স্কুল থেকে ফিরছিলেন শিক্ষিকা, ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়েছিল ওরা, জোর করে একে একে খুলে নেওয়া হল পোশাক, তারপর যা হল....
আজকাল | ৩১ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: কর্ণাটকের চিক্কমাগালুরু জেলার কপ্পা তালুকের বাসারিকাট্টে গ্রামের কাছে ঘটেছে এক রোমহর্ষক ও নির্মম ঘটনা। এক ২৫ বছর বয়সী সরকারি স্কুলের শিক্ষিকাকে গাছে বেঁধে নগ্ন করে পিটিয়ে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে একদল অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে। এই ভয়াবহ ঘটনায় গোটা এলাকা স্তম্ভিত ও ক্ষুব্ধ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আক্রান্ত তরুণী কোগরে শান্তিগ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। প্রতিদিনের মতোই বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি স্কুল ছুটি হওয়ার পর বাড়ি ফিরছিলেন। সেই সময় বাসারিকাট্টে গ্রামের সংলগ্ন এলাকায় কয়েকজন দুষ্কৃতী তাঁর পথ রোধ করে আক্রমণ চালায়। তারা তাঁকে জোর করে গাছে বেঁধে নগ্ন করে নির্মমভাবে মারধর করে বলে অভিযোগ।
শিক্ষিকার চিৎকারে আশপাশের গ্রামবাসী ও পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তবে ততক্ষণে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় শিক্ষিকাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে শিবমোগ্গার মেগগান হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আপাতত তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল, তবে মানসিকভাবে তিনি মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত ও আতঙ্কিত অবস্থায় রয়েছেন।
ঘটনার খবর পেয়ে জয়াপুরা থানার পুলিশ দ্রুত তদন্ত শুরু করেছে। ঘটনাস্থলে ইতিমধ্যেই কপ্পা মহকুমার ডিএসপি-সহ পুলিশ আধিকারিকরা পরিদর্শন করেছেন। অপরাধীদের শনাক্ত করতে একাধিক দল গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ ও মোবাইল টাওয়ারের তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ওই শিক্ষিকার সঙ্গে কারও কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতা বা বিবাদ ছিল না। ফলে পুলিশ বিভিন্ন দিক থেকে তদন্ত চালাচ্ছে—এটি পরিকল্পিত হামলা ছিল কি না, নাকি প্রতিশোধমূলক কোনো ঘটনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এই নৃশংস ঘটনায় সমগ্র জেলায় নিন্দার ঝড় উঠেছে। শিক্ষক সংগঠন, মহিলা সংগঠন এবং স্থানীয় প্রশাসন তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। স্থানীয় শিক্ষা দপ্তর পুলিশের কাছ থেকে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট চেয়েছে এবং আক্রান্ত শিক্ষিকার পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে।
কপ্পা অঞ্চলের শিক্ষক সংগঠনের এক সদস্য বলেছেন, “এটি শুধু এক মহিলার উপর আক্রমণ নয়, এটি সমাজে নারী নিরাপত্তা নিয়ে এক ভয়াবহ সতর্কবার্তা। বিশেষ করে যেসব মহিলা শিক্ষক প্রত্যন্ত এলাকায় কাজ করেন, তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।”
অন্যদিকে, বিভিন্ন মহিলা সংগঠন দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে এবং এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার আহ্বান জানিয়েছে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, চিক্কমাগালুরু—যা কফি বাগান ও শান্ত পাহাড়ের জন্য পরিচিত—সেখানে এমন বর্বরতা আগে কখনও দেখা যায়নি। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমরা এই এলাকায় এমন নিষ্ঠুর ঘটনা কখনও দেখিনি। সবাই আতঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ।”
বর্তমানে পুলিশ তদন্ত জোরদার করেছে এবং আশ্বাস দিয়েছে যে মামলাটিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে দেখা হচ্ছে। অপরাধীদের পরিচয় ও হামলার উদ্দেশ্য এখনও পরিষ্কার নয়। তবে প্রশাসন জানিয়েছে, দোষীরা যেই হোক, তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
এদিকে, হাসপাতালে শুয়ে থাকা তরুণ শিক্ষিকার ধীরে ধীরে সেরে ওঠা আক্রান্ত পরিবারের কাছে সামান্য স্বস্তির বিষয়। কিন্তু গোটা জেলাজুড়ে এখনও বিরাজ করছে তীব্র ক্ষোভ ও আতঙ্ক। মানবিকতার সীমা লঙ্ঘন করা এই বর্বর ঘটনার পর চিক্কমাগালুরুর বিবেক যেন রক্তাক্ত হয়ে উঠেছে।