ভারতে এবার আসছে কড়া শীত, আশঙ্কা বাড়ছে বিশেষজ্ঞদের
আজকাল | ৩১ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতে চলতি বছর শীতের আমেজ আরও জোরালো হতে পারে। আবহাওয়াবিদদের মতে, প্রশান্ত মহাসাগরে ‘লা নিনা’ (La Niña) অবস্থা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল, যার সরাসরি প্রভাব পড়বে দক্ষিণ এশিয়ার আবহাওয়ার ওপর। এই কারণে ভারতজুড়ে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই কমে যেতে পারে, বিশেষ করে উত্তর ও মধ্য ভারতে।
কী এই ‘লা নিনা’?‘লা নিনা’ স্প্যানিশ শব্দ, যার অর্থ “ছোট মেয়ে”। এটি পৃথিবীর অন্যতম প্রধান আবহাওয়াগত ঘটনা (climatic phenomenon), যা এল নিনো (El Niño)-এর বিপরীত রূপ। এল নিনো যেখানে প্রশান্ত মহাসাগরের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দেয়, সেখানে লা নিনা সেই তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়। এর ফলে বাতাসের প্রবাহ, বৃষ্টিপাতের ধরণ, এমনকি শীতের তীব্রতাও বদলে যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, লা নিনা অবস্থায় প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বাংশের জল ঠান্ডা হয়ে যায়, এবং এই ঠান্ডা জলের প্রভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে শীতল বায়ুপ্রবাহ বৃদ্ধি পায়। দক্ষিণ এশিয়ায় এর ফলস্বরূপ দেখা যায় দীর্ঘস্থায়ী ও কঠোর শীতকাল।
ভারতে কী প্রভাব পড়বে?ভারতের আবহাওয়া দপ্তর (IMD)-এর প্রাথমিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০২৫ সালের শেষের দিক থেকে ২০২৬ সালের শুরুর মাসগুলিতে লা নিনা সক্রিয় হতে পারে। এর ফলে দেশের উত্তর-পশ্চিম, হিমালয় সংলগ্ন অঞ্চল, মধ্য ভারত এবং এমনকি পূর্ব ভারতের কিছু অংশে তাপমাত্রা গড়ের তুলনায় ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
দিল্লি, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং মধ্যপ্রদেশে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে ঠান্ডার তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে পারে। এমনকি কিছু জায়গায় ঘন কুয়াশা, শৈত্যপ্রবাহ ও তাপমাত্রা পতনের কারণে জনজীবন ব্যাহত হতে পারে।
কৃষি ও অর্থনীতিতে প্রভাবলা নিনা শুধু শীত নয়, বরং কৃষি ও অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সময়ে শীতের মাত্রা বাড়লে রবি ফসল যেমন গম, সরিষা, মটরশুঁটি ইত্যাদির জন্য উপকারী হতে পারে। ঠান্ডা আবহাওয়া ফসলের মান ও উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত ঠান্ডা বা অকাল বৃষ্টিপাত হলে বিপরীত প্রভাবও পড়তে পারে। পাশাপাশি পর্যটন, বিদ্যুৎ খরচ এবং পরিবহন ব্যবস্থাতেও শীতের প্রভাব দেখা যাবে।গত তিন বছরে এল নিনো এবং লা নিনা পর্যায়ের মধ্যে ঘন ঘন পরিবর্তন দেখা গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই প্রাকৃতিক ঘটনা এখন আরও অনিশ্চিত ও অনিয়মিত হয়ে উঠছে। ফলে মৌসুমী পূর্বাভাসও আগের তুলনায় জটিল হয়ে পড়েছে।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (WMO)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২5 সালের শেষ নাগাদ লা নিনা সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা ৭৫ শতাংশের বেশি। আবহাওয়া দপ্তর নাগরিকদের আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের ব্যবস্থা, গরম রাখার উপায়, এবং শিশু ও প্রবীণদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, ভ্রমণ ও কৃষিকাজের সময় স্থানীয় আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুসরণ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, “লা নিনা” ভারতের জন্য একদিকে যেমন তীব্র শীতের ইঙ্গিত দিচ্ছে, তেমনি এটি হতে পারে কৃষি উৎপাদনের পক্ষে একটি ইতিবাচক সুযোগও। তবে অতিরিক্ত শীত ও অনিশ্চিত আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে সতর্ক থাকা জরুরি।