরকার তাহলে কেনই বা পরিস্থিতি বিচার না করে এই বড় অঙ্কের খরচের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল? 

    অন্যদিকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের মতামত। তাঁরা দিল্লি সরকারকে দীর্ঘমেয়াদী, প্রমাণিত সমাধানের পরিবর্তে বায়ু দূষণ নিরসনের জন্য একটি শর্টকাট পদ্ধতি অবলম্বন করার জন্য কটাক্ষ, সমালোচনা করেছেন। 

     
  • Link to this news (আজকাল)