মোদি সরকারের বিরুদ্ধে জয়রাম রমেশের তীব্র আক্রমণ...
আজকাল | ৩১ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: নরেন্দ্র মোদি সরকারের নতুন শ্রমনীতি খসড়া নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা জয়রাম রমেশ বৃহস্পতিবার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন যে, সরকার দেশের শ্রমনীতিকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এর আদর্শে ঢেলে সাজাতে চাইছে।
এই অভিযোগের সূত্রপাত ‘শ্রম শক্তি নীতি ২০২৫’-এর খসড়া প্রকাশের পর। চলতি অক্টোবরের শুরুতে জনমত সংগ্রহের জন্য প্রকাশিত ওই নীতিপত্রে এক অংশে বলা হয়েছে, “মনুস্মৃতিতে আধুনিক শ্রম আইনের বহু শতাব্দী আগেই ভারতের সভ্যতাগত পরিসরে শ্রম শাসনের নৈতিক ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছিল।”
এই বক্তব্যকেই কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ ‘গভীরভাবে প্রতিক্রিয়াশীল’ এবং ভারতের সংবিধানের আত্মার পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর কথায়, “মনুস্মৃতির নীতিতে ফিরে যাওয়া মানে সমতা, ন্যায় ও ধর্মনিরপেক্ষতার মূল চেতনার প্রতি আঘাত হানা।”
রমেশ আরও বলেন, “মনুর আদর্শে ফিরে যাওয়া আসলে আরএসএস-এর বহুদিনের স্বপ্নপূরণ। স্বাধীন ভারতের সংবিধান গৃহীত হওয়ার পরই তারা তার বিরোধিতা করেছিল, কারণ সংবিধান মনুর মূল্যবোধ থেকে অনুপ্রাণিত হয়নি।”
‘শ্রম শক্তি নীতি ২০২৫’-কে সরকার বর্ণনা করছে ভারতের শ্রমশাসন ব্যবস্থাকে “সভ্যতাগত জ্ঞানে অনুপ্রাণিত” করার এক নতুন প্রচেষ্টা হিসেবে। নীতিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, কর্মক্ষেত্রের নৈতিকতা, শ্রমিক–নিয়োগকর্তা সম্পর্ক এবং শিল্পসংক্রান্ত আচরণবিধিকে প্রাচীন ভারতীয় চিন্তার সঙ্গে যুক্ত করা হবে।
কিন্তু সমালোচকদের মতে, এই নীতির মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে বর্ণভিত্তিক শ্রমবিভাগকে পুনরুজ্জীবিত করার বিপজ্জনক প্রবণতা। মনুস্মৃতির মতো বিতর্কিত ধর্মগ্রন্থের উল্লেখ তাঁরা দেখছেন আধুনিক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী হিসেবে। রমেশ বলেন, “মনুর নামে অসমতাকে পবিত্র করার চেষ্টা চলছে। এটি সংবিধানের স্বাধীনতা, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের মূল নীতির প্রতি এক প্রকার উপহাস।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নীতিপত্র প্রকাশের সময়কালও তাৎপর্যপূর্ণ। আগামী ২০২৬ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটের আগে এবং বিহার বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এই নীতি সামনে আনা হয়েছে। অনেকের ধারণা, এর মাধ্যমে সরকার ‘সভ্যতাগত শ্রমনৈতিকতা’-কে অর্থনৈতিক দর্শনের মূল স্তম্ভ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
শ্রমিক সংগঠন এবং সমাজ সংস্কারকরা ইতিমধ্যেই নীতির তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, মনুস্মৃতির মতো পাঠ্য থেকে অনুপ্রাণিত নীতি গ্রহণ করা মানে সংবিধানিক সমতার যাত্রাপথে কয়েক দশকের অগ্রগতিকে অস্বীকার করা।
যদিও নীতির খসড়া ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত জনমতের জন্য খোলা ছিল, তবুও বিতর্ক প্রশাসনিক পরিসরের সীমা ছাড়িয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। বহু বিশেষজ্ঞের মতে, এই নীতি শুধু একটি প্রশাসনিক নথি নয় — এটি ভারতের সাংবিধানিক আত্মা ও রাষ্ট্রের চরিত্র নিয়ে বৃহত্তর এক আদর্শিক লড়াইয়ের প্রতিফলন।
অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, যদি এই নীতি বর্তমান আকারেই কার্যকর হয়, তবে ভারতের শ্রমনীতি ‘সমতা ও মর্যাদা’-র পথ থেকে সরিয়ে এক ‘বর্ণভিত্তিক ন্যায়’-এর দিকে ঠেলে দেবে দেশকে।
সরকারি পক্ষ থেকে যদিও এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি, তবু স্পষ্ট যে, ‘শ্রম শক্তি নীতি ২০২৫’-এর খসড়া ঘিরে শুরু হয়েছে ভারতের রাষ্ট্রচিন্তা, সংবিধান ও সংস্কৃতি নিয়ে নতুন এক তীব্র বিতর্ক — যেখানে প্রশ্ন উঠছে, আধুনিক ভারতের শ্রমনীতি কি আবার ফিরে যাচ্ছে প্রাচীন মনুর ছায়ায়?