• ফুসফুসের চিকিৎসায় ঐতিহাসিক সাফল্য এনআরএস হাসপাতালের, রাজ্যে প্রথমবার সফল ‘হোল লাং ল্যাভেজ’ অস্ত্রোপচার...
    আজকাল | ৩০ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: চিকিৎসায় সেরার সেরা কলকাতা, তা আবারও প্রমাণ করল নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (এনআরএস)। রাজ্যের চিকিৎসাক্ষেত্রে নতুন ইতিহাস গড়ল এনআরএস। প্রথমবার এই সরকারি হাসপাতালে সফলভাবে সম্পন্ন হল বিরল ও জটিল ফুসফুসজনিতরোগ ‘পালমোনারি অ্যালভিওলার প্রোটিনোসিস (Pulmonary Alveolar Proteinosis– PAP)’-এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত ‘হোল লাং ল্যাভেজ (Whole Lung Lavage– WLL)’ প্রক্রিয়া। রাজ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থায় এটি নিঃসন্দেহে এক গর্বের মুহূর্ত। যা ভবিষ্যতে আরও উন্নত ইন্টারভেনশনাল পালমোনোলজির পথ প্রশস্ত করবে।

    ৩৩ বছর বয়সী এক পুরুষ রোগী গত কয়েক মাস ধরে ক্রমাগত শ্বাসকষ্ট ও কাশি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। বিভিন্ন পরীক্ষার পর চিকিৎসকরা দেখতে পান, তাঁর ফুসফুসের ক্ষুদ্র বায়ুথলিগুলি প্রোটিন জাতীয় পদার্থে ভরে গিয়েছে। যার ফলে বাতাস চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। পরীক্ষায় পজিটিভ ব্রঙ্কোঅ্যালভিওলার ল্যাভেজ (BAL) এবং ট্রান্সব্রঙ্কিয়াল লাং বায়োপসি (TBLB) রিপোর্টে রোগ নির্ণয় নিশ্চিত হয়।

    এই রোগের একমাত্র কার্যকর চিকিৎসা হল ‘হোল লাং ল্যাভেজ’। যা অত্যন্ত জটিল এবং নিখুঁত দলগত সমন্বয় ছাড়া সম্ভব নয়। এনআরএস হাসপাতালের পালমোনোলজি বিভাগ ও কার্ডিওথোরাসিক ভাসকুলার অ্যানেস্থেশিয়া (CTVA) বিভাগ যৌথভাবে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে রাজ্যে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। চিকিৎসকরা জানান, রোগীকে জেনারেল অ্যানেস্থেসিয়ার অধীনে রেখে ডাবল-লুমেন টিউব ব্যবহার করে ডান ফুসফুসটি ১৫ লিটার গরম স্যালাইন দিয়ে ধোওয়া হয়। এই প্রক্রিয়া ততক্ষণ চলতে থাকে, যতক্ষণ না ফুসফুস থেকে নির্গত তরল সম্পূর্ণ স্বচ্ছ হয়ে ওঠে। যা ফুসফুসের বায়ুথলিগুলিকে কার্যকরভাবে ‘পরিষ্কার’ করে দেয়। পুরো প্রক্রিয়া চলাকালীন রোগীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ছিল বলে চিকিৎসক সূত্রে জানা গিয়েছে। আগামী সপ্তাহে তাঁর বাঁ ফুসফুসের ল্যাভেজ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

    এই সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন হাসপাতালের দু’টি বিভাগের নেতৃত্ব এবং তাঁদের নিষ্ঠাবান দলগত কর্মযজ্ঞ। হাসপাতালের পালমোনোলজি বিভাগের অধ্যক্ষ ডা. জয়দীপ দেবের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে চিকিৎসকদলটি এই বিরল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। সিটিভিএ বিভাগেরক অধ্যক্ষ ডা. শম্পা দত্তগুপ্ত নিখুঁত অ্যানেস্থেটিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। এই দুই বিভাগের পাশাপাশি প্রসিডিউরাল, অ্যানেস্থেসিয়া ও আইসিইউ টিমের নিরলস প্রচেষ্টা ও একাগ্রতা ছাড়া এই সাফল্য সম্ভব হত না, বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

    এনআরএস-এর এই সাফল্য প্রমাণ করে যে, সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মধ্যেও সীমিত সম্পদে উন্নতমানের চিকিৎসা প্রযুক্তি প্রয়োগ করা সম্ভব। চিকিৎসক মহলের একাংশের মতে, এটি শুধু একটি চিকিৎসা প্রক্রিয়ার সাফল্য নয়, বরং সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার দলগত মনোভাব, দক্ষতা ও উদ্ভাবনী চিন্তার দৃষ্টান্ত স্থাপন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, রোগী বর্তমানে স্থিতিশীল আছেন এবং চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

    এক চিকিৎসক বলেন, “এই সাফল্য এনআরএস-এর ইতিহাসে এক মাইলফলক।” 
  • Link to this news (আজকাল)