ভারতের বাজারে খেলা শুরু করল স্টারলিংক, ভয়ে কাঁপছে বাকিরা
আজকাল | ৩১ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইলন মাস্কের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট কোম্পানি স্টারলিংক স্যাটেলাইট কমিউনিকেশনস প্রাইভেট লিমিটেড আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতে তাদের কাজ শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। চলতি সপ্তাহে কোম্পানিটি মুম্বইয়ে প্রযুক্তিগত ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত ডেমো রান শুরু করেছে, যা দেশের বাজারে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা চালুর পথে তাদের প্রথম বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মুম্বইয়ে প্রথম অফিসস্টারলিংক সম্প্রতি মুম্বইয়ের চাঁদিভালি এলাকায় প্রায় ১,২৯৪ বর্গফুট অফিস স্পেস ভাড়া নিয়েছে। এই চুক্তির মূল্য প্রায় ২.৩৩ কোটি টাকা, মেয়াদ পাঁচ বছর। এটি ভারতে স্টারলিংকের প্রথম আনুষ্ঠানিক অফিস, যা কোম্পানির ভারতীয় বাজারে প্রবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই অফিস থেকেই সংস্থাটি ভবিষ্যতের সম্প্রসারণ, নিয়ন্ত্রক অনুমোদন এবং বাজার কৌশল নির্ধারণ করবে।
৩০ ও ৩১ অক্টোবর মুম্বইয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে স্টারলিংকের প্রযুক্তিগত ডেমো রান, যেখানে সংস্থাটি তাদের স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কের কার্যক্ষমতা প্রদর্শন করছে। পরীক্ষামূলক এই উদ্যোগের মাধ্যমে দেখানো হচ্ছে কীভাবে স্টারলিংকের প্রযুক্তি দূরবর্তী বা দুর্গম এলাকাতেও দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সরবরাহ করতে সক্ষম — যেখানে প্রচলিত ব্রডব্যান্ড সংযোগ পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়।
সম্প্রসারণ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাবিভিন্ন প্রতিবেদনে জানা গেছে, স্টারলিংক ভারতের নয়টি শহরে গেটওয়ে স্টেশন স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। এই শহরগুলির মধ্যে রয়েছে মুম্বই, নয়ডা, চণ্ডীগড়, কলকাতা এবং লখনউ। এই গেটওয়ে স্টেশনগুলো স্যাটেলাইট সংকেতকে ব্যবহারকারীদের সাথে সংযুক্ত করবে, ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দ্রুত গতির ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদান সহজতর হবে।
ভারতের টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি বর্তমানে স্যাটেলাইট-ভিত্তিক পরিষেবার জন্য মূল্য নির্ধারণ সংক্রান্ত নীতি তৈরি করছে। TRAI-এর এই কাঠামো চূড়ান্ত হলেই স্টারলিংক ২০২৬ সালের শুরুতেই সম্ভাব্যভাবে জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে — বাণিজ্যিক পরিষেবা চালু করতে পারে।
সরকারি অনুমোদনের অপেক্ষাবর্তমানে স্টারলিংক ভারতের সরকার ও সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে বাণিজ্যিক অনুমোদন ও স্পেকট্রাম ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। একবার এই অনুমোদন মিলে গেলে, সংস্থাটি ভারতের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট বাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবেশ করবে। এই মুহূর্তে ভারতের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট খাত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে স্টারলিংকের প্রবেশের ফলে এই খাতে বড় ধরনের প্রতিযোগিতা তৈরি হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভারতের ডিজিটাল ভবিষ্যৎপ্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, স্টারলিংকের আগমন ভারতের ডিজিটাল অবকাঠামোয় এক নতুন যুগের সূচনা করতে পারে। গ্রামীণ ও দুর্গম অঞ্চলে যেখানে ফাইবার বা কেবল ইন্টারনেট পৌঁছানো কঠিন, সেখানে স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট মানুষকে নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ দেবে। এটি ডিজিটাল বিভাজন কমাতে সাহায্য করবে এবং দেশের কোটি কোটি মানুষকে উন্নত অনলাইন পরিষেবা, শিক্ষা, ই-হেলথ এবং ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার আওতায় আনবে।
ভারতে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং ডিজিটাল ইন্ডিয়ার লক্ষ্য পূরণের পথে স্টারলিংকের এই পদক্ষেপকে অনেকেই একটি গেম-চেঞ্জার বলে মনে করছেন।